-তাহলে ওটা চুরি যাবার কথা উনি কেমন করে জানলেন? মাদাম ক্যাথারিন-এর সঙ্গে ওঁর দেখা হয়েছিল তিন সপ্তাহ আগে। সে সময় মাদাম নিজেও জানতেন না যে হার্ট অব ফায়ার তার হাতে আসবে। ব্যাপারটা গোলমেলে মনে হচ্ছে না কি?
পোয়ারো উঠে দাঁড়ালেন।
–আপনি কি চলে যাচ্ছেন?
–হ্যাঁ, আমাকে এখুনি যেতে হচ্ছে।
পোয়ারো কোট থেকে বেরিয়ে গেলেন।
৪. আবার মিরেলি
১৬. আবার মিরেলি
কোর্ট থেকে বেরিয়ে ক্যাথারিন সোজা গিয়ে হাজির হলো নেগ্রেসকোতে। এটা হলো রিভিয়ারার সবেচেয়ে দামি রেস্তোরাঁ। নেগ্রেসকোর সুস্বাদু খাদ্য আর উৎকৃষ্ট খাদ্য আর উৎকৃষ্ট ককটেলের জন্যে সব সময়ই লোকের ভিড় থাকে এখানে। লাঞ্চ পর্বটা সেরে নেবার জন্য এসেছিল।
সে একটা টেবিলে বসে এক পাত্র ককটেলের অর্ডার দিল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসে গেল। ক্যাথারিন তা পান করতে করতে সমুদ্রের দিকে এবং পান-ভোজন রত নর-নারীর দিকে চোখ বুলোতে লাগল।
এই সময় মিরেলিকে সেখানে ঢুকতে দেখল সে। মিরেলিও তাকে লক্ষ্য করছিল। হাসিমুখে মিরেলি ক্যাথারিন-এর সামনে এলো। কি আশ্চর্য ড্রেক, তোমাকে যে এখানে পাব ভাবতেই পারিনি।
মিরেলি ক্যাথারিন-এর সামনের চেয়ারটায় বসল। তার দিকে তাকিয়ে ক্যাথারিন বলল, কবে এসেছ?
–দুদিন আগে।–এসে অবধি তোমার খোঁজ করছি।
–আমার খোঁজ কেন?
করব না! যে আমার জন্যে এতটা করেছে তার খোঁজ করব না।
–মানে?
–মানে কি তুমি বোঝো না? সত্যিই তুমি অসাধ্য সাধন করেছ, ড্রেক। তোমার এই সৎসাহসের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে দুর্ঘটনা যখন তখন ঘটতে পারে। কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি নাটকীয়ভাবে ঘটবে আমি তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আচ্ছা, পুলিশ তোমাকে সন্দেহ করেনি তো?
দয়া করে থামবে কি?
–নিশ্চয়ই। এসব কথা এখানে আলোচনা করা ঠিক নয়। এখন আর দেনার দায়ে তোমাকে বিব্রত হতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়েছে। এখন আঃ….. আমাদের দুজনের সুখের দিন এসেছে। তুমি এখন ত্রিশ লাখ পাউণ্ডের মালিক, তাই না?
–এখনও হইনি। তবে শীগগির হব বলে মনে হচ্ছে।
–টাকার অঙ্কটা মোটেই খারাপ নয়, কি বল?
-কে বলেছে খারাপ। সমস্ত দেনা মেটানোর পরেও আমার হাতে বিশ লাখ পাউণ্ড থাকবে।
-ব্যস। ওতেই চলবে। হ্যাঁ, খুব ভালোভাবে চলবে আমাদের। আর তার পরেই তো তুমি লর্ড লুকোনবারী হয়ে যাবে। তখন আর পায় কে আমাদের।
-তুমি একটু চুপ করবে কি? দেখছ না অনেকেই আমাদের লক্ষ্য করছে। –
-ঠিক বলেছ। এবার তুমি লাঞ্চের অর্ডার দাও। দুজনে একসঙ্গেই লাঞ্চ খাব।
–আমি দুঃখিত। তোমার সঙ্গে আজ লাঞ্চ খেতে পারব না।
–কেন বলতো?
