তার কথায় ম্যাজিস্ট্রেট হতাশ হলেও সেটা প্রকাশ না করে বললেন, আচ্ছা, কার্জন স্ট্রীটের বাড়িতে এঁকে কোনোদিন দেখেছিলেন কি?
-না, তাও ঠিক নয়। মাদামের কামরায় সেদিন যাকে দেখেছিলাম, তার চেহারাটা প্রায় ওঁর মতোই। তবুও আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না, ইনিই সেই ভদ্রলোক কি না।
পোয়ারো এতক্ষণ প্রশ্নোত্তর শুনে যাচ্ছিলেন। তিনি এবার বললেন, আপনার টিকিটখানা কি করেছিলেন মাদমোয়াজেল ম্যাসন?
-টিকিট।
–টিকিট। লণ্ডন থেকে নিস পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের কথা বলছি আমি।
পোয়ারোর প্রশ্নের উত্তরে মিস ম্যাসন বেশ একটু বিব্রত হয়ে পড়লেন। তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, টিকিটখানা কণ্ডাক্টরকে দিয়েছিলাম।
কথাটা শুনে পোয়ারো এবং কমিশনার মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। চোখে-চোখে কি যেন কথা হলো উভয়ের মধ্যে। ম্যাজিস্ট্রেটও লক্ষ্য করেছিলেন এটা। কিন্তু ও নিয়ে আর কিছু না বলে মিস ম্যাসন-এর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, আচ্ছা, আপনি এখন যেতে পারেন মিস ম্যাসন।
মিস ম্যাসন চলে যেতেই পোয়ারো তার নোট বইয়ের পৃষ্ঠায় কি যেন লিখলেন। তারপর পৃষ্ঠাখানা ছিঁড়ে ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে দিলেন।
কাগজখানা পড়ে কমিশনারের হাতে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। কমিশনার সেটা পড়ে পোয়ারোর দিকে একবার তাকিয়ে কোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এদিকে কাউন্ট একটু বিরক্ত স্বরে হাকিমের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাকে আর কতক্ষণ থাকতে হবে স্যার?
-না, আর আপনাকে আটকে রাখব না। আপনি এবার যেতে পারেন।
ম্যাজিস্ট্রেটের কথা শুনে কাউন্ট উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানিয়ে কোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কাউন্ট যাবার মিনিট দুই পরেই কমিশনার ফিরে এসে পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার উপদেশমত ওর পেছনে দুজন গুপ্তচর নিযুক্ত করে এলাম।
পোয়ারো বললেন, শুধু গুপ্তচরদের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলেই চলবে না, মঁসিয়ে কমিশনার আমাদের নিজেদেরও কাজে নামতে হবে। আমাদের যাচাই করতে হবে ওঁর কথাগুলো কত পারসেন্ট সত্যি। তাছাড়া, উনি যাতে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারেন যে আমরা ওর গতিবিধি লক্ষ্য করছি।
পোয়ারোর কথা শেষ না হতেই মিঃ ক্যাথারিন এসে হাজির হলো আদালত কক্ষে। ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে আদালতে তলব করে আনা হলো কেন, স্যার?
মিঃ ক্যাথারিন-এর কথাগুলি অনেকটা কৈফিয়ত চাওয়ার মতো শোনায়।
–আপনি হয়তো ভুলে গেছেন এটা আদালত কক্ষ এবং যার সঙ্গে আপনি কথা বলছেন তিনি ম্যাজিস্ট্রেট।
ম্যাজিস্ট্রেটের ধমক খেয়ে ক্যাথারিন বুঝতে পারল ওভাবে কথা বলা তার উচিত হয়নি।
-আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। নানা করণে আমার মনটা এতই চঞ্চল হয়েছে যে স্থান কাল পাত্র ভুলেই গিয়েছিলাম।
–ঠিক আছে, আপনি বসুন। আমরা আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। আশাকরি উত্তরগুলো ঠিকমত পাবো।
–কি জানতে চান, বলুন।
-আপনি বলেছিলেন যে, ট্রেনে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়নি। কথাটা কি ঠিক?
–নিশ্চয়ই। কিন্তু এই কথাটা জিজ্ঞেস করার জন্যেই যদি আমাকে ডেকে আনা হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব যে ফরাসী পুলিশের কাণ্ডজ্ঞান কিছুটা কম।
–পুলিশের কাণ্ডজ্ঞান ঠিকই আছে মিঃ ক্যাথারিন। এবার যা যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সেগুলোর উত্তর দিন।–বললেন ম্যাজিস্ট্রেট।
–বেশ প্রশ্ন করুন।
প্রশ্ন করতে শুরু করলেন পোয়ারো।
–আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই কোনো উইল করে যাননি?
–সেই রকমই মনে হয়।
–তিনি যদি কোনো উইল না করে থাকেন তাহলে তার সম্পত্তির আইনসম্মত উত্তরাধিকারী কে হচ্ছেন, মঁসিয়ে?
–কি বলতে চাইছেন আপনি?
-আমি বলতে চাইছি যে মাদাম ক্যাথারিন-এর মৃত্যুর পর তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তার স্বামী, অর্থাৎ আপনি কেমন, ঠিক তো?
–হয়তো তাই। কিন্তু আপনি কে? তাছাড়া আপনাকে প্রশ্ন করার অধিকার কে দিল?
-আমার নাম এরকুল পোয়ারো। নামটা হয়তো আপনার অপরিচিত নয়। আর প্রশ্ন করার অধিকার-ম্যাজিস্ট্রেট নিজে আমাকে এই অধিকার দিয়েছেন।
-আপনি কি তাহলে মনে করেন যে, আমিই আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি? যদি তাকে হত্যা করতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমি তার রুবীটা চুরি করতাম না?
–ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে। আমিও তাই মনে করি।
–আমার মনে হয়, অভিশপ্ত হার্ট অ ফায়ারই তার মৃত্যুর কারণ। ইতিহাস প্রসিদ্ধ রত্নের জন্য আগেও কয়েকটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে, কিন্তু নারীহত্যা বোধহয় এই প্রথম।
-আমারও তাই মনে হয় মঁসিয়ে। এবার আরেকটা কথা জানতে চাইছি আপনার কাছে।
–বলুন।
–আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সর্বশেষ আপনার দেখা হয়েছিল কতদিন আগে?
একটু চিন্তা করে ক্যাথারিন বলল, ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল তিন সপ্তাহ আগে।
–তারিখটা মনে আছে কি?
–না। তবে তারিখটা তিন সপ্তাহ আগে তো বটেই, এমন কি কিছু বেশি হতেও পারে। ক্যাথারিন তখন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনুমতি চাইল, এবার তাহলে আমি যেতে পারি কি?
-হ্যাঁ, আপনি এবার যেতে পারেন।
মিঃ ক্যাথারিন আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতেই পোয়ারো তাকালেন কমিশনারের দিকে।
–আমাকে কিছু বলতে চাইছেন? জিজ্ঞেস করলেন কমিশনার।
–হ্যাঁ, হার্ট অব ফায়ার চুরি যাবার কথা আপনি কবে বলেছেন মিঃ ক্যাথারিনকে?
–আমি এ ব্যাপারে কোনো কথাই ওকে বলিনি।