কালো ওভারকোট পরা একটি লোক কি যেন লিখছে নোট বইতে। তাকে ঘিরেই ভিড় জমেছে।
–কি হয়েছে এখানে? সাদা চুলওলা লোকটি একজনকে প্রশ্ন করল।
–খুনের চেষ্টা। খুব বেঁচে গেছেন ভদ্রলোক।
— কি রকম?
–দুজন গুণ্ডা একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোককে আক্রমণ করতে চেষ্টা করেছিল।
–তারপর?
–তারপর আর কি? পালাতে পথ পায় না বাছাধনরা; ভদ্রলোকের বাহাদুরি আছে বলতে হবে। গুণ্ডা দুটো গুলি করার আগেই ভদ্রলোকটি গুলি করে! আর ওরা লেজ গুটিয়ে চম্পট।
লোকটা কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে সীন নদীর ব্রীজের দিকে এবং পায়ে পায়ে কখন পৌঁছেও যায়।
ব্রীজ পার হয়ে আবার হাঁটতে লাগল সামনের দিকে এবার দ্রুত গতিতে।
রাত বারোটা বেজে গেছে। লোকটা একটা বন্ধ জুয়েলারী দোকানের সামনে দাঁড়ায়। তারপর দোকানের পাশে সরু গলিতে ঢুকে দোকানের ওপর তলায় ওঠবার সিঁড়ির দরজায় পরপর তিনবার কলিং বেল টিপল। একটু পরেই দারোয়ান দরজা খুলে বিরক্তিতে বলল; কি চান?
–আমি মঁসিয়ে পপোপুলাস-এর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
–এত রাত্রে তার সঙ্গে দেখা হবে না। আপনি বরং কাল দিনের বেলায় আসুন।
–না, দিনের বেলা আসা সম্ভব নয়। তুমি মনিবকে বলো মার্কুইস এসেছে। দারোয়ান সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে দরজাটা বন্ধ করে দিল। একটু পরেই দরজা খুলে গেল।
–আপনি ভেতরে আসুন মঁসিয়ে। মালিক আপনার সঙ্গে দেখা করবেন।
মার্কুইস ঘরে ঢুকতেই মালিক অভ্যর্থনা জানালেন। এই যে মঁসিয়ে নে মাকুইস! দয়া করে আসন গ্রহণ করুন।
মার্কুইস ধন্যবাদ বলতেই পপোপুলাস তাকালেন; কি খবর বন্ধু! মাল এনেছেন?
– না, আমার প্রথম প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে তবে হাল ছেড়ে দিইনি। এবার অন্য পথে যেমন করে থোক ও জিনিস আমার চাই-ই।
-আপনার হাতযশের নাম আছে সুতরাং আপনি সফল হবেন।
– সফল হতেই হবে। ও জিনিস চাই-ই। আপনার সঙ্গে যে ব্যবস্থা হয়েছে তা যেন ঠিক থাকে।
–আমার কথার নড়চড় হয় না। মাকুইস, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
–গুড নাইট মঁসিয়ে।
–গুড নাইট মার্কুইস, আমি আপনার সাফল্য কামনা করি।
মার্কুইস বেরিয়ে যেতেই ভেতরের দরজায় খট করে একটা শব্দ হলো। উঠে গিয়ে পপোপুলাস দরজা খুলতেই একটি মেয়ে হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটি উঠে লজ্জিত দৃষ্টিতে পপোপুলাসের দিকে তাকাল।
–কি ব্যাপার জিয়া। এখানে কি করছিলে?
–আমি চাবির গর্ত দিয়ে লোকটাকে দেখছিলাম।
–দেখতে পেয়েছ তাকে?
– না, ভালো করে দেখতে পাইনি। তবে একটা জিনিস দেখেছি মাথার চুলগুলো ধবধবে সাদা। পপোপুলাস হেসে বললেন : ওটা পরচুল।
.
০৩.