–আমি আজ আর একজনের সঙ্গে এনগেজড়। তাছাড়া….
–কি বলছিলে বল না? বলতে গিয়ে থেমে গেলে কেন?
-না, থেমে যাব কেন। বলছিলাম যে, তোমার সঙ্গে আমি আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।
তার মানে? –
-মানে আর কিছু নেই। এরপর থেকে তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
–তোমার কি হয়েছে বলতো? ঠাট্টা রাখ, এবার লাঞ্চের অর্ডার দাও, প্লিজ।
–বললাম তো, আমি আজ আর একজনের….
এমন সময় গ্রে ক্যাথারিন রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই ড্রেক ক্যাথারিন তার দিকে এগিয়ে গেল।
ক্যাথারিন এভাবে চলে যাওয়ায় মিরেলি ভীষণ ক্রুদ্ধ হলো। তাছাড়া নিজেকে অপমানিতা বোধ করে অস্ফুট স্বরে বলল, আচ্ছা দেখা যাবে। মিরেলি অপমান হজম করার মেয়ে নয়। তোমার দুঃসাহসিকতার ফল তোমাকেই পেতে হবে।
ক্যাথারিন-এর কাছে গিয়ে ক্যাথারিন যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে বলল, গুড মর্নিং, মিস গ্রে।
আজ আপনি আমার সঙ্গে লাঞ্চ খেলে ভালো লাগত আমার। ক্যাথারিন-এর প্রস্তাবে ক্যাথারিন একটু বিস্মিত হয়ে পরক্ষণেই একটু ভেবে বলল, আমারও খারাপ লাগত না আপনার সঙ্গে লাঞ্চ খেতে।
-তাহলে আসুন নিরিবিলি দেখে একটা টেবিলে বসি।
–বেশ, চলুন।
দুজনে কোণের দিকে এগিয়ে গেল। ঠিক সেই সময় রেস্তোরাঁয় আর এককোণে একজোড়া জ্বলন্ত দৃষ্টি ওদের দুজনকে লক্ষ্য করছে।
.
১৭.
কাউন্ট–এর বাড়িতে
কাউন্ট সেদিন আর লাঞ্চ খেতে বাইরে যাননি। বাড়িতেই লাঞ্চ খাওয়ার পর চাকর হিপোলাইট কফি এনে দিল।
কফির পেয়ালায় এক চুমুক দিয়েই বললেন, শোন হিপো, এখন থেকে প্রায় রোজই কোনো না কোনো অচেনা লোক আমার খোঁজ নিতে আসবে। তাদের তুমি কোনো মতেই বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।
ইতিমধ্যেই দু-চারজন এসেছিল। কেমন, তাই না?
–না, হুজুর। আজ পর্যন্ত তেমন কোনো লোক আসেনি।
–ঠিক বলছ তো?
–হ্যাঁ, ঠিকই বলছি?
–তুমি তো সব সময় বাড়িতে থাকো না, তাই তারা হয়তো তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে।
–আমার তা মনে হয় না, হুজুর। মেরী তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে সে কথা বলত।
হিপোলাইট-এর কথা শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও তার মনে হলো ইতিমধ্যে না এলেও অদূর ভবিষ্যতে তারা নিশ্চয়ই আসবে। তিনি তখন বললেন, শোন, তোমাকে শিখিয়ে রাখছি, যদি কোনো অচেনা লোক বা পুলিশ অফিসার তোমার কাছে জানতে চায় যে, গত চোদ্দ তারিখে আমি কোথায় ছিলাম, তুমি বলবে যে ওই তারিখে আমি বাড়িতে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তুমি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে।
-বেশ, সেই কথাই বলব।
–শুধু তাই নয়, তুমি বলবে যে, তার আগের দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। শেষ রাত্রে বাড়িতে এসে আমার অতিরিক্ত চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলাম। মনে থাকবে তো?