–হ্যাঁ করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল তিনি বেশ কিছুটা চিন্তিত।
–আপনাকে যে প্যারীতে নেমে যেতে হবে সে কথা উনি কখন আপনাকে বলেন?
–গেয়ার দ্য নায়ন স্টেশনে, ওখানে ট্রেনটা থামতেই মিসেস ক্যাথারিন প্ল্যাটফর্মে নামার জন্যে করিডরে আসেন। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে নামা আর হয়নি তার। আমি দেখতে পাই, একজন ভদ্রলোককে সঙ্গে করে আবার তিনি ফিরে আসেন।
–ভদ্রলোকটিকে আপনি চেনেন কি?
-না স্যার। আমি তাকে আমার কামরা থেকে অল্পক্ষণের জন্য দেখতে পাই। তাছাড়া মুখটাও ভালো করে দেখতে পাইনি।
-তারপর কি হলো?
–তারপর মিসেস ক্যাথারিন তার কামরার ভেতরে যে দরজাটা ছিল তা বন্ধ করে দেন। কিছু পরে দরজাটা একটু ফাঁক করে আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে তিনি বলেন যে তার কাছে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমি যেন রীজ হোটেলে অপেক্ষা করি।
-তারপর?
তাঁর নির্দেশমত আমি প্যারী স্টেশনে নেমে যাই এবং রীজ হোটেলে একটা রুম নিয়ে তাঁর নির্দেশের অপেক্ষা করি।
–আপনি যখন নেমে যান তখন সেই লোকটিকে দেখতে পেয়েছিলেন কি?
-হ্যাঁ, পেয়েছিলাম। তিনি তখন মিসেস ক্যাথারিন-এর কামরার ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
-এবার তার মুখটা দেখতে পেয়েছিলেন নিশ্চয়ই?
-না স্যার। ভদ্রলোক আমার দিকে পেছন ফিরে ছিলেন তাই আমি তার মুখটা দেখতে পাইনি।
-তাঁকে কি ওই ট্রেনের যাত্রী বলে মনে হয়েছিল আপনার?
–না।
–কেন বলুন তো?
-তার গায়ে পুরু ওভারকোট আর মাথায় ফেল্ট-এর হ্যাট ছিল। এয়ার কণ্ডিশন করা ট্রেনে কোনো যাত্রী এরকম পোশাক পরে থাকে না। আমার মনে হয় মিসেস ক্যাথারিন-এর সঙ্গে দেখা করার জন্যেই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল। ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হতেই তাকে নিজের কামরায় নিয়ে আসেন। তবে এটা আমার অনুমান মাত্র।
-মাদাম ক্যাথারিন কি কণ্ডাক্টরকে তার ঘুম ভাঙাতে নিষেধ করেছিলেন?
–হ্যাঁ, স্যার।
–এটা কি অস্বাভাবিক মনে হয়নি আপনার?
–না, কারণ অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানো তার অভ্যাস।
–তার জিনিসপত্রের ভেতরে একটা ভেলভেটের বাক্স ছিল?
–হ্যাঁ, ছিল।
–তার ভেতরে কি ছিল বলতে পারেন কি?
–সঠিক বলতে পারি না। তবে আমার ধারণা, ওর ভেতরে হীরে বা ওই জাতীয় কোনো দামী রত্ন ছিল।
–নেমে যাবার সময় সেই বাক্সটা কি আপনি নিয়ে গিয়েছিলেন?
–সে কি! আমি সেটা নিয়ে যাব কেন?
তার সঙ্গে কি আরও হীরে, জহরত ছিল?
–ছিল বলেই মনে হয়। কারণ তিনি হীরে জহরত খুবই পছন্দ করতেন।
–হার্ট অফ ফায়ার নামে কোনো রুবী তার কাছে ছিল কি?
–থাকতে পারে, কারণ ওই নামটা যেন একবার তার মুখে শুনেছিলাম বলে মনে হচ্ছে।
রুবীটা সম্বন্ধে কি বলেছিলেন তিনি?
–বলেছিলেন যে তার কাছে এমন একটা রুবী আছে যার দাম কয়েক লক্ষ পাউণ্ড। রুবীটার নাম হার্ট অফ ফায়ার বলেই মনে হয় কথাটা বলেছিলেন।
মিস ম্যাসন-এর থেকে হার্ট অফ ফায়ার-এর কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে আলডিন জিজ্ঞেস করলেন, ওটা কি সে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল?
হা স্যার। সেই রকম কথাই যেন শুনেছিলাম তার কাছে।
–হ্যায় ভগবান! তাহলে ঐ রুবীটাই ওর মৃত্যুর কারণ। আমি তাকে পইপই করে বলেছিলাম ওটা ব্যাঙ্কে রেখে আসতে। আমার কথা সে গ্রাহ্যই করেনি। এবং এই জন্যেই প্রাণ দিতে হয়েছে। এই সময় ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আপনারা আর কিছু জিজ্ঞেস করতে চান কি এঁকে?
কমিশনার বললেন, না স্যার, আমার কিছু জিজ্ঞাসা নেই। মিঃ পোয়ারো কিছু জিজ্ঞেস করবেন কি?
-না! আমার কিছু জিজ্ঞাস্য নেই।
ম্যাজিস্ট্রেট তখন মিস ম্যাসন-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনাকে আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে মাদমোয়াজেল, আপনার কথাগুলো সব টাইপ করতে দেওয়া হয়েছে। আপনি পাশের ঘরে গিয়ে বসুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই টাইপ কাগজ আপনার কাছে পাঠানো হবে। আপনি সেটা পড়ে সই করে দিলেই আপনার ছুটি।
মিস ম্যাসন সেখান থেকে চলে যাবার পর ম্যাজিস্ট্রেট তার ড্রয়ারের ভেতর থেকে একখানা ভাঁজ করা কাগজ বের করে বললেন, এই চিঠিখানা মাদাম ক্যাথারিন-এর হ্যাণ্ডব্যাগের ভেতরে পাওয়া গেছে। আমার মনে হয় এই চিঠিখানা গুরুত্বপূর্ণ।
-আমি একবার দেখতে পারি কি চিঠিখানা?–বললেন মিঃ আলডিন।
–নিশ্চয়ই পারেন। দেখুন।
মিঃ আলডিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে চিঠিখানা নিয়ে পড়তে লাগলেন। তাতে লেখা ছিল :
প্রিয়তমে,
আমি এখন তোমার কথামতই চলব। তুমি ঠিকই বলেছ রিভিয়ারায় থাকাটা ঠিক হবে না। তাই আমি ওর দ্বীপে সব ব্যবস্থা করেছি। জায়গাটা সব দিক থেকেই নিরাপদ। তোমার কোনোই চিন্তা নেই। আমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হবে না।
আর একটা কথা, হার্ট অফ ফায়ার সম্বন্ধে আমি একটা প্রবন্ধ লিখছি। আসবার সময় ওটা সঙ্গে নিয়ে এসো। আমি একবার ওর চেহারাটা দেখতে চাই।
আজ এই পর্যন্তই। দেখা হলে সব হবে। তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। ইতি
তোমার
আরমাগু
চিঠিখানা পড়ে মিঃ আলডিন-এর চোখমুখ রাগে একেবারে লাল হয়ে গেল। কোনো কথা না বলে তিনি চিঠিখানা ম্যাজিস্ট্রেটকে ফিরিয়ে দিলেন।
চিঠিখানা ড্রয়ারে রাখতে যাবেন এই সময় পোয়ারো বললেন, ওটা আমার দেখলে কি আপত্তি আছে?
-না, আপত্তি আর কি। এই নিন।
চিঠিখানা পড়ে পোয়ারো বললেন, এ থেকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আমরা পাচ্ছি। একটি হলো মাদাম ক্যাথারিন এই রুবীটা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং অপরটি হলো রুবীটা দেখবার জন্যে পত্ৰলেখকের আগ্রহ। আশা করি, মিঃ আলডিন ওই লোকটাকে চেনেন?