খাটের পাশে রাখা একটা ছোট টেবিল ও চেয়ার। তার গোপনীয় সব ঐ টেবিলের টানায় থাকত। তিনি টানাটা খুলে একটা চাবি নিয়ে একটা স্টীলের আলমারীর কাছে এগিয়ে গেলেন। আলমারী খুলে তার ভেতর থেকে একটা ভেলভেটের বাক্স বের করে আলমারিটা বন্ধ করে দিলেন।
ভেলভেটের বাক্সটা একবার খুলে দেখল কাউন্ট। তারপর সেটাকে বন্ধ করে কাগজ দিয়ে মুড়ে সুতো দিয়ে প্যাকেটের মতো করে বেঁধে ফেললেন।
প্যাকেটের ওপরে কি সব যেন লিখলেন। তারপর প্যাকেটটা কোটের পকেটে ঢুকিয়ে নিচে এলেন। নিচে নামতেই হিপোলাইটের সঙ্গে দেখা হলো। কাউন্ট বললেন, আমি নেগ্রেসকোতে যাচ্ছি ফিরতে দেরি হবে। কোনো অচেনা লোক খুঁজতে এলে কথাগুলো সেইভাবে বলবে। কথাগুলো মনে আছে তো?
–আছে, হুজুর।
কাউন্ট তাঁর দু-সীটার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
মন্টিকালোতে গিয়ে তিনি কয়েক পেগ হুইস্কি পান করে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নিলেন। তিনি চললেন মেণ্টনের পথে। মেন্টনে যেতে একটা পাহাড় পার হয়ে যেতে হয়। পাহাড়ের কাছাকাছি আসতেই সে দেখল একখানা ধূসর রঙের গাড়ি তার গাড়িটাকে অনুসরণ করছে। কাউন্ট তখন যথাসম্ভব তার গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন।
এদিকে পেছনের বড় গাড়িটা অসমতল পাহাড়ী রাস্তায় ছোট গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না। কিছুক্ষণ বাদে আর পিছনের গাড়িটা দেখা গেল না।
অবশেষে পাহাড় পার হয়ে সমতল রাস্তায় এসে কাউন্ট তাঁর গাড়ির গতিবেগ আরও বাড়িয়ে দিল। মাইল দুয়েক যাবার পরেই একটা পোস্ট অফিস। সেখানে গাড়ি থামিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পোস্টঅফিসের বারান্দায় উঠে পকেট থেকে প্যাকেটটা বের করে লেটার বাক্সে ফেলে দিয়ে আবার ফিরে এলেন গাড়িতে।
গাড়ি ঘুরিয়ে আবার তিনি ফিরে চললেন মন্টিকালোর দিকে। একটু এগোতেই সেই ধূসর রঙের গাড়িটা তার গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল।
কাফে দ্য প্যারীতে ডিনার খেয়ে রাত প্রায় সাড়ে দশটায় কাউন্ট বাড়ি ফিরলেন। হিপোলাইট সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামনে এলো, তার মুখে দুশ্চিন্তার রেখা।
-কি হয়েছে হিপো, জিজ্ঞেস করলেন কাউন্ট।
-আপনি বাইরে যাবার ঘন্টাখানেক বাদে কে একজন টেলিফোনে আমাকে বলল যে, আপনি আমাকে নেগ্রেসকোতে দেখা করতে বলেছেন।
–অদ্ভুত কাণ্ড তো! তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে না কি?
–হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আপনি যেতে বলেছেন শুনে কি না গিয়ে পারি?
–তারপর?
–সেখানে গিয়ে শুনলাম যে, আপনি সেখানে যাননি। কে টেলিফোন করেছে সে কথাও তারা বলতে পারল না।
-তুমি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তখন মেরী কোথায় ছিল?
–সে তখন বাজার করতে গিয়েছিল হুজুর। আমি ফিরে আসবার পরে সে বাড়িতে আসে।
-এটা বোধহয় কোনো দুষ্টু ছেলের কাজ। যাই হোক, এর জন্যে দুঃশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। তুমি তোমার কাজে যেতে পার।
কাউন্ট সোজা দোতলায় উঠে গিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দেখলেন যে, তাঁর অনুপস্থিতিতে কে বা কারা তার ঘরটা তল্লাসী করেছে।
কাউন্ট নিজের মনেই বললেন-পুলিশ এসেছিল দেখছি। মিরেলি তাহলে ঠিক কথাই বলেছে।
.
১৮.
প্রেম–অভিসার
মার্গারেট ভিলার বাগানে বসে লেনক্স গল্প করছিল। লেনক্স বলছিল, তোমার বোধহয় এখানে ভালো লাগছে না। তাই না মাসী?
-খারাপও লাগছে না। তবে আমি কোনোদিনই হৈ-হল্লা পছন্দ করি না, তাই নিজেকে এখানে খাপ খাওয়াতে পারছি না।
-কিন্তু, এই হলো সোসাইটি। এখানে সবই গিল্টি করা অর্থাৎ বাইরের দিকটা চকচকে। এবং আমাদের এই গিল্টি করা সোসাইটিতে বাস করতে হয়। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব, মাসী?
-কি?
–মঁসিয়ে ক্যাথারিনকে তোমার কেমন লাগে?-
-কেমন লাগে মানে?
–মানে, তুমি কি ওকে পছন্দ করো?
–পছন্দ অপছন্দের কোনো কথাই ওঠে না। কারণ ওর সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।
–যাই বল মাসী, ওঁর চেহারাটা কিন্তু ভারী সুন্দর।
–তা হবে হয়তো।
–তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওঁকে তুমি মোটেই পছন্দ কর না।
-আমার পছন্দ-অপছন্দের জন্যে তোমার দুশ্চিন্তা কেন?
-না, তা নয়। মানে…. আমার মনে হয়েছে যে, মিঃ ক্যাথারিন তোমাকে বিশেষ নজরে দেখেন। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
লেনক্স-এর কথা শেষ হতে না হতেই একজন পরিচারিকা এসে ক্যাথারিনকে বলল, আপনার টেলিফোন এসেছে।
-কে ফোন করেছে জানো?
–হ্যাঁ। মঁসিয়ে পোয়ারো।
ক্যাথারিন কোনো কথা না বলে টেলিফোন ধরতে চলে গেল। রিসিভারটা কানে তুলে ক্যাথারিন সাড়া দিতেই ওধার থেকে মিঃ পোয়ারোর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, সুপ্রভাত মাদমোয়াজেল। মঁসিয়ে ভ্যান আলডিন আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চান। আপনি যদি দয়া করে নেগ্রেসকোতে তার স্যুইটে আসেন অথবা মার্গারেট ভিলাতেও যেতে পারেন উনি।
পোয়ারোকে একটু লজ্জা দেবার উদ্দেশ্যে ক্যাথারিন বলল, আপনি কি এখন মিঃ আলডিন-এর প্রাইভেট সেক্রেটারী।
খোঁচাটা হজম করে পোয়ারো হেসে বললেন, অনেকটা তাই। কারণ ওঁর মেয়ের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার যখন নিয়েছি। শুধু প্রাইভেট সেক্রেটারী কেন ভৃত্যের ভূমিকায় বা অন্য কোনো চেহারাতেও দেখতে পাবেন। যাক আপনি আসবেন, না আমাদেরই যেতে হবে?
-না। আপনাদের আসার দরকার নেই, আমিই যাব। কখন গেলে সুবিধে হয় আপনাদের?
–আমাদের কথা বাদ দিন। আপনি কখন আসবেন বলুন।