–এক ঘন্টা পরে যদি যাই?
-বেশ, সেই কথাই রইল। আপনাকে নিয়ে আসবার জন্যে যথা সময়ে গাড়ি নিয়ে মার্গারেট ভিলায় যাচ্ছি। আপনি দয়া করে তৈরি হয়ে থাকবেন।
তিন কোয়ার্টারের ভেতরেই মিঃ পোয়ারো এলেন মার্গারেট ভিলায়। ক্যাথারিন দেরি না করে তার গাড়িতে গিয়ে বসলেন। পোয়ারো গাড়ি চালিয়ে দিলেন।
গাড়ি চলতে শুরু করলে ক্যাথারিন বলল, তদন্তের কাজ কতটা এগিয়েছে মঁসিয়ে।
–পুলিশের বিশ্বাস, তারা প্রায় ফয়সালা করে এনেছে। এখন হত্যাকারীকে বিচারালয়ে তোলা বাকি।
–তার মানে! পুলিশ কি হত্যাকারীকে বের করেছে না কি?
–পুলিশ তো সেই কথাই বলছে। তাদের বিশ্বাস, কাউন্টই এই নাটকের নায়ক, অর্থাৎ সেই-ই হত্যাকারী।
বার বার পুলিশের কথা বলছেন কেন? আপনি কি ওকে হত্যাকারী মনে করেন না?
–আমি কিছুই মনে করি না; কারণ আমি কাউন্ট সম্বন্ধে এখনো বিশেষ কিছুই জানি না।
–হ্যাঁ, ভাল কথা, মিঃ ক্যাথারিন-এর খবর কি?
–আমিও তো তাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম আপনাকে। আপনার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল?
-হ্যাঁ, হয়েছিল। একবার মার্গারেট ভিলায় আর একবার নেগ্রেসকোতে।
–ব্লু-ট্রেনে তাকে দেখেছিলেন কি?
–দেখেছিলাম।
–ডাইনিং কোচে?
–না। মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ওকে ঢুকতে দেখেছি। –ঠিক বলছেন?
–নিশ্চয়ই।
–আশ্চর্য ব্যাপার! আচ্ছা, কাউন্ট দ্য রোচিকে দেখতে পেয়েছিলেন কি?
–না। নয়েন স্টেশনে একজন যুবককে ট্রেন থেকে নামতে দেখেছিলাম বটে, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল সে প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে নামছে।
–যুবকটির চেহারা কিরকম?
–তার মুখটা আমি দেখতে পাইনি। গায়ে একটা ওভারকোট এবং মাথায় টুপি ছিল। ঐ যুবকটি ছাড়া আরও একজন লোককে দেখেছিলাম। বেশ মোটা, তাকে দেখে আমার ফরাসী বলে মনে হয়েছিল। সে তখন এক কাপ কফি পান করছিল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। ওরা দুজন ছাড়া আর সবাই ছিল রেল কর্মচারি।
–আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে কাউন্ট ট্রেনে ওঠেইনি। সে নিজেও এই কথাই বলেছিল। আমরা পৌঁছে গেছি।
ক্যাথারিন বাইরে দেখল নেগ্রেসকোর সামনে গাড়িটাকে পার্কিং-এর জন্যে নির্দিষ্ট স্থানে নিলেন পোয়ারো।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যাথারিনকে নিয়ে মিঃ আলডিনের স্যুইটে হাজির হলেন পোয়ারো। মিঃ আলডিন ক্যাথারিনকে দেখেই বললেন, তুমি আসাতে আমি খুবই খুশী হয়েছি। প্রথম যেদিন তোমার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় সেদিন আমার পাশে রুথ ছিল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন আলডিন। কিন্তু আজ সে কোথায়?
কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য দুজনের মনকেই ভারাক্রান্ত করে তুলল।
মিঃ আলডিন তাঁর একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। তার মানসিক অবস্থাটা ক্যাথারিন বুঝতে পারলো। রুথের কথা মনে পড়ায় তার অন্তরটাও কেঁদে উঠল।
ক্যাথারিনকে চুপ করে থাকতে দেখে আলডিন বললেন, ওসব কথা ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। আমি তোমার কাছে কয়েকটা কথা জানবার জন্যে দেখা করতে চেয়েছি।
-কি জানতে চান, বলুন।
–ট্রেনে রুথ তোমাকে কিছু বলেছিল কি?
–হ্যাঁ, বলেছিলেন।
–সব কথা বলতে কোনো আপত্তি আছে?
–না। এখন আর আপত্তি নেই।
–মানে?
–কারণ, তিনি আমাকে এমন কয়েকটি কথা বলেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকলে আমি কাউকেই বলতাম না। কিন্তু আজ উনি বেঁচে নেই তাই আমার কোনো আপত্তি নেই।
এই সময় মিঃ আলডিন বললেন, যদি কিছু মনে না করেন মিঃ পোয়ারো, দয়া করে একটু পাশের ঘরে গেলে ভালো হয়। মিস গ্রে-র সঙ্গে আমি গোপন কিছু আলোচনা করতে চাই। তুমিও যাও কিংটন।
পোয়ারো বললেন, এতে মনে করার কি আছে? আসুন কিংটন।
ওরা যাবার পর মিঃ আলডিন বললেন, এবার সব খুলে বল। কোনো কিছু গোপন করার, দরকার নেই।
রুথ-এর সঙ্গে তার যা কথা হয়েছিল সবই খুলে বলল ক্যাথারিন। রুথ-এর সঙ্গে কাউন্টের গোপন প্রেম করার কথা, ওর সঙ্গে মিলতে যাচ্ছিল সে কথা, এমনকি সে রুথকে যে উপদেশ দিয়েছিল এবং তার উপদেশ শুনে রুথ কি বলেছিল সব কথাই বলল ক্যাথারিন।
সব কথা শুনে মিঃ আলডিন বললেন, তুমি রুথকে সত্যিই সদুপদেশ দিয়েছিলে কিন্তু সে প্রথমে তোমার কথায় রাজী হয়েও পরে আবার মত পরিবর্তন করল কেন?
আমার মনে হয় গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনে পৌঁছবার পরই তিনি কোনো বিশেষ কারণে তার মত পরিবর্তন করেছিলেন। কেন করেছেন সেটা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।
কাউন্ট-এর সঙ্গে কোথায় দেখা করবে বলে সে স্থির করেছিল? প্যারীতে, না রিভিয়ারায়।
–সেকথা তিনি কিছুই বলেননি আমাকে।
–কিন্তু একথাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি সময় মত সবই জানা যাবে।
মিঃ আলডিন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন। তারপর পাশের ঘরের দরজাটা খুলে পোয়ারোকে আসতে অনুরোধ করলেন। পোয়ারো এলে মিঃ আলডিন বললেন, আজ আমার এখানে আপনারা লাঞ্চ খেলে আমি খুবই খুশী হব।
ক্যাথারিন বিনীতভাবে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল, আপনার কথাটা রাখতে পারছি না। বলে আমি খুবই দুঃখিত। দিদি আর লেনক্সের সঙ্গে লাঞ্চ খাব বলেই কথা আছে। ওঁরা আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন। আমাকে এখুনি যেতে হবে।
ক্যাথারিন চলে যেতে চায় শুনে কিংটন বলল, তাহলে আপনাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।
-চলুন।
ক্যাথারিন আর কিংটন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ক্যাথারিনকে তুলে দিয়ে এসে দেখল মিঃ আলডিন পোয়ারোর সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। মিঃ আলডিন বলছিলেন, রুথ-এর উদ্দেশ্যটা যদি জানা যেত ব্যাপারটা বোঝা যেত। মিস গ্রে-র কথাতে বোঝা গেল, হয়তো তার প্যারীতেই নামার কথা ছিল কিন্তু পরে মত বদল করেছে। আবার এও হতে পারে মিস গ্রে-কে সে তার সব কথা খুলে বলেনি। কিন্তু মিস ম্যাসন-এর কথায় মনে হচ্ছে শয়তান কাউন্ট রুথ-এর সঙ্গে ট্রেনে দেখা করেছিল। এখানেই জট পাকাচ্ছে। কি বল কিংটন?