-তোমার সঙ্গে কোথায় তার দেখা হয়েছিল?
গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।
খবরটা শুনে বিরক্ত হলেন আলডিন। তার মনে হলো মিস ম্যাসনকে প্যারীতে নামিয়ে দিয়ে রুথ একা গেছে সেই হতভাগা কাউন্টের সঙ্গে মিশতে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, মিঃ ম্যাসন আর কিছু বলেছিল কি?
-হ্যাঁ বলেছিল। সে বললে, মিসেস ক্যাথারিন-এর সঙ্গে হঠাৎ তার এক বন্ধুর দেখা হয়ে যায় ট্রেনে। তারপরই তিনি তাকে প্যারী স্টেশনে নেমে যেতে বলেন। মিঃ আলডিনকে গম্ভীর ভাবে চুপ করে থাকতে দেখে কিংটন বলল, এবার আমি কি যেতে পারি স্যার?
–হ্যাঁ, তুমি এখন যাও। আজ রাতটা বিশ্রাম নাও গিয়ে।
কিংটন পা বাড়াতেই হোটেলের একটি বয় একখানা টেলিগ্রাম মিঃ আলডিন-এর হাতে দিয়ে বলল, আপনার টেলিগ্রাম স্যার।
–ঠিক আছে, তুমি এবার যেতে পার।
টেলিগ্রামটা পড়ে আলডিনের মুখের ভাব বদলে গেল। মুখখানা ছাই-এর মত ফ্যাকাশে হয়ে গেল। অক্লান্তভাবে চেয়ারের ওপর ধপ করে বসে পড়লেন তিনি।
মিঃ আলডিন-এর এই ভাবান্তর দেখে কিংটন বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন, কি হয়েছে স্যার?
কোনো কথা না বলে আলডিন টেলিগ্রামটা কিংটনের হাতে দিলেন। টেলিগ্রামটা পড়ে কিংটন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। কি সর্বনাশ!
হা কিংটন, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি এখুনি নিস-এ রওনা হব। চাকরকে বলো পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ব্যাগ স্যুটকেশ গুছিয়ে দিতে আর তুমিও তৈরি হয়ে নাও।–আমার সঙ্গে যেতে হবে।
এবার কেরানী এসে হাজির হলো সেখানে। মিঃ আলডিন রুক্ষ স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন–কি ভাই?
–মিঃ গোবি আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন, স্যার।
–চুলোয় যাক। আমি এখন কারুর সঙ্গে দেখা করবো না। মিঃ আলডিনের কথা শুনে কেরানী ঘাবড়ে গিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়াল।
-শোনো।
থমকে দাঁড়াল কেরানী। কি বলছেন, স্যার?
–মিঃ গোবিকে এখানে পাঠিয়ে দাও। এক মিনিটের মধ্যেই মিঃ গোবি এসে পড়ল।
–আপনার বক্তব্য তাড়াতাড়ি শেষ করুন মিঃ গোবি। আমি এক্ষুনি একটা বিশেষ কাজে