হার্ট অফ ফায়ার
স্যাভয় হোটেল।
আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধন কুবের মিঃ রিউফাস ভ্যান আলডিন একটা স্যুট নিয়ে এই হোটেলে বাস করছেন। রীতিমত অফিস চালাচ্ছেন তিনি। কেরানি, টাইপিস্ট, বয়, বেয়ারা তো আছেনই, একজন সেক্রেটারীও নিযুক্ত করেছেন।
দুদিন মিঃ আলডিন ছিলেন না এবং কেউ জানত না যে তিনি কোথায় আছেন। সেক্রেটারী মিঃ কিংটন তো রীতিমত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছিলেন।
বেলা প্রায় নটায় মিঃ আলডিন এলেন।
কিংটন হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাল; গুড মর্নিং স্যার। আপনার জন্যে আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম।
-হ্যাঁ এত দেরি হবে ভাবিনি, জরুরী কিছু খবর আছে কি?
–আছে স্যার, মিসেস ক্যাথারিন দুবার ফোন করেছিলেন। তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করবার জন্য খুব ব্যস্ত হয়েছেন।
খবরটা শুনে আলডিন ভাবলো, নিশ্চয়ই রুথ কোনোরকম ঝামেলায় পড়েছে। হয়তো ড্রেক ক্যাথারিন আবার তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে।
অস্থির ভাবে পায়চারি করতে শুরু করলেন আলডিন। ঘরে ঢুকে ওভারকোটটা আবার পরে ফেললেন তিনি।
–আপনি কি আবার বাইরে যাচ্ছেন স্যার?
–হ্যাঁ, আমি রুথ-এর কাছে যাচ্ছি।
–কলিটন থেকে কেউ ফোন করলে কি বলবো?
–বলবে, জাহান্নামে যাও।
–বেশ, তাই বলব স্যার। কিন্তু সে হয়তো সেই উৎকৃষ্ট জায়গায় যেতে রাজী হবে না।
মিঃ আলডিন এবার হেসে ফেললেন, তোমার এই গুণের জন্যেই তোমাকে আমি পছন্দ করি। ওদের লোক এলে বলবে আমি পরে দেখা করবো। এখন আমি খুবই ব্যস্ত।
ঘর থেকে বেরিয়ে দু-পা এগিয়েই হঠাৎ থামলেন।
কিংটন এগিয়ে গেল তার কাছে, আমাকে কিছু বলবেন? স্যার
হ্যাঁ, তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।
পকেটে হাত দিয়ে একটা ভেলভেটের বাক্স বের করে ঢাকনিটা খুলে –এই দেখো।
কিংটন- এর চোখ দুটি উজ্জ্বল হল।
–এত সুন্দর এবং এত বড় রুবী আগে দেখিনি স্যার? খুব দামী নিশ্চয়ই?
–দামী বলে দামী। এ জিনিস অমূল্য। মাঝখানে যে বড় রুবীটা–ওটি রাশিয়ান জারিনার কণ্ঠে শোভা পেত। ওর নাম হার্ট অফ ফায়ার। ইতিহাসে প্রসিদ্ধ মণি এটা।
–এই মহামূল্য রত্ন নিয়ে আপনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্যার! দুষ্ট লোকে জানতে পারলে হয়তো….
–ছিনতাই করবে–তাই তো? সে চেষ্টা করেছিল বৈকি।
–বলেন কি স্যার।
-হ্যাঁ, দুটো গুণ্ডা লোক আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমার রিভলবারটা গর্জে উঠলে ওরা পালায়।
–জিনিসটা বোধ হয় মিসেস ক্যাথারিনকে উপহার দিতে চাইছেন, তাই নয় কি?
–ঠিকই ধরেছ। রুথের জন্যেই আমি এটা কিনেছি!
–এতক্ষণে বুঝলাম মিসেস ক্যাথারিন-এর উৎকণ্ঠার কারণ।
-তোমার এবারের অনুমান ঠিক হলো না। রুথ কিছুই জানে না! এটা উপহার দিয়ে আমি ওর মুখে হাসি ফোঁটাতে চাই। ওর মুখের হাসির দাম আমার কাছে হার্ট অফ ফায়ার-এর চেয়ে অনেক বেশি।