নিশ্চয়ই। আমি এই কথাই বলব।
–শুধু তুমি বললেই চলবে না। মেরীও যেন বলে।
–তাই বলবে। আমি তাকে শিখিয়ে দেব।
–দেব নয়, এক্ষুনি বলে দাও তাকে।
হিপোলাইট যাবার জন্যে পা বাড়াতেই কাউন্ট আবার বলল, কি বলতে হবে, মনে আছে তো?
–আছে, হুজুর। চোদ্দ তারিখে সকালে উঠেই দেখি আপনি বাড়িতেই ফিরে এসেছেন।
–কখন ফিরলাম?
–বোধ হয় শেষ রাত্রে।
বোধ হয় বলবে কেন?
–বলব। তার কারণ হলো, আপনি ঠিক কখন ফিরে এসেছেন তা আমরা দেখিনি।
–বাড়িতে ঢুকলাম কেমন করে?
–আপনার কাছে সদর দরজার অতিরিক্ত একটা চাবি থাকে। তার সাহায্যে দরজা খুলে আপনি হয়তো ঢুকেছেন।
-হ্যাঁ, ঠিক হয়েছে। এই কথাগুলি তোমরা বলবে। মিনিট দুয়েক বাদেই হিপোলাইট কফির পেয়ালা আর পিরিচ রেখে ফিরে এলো।
-কি ব্যাপার? আবার ফিরে এলে যে? কাউন্ট বললেন।
–এক ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান, হুজুর।
–আশ্চর্য! বয়স কত ভদ্রমহিলার? দেখতে কেমন?
–পঁচিশ-ছাব্বিশ বলে মনে হয়। দেখতে খুবই সুন্দর।
-বেশ, তাকে এখানেই নিয়ে এস।
হিপোলাইট মিনিট দুয়েকের মধ্যেই একজন অনিন্দ্য সুন্দরী যুবতাঁকে সঙ্গে নিয়ে এলো।
কাউন্ট দাঁড়িয়ে উঠে বিস্মিত স্বরে বললেন, কি আশ্চর্য! মাদমোয়াজেল মিরেলিকে যে আমার এই ক্ষুদ্র কুটিরে দেখতে পাব একথা আমি কোনোদিন ভাবিনি।
-আপনি আমাকে চেনেন দেখছি।
-নৃত্যশিল্পী মিরেলিকে চেনে না এমন হতভাগ্য কেউ আছে নাকি। আসন গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করুন। কাউন্টের অনুরোধে মিরেলি আসন গ্রহণ করল।
–আর বলুন, আমি আপনার জন্যে কি করতে পারি?
–আমার জন্যে নয়, আমি আপনার জন্যেই এসেছি।
–আমার জন্যে এসেছেন। দয়া করে বিষয়টা একটু পরিষ্কার করলে বাধিত হব।
–হ্যাঁ, পরিষ্কার করেই বলছি। কোনো কোনো মহলে আলোচনা চলছে যে, আপনি নাকি মাদাম ক্যাথারিনকে হত্যা করেছেন।
-আমি! হত্যা করেছি মাদাম ক্যাথারিনকে! একি ভয়াবহ যন্ত্রণা?
–হ্যাঁ, এই কথাই লোকে বলাবলি করছে।
–লোকে যা বলুক। আমি তো আমাকে জানি। এরকম ঘৃণ্য কাজ আমার দ্বারা কখনও সম্ভব নয়।
–কথাটাকে উড়িয়ে দিয়ে লাভ নেই মঁসিয়ে। আমি জানি যে, পুলিশও তাই সন্দেহ করছে।
-বলেন কি মাদমোয়াজেল! আপনি এ খবর কোথায় পেলেন?
পেলাম পুলিশের কাছে। আমার কয়েকজন পুলিশ বন্ধু আছে। তাদের কাছেই শুনেছি যে পুলিশের প্রধানও সেই সন্দেহ করছেন।
–আপনি আমাকে ভাবিয়ে তুললেন মাদমোয়াজেল।
–ভাববার কিছু নেই, মঁসিয়ে। আমি আপনাকে রক্ষা করবার জন্যেই এসেছি। কারণ আমি জানি মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী আপনি নয়, অন্য কোনো ব্যক্তি।
–আপনি কি তাকে চেনেন না কি?
–হ্যাঁ, বিলক্ষণ চিনি।
–কে?
–তার নাম ড্রেক ক্যাথারিন—
–অর্থাৎ, মাদাম ক্যাথারিন-এর স্বামী!
–হ্যাঁ।
–কিন্তু…
–না, এর মধ্যে কিন্তু নয়। আমি জানি যে ড্রেক ক্যাথারিন তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
–কিছু মনে করবেন না মাদমোয়াজেল, আপনি একথা কেমন করে জানলেন।
-কেমন করে জানলাম?–উত্তেজিতভাবে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠল মিরেলি, সে নিজের মুখে একথা আমাকে বলেছে। আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সেই দৃশ্যটা। ড্রেক ক্যাথারিন নিঃশব্দে ঢুকল কামরার ভেতর। বেচারা রুথ তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ও পকেট থেকে একগাছা কালো সিল্কের কর্ড বের করল, তারপর সেই কর্ডটা জড়িয়ে–উঃ! কী ভয়ংঙ্কর।
–এবং এসব কথা মিঃ ক্যাথারিন আপনাকে বললেন। আশ্চর্য ব্যাপার তো।
–না, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। হত্যা করবার আগেই সে আমাকে এসব বলেছে।
–আরও আশ্চর্য! হত্যাকাণ্ডের আগেই হত্যা করার পরিকল্পনা আপনাকে জানালেন ভদ্রলোক!
–আপনি কি আমার কথাগুলো পাগলের প্রলাপ বলে মনে করছেন নাকি?
-না, তা করছি না। তবে কি না, লাজিকের দিক থেকে….
–চুলোয় যাক আপনার লজিক। ড্রেক নিজে আমাকে বলেছিল যে, তার স্ত্রী যদি কোনো কারণে মারা যায় তাহলে সে অনেক টাকা পেতে পারে। এবং সেই টাকায় সে দেনা মুক্ত হতে পারে।
–তাতেই কি প্রমাণিত হয় যে, তিনিই হত্যাকারী?
-না, তা হয় না। সে আমাকে আরও বলেছিল যে, ট্রেনে রিভিয়ারা যাবার পথে হয়তো এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যাতে সে মারা যেতে পারে।
–বেশ, মেনে নিলাম কথাটা। কিন্তু তাতেও তো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
–কি প্রশ্ন?
–তিনি মাদামের রুবীটা চুরি করলেন কেন?
–কারণ, এই হত্যাকাণ্ডকে ট্রেন রবারদের কাজ বলে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিল সে।
এতক্ষণে কাউন্ট মিরেলির কথাগুলো হেঁয়ালি বলে মনে করলেন না। তিনি মৃদুস্বরে বললেন, এ ব্যাপারে আমার কি করণীয় থাকতে পারে, মাদমোয়াজেল?
–আপনি পুলিশের কাছে গিয়ে সব কথা জানিয়ে দিন, যে মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী তার স্বামী–আপনি নন।
–পুলিশ যদি আমার কাছে প্রমাণ চায়?
–তাহলে তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমি তাদের কাছে প্রমাণ দেব। আর কিছু না বলে মিরেলি চলে গেল।
কাউন্ট এবার ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। মেয়েটা দেখছি ভীষণ উত্তেজিত। কিন্তু সত্যি ঘটনাটি কি? সন্দেহ তো প্রমাণ নয়। ও তাহলে পুলিশের কাছে কি প্রমাণ দেবে। মিঃ ক্যাথারিন-এর উপর ভীষণ রাগ, নিশ্চয়ই ওকে অপমান করেছে। কিংবা ওকে ছেড়ে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে জুটেছে। সেই কারণেই ওকে পিছে ফেলতে চায়। কিন্তু আমাকে খুব সাবধান হতে হবে। ওই সর্বনেশে চিঠিটা যদি রুথ-এর হ্যাণ্ডব্যাগে না পওয়া যেত তাহলে কেউই আমাকে সন্দেহ করতে পারত না। চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ছুটে গেলেন শোবার ঘরে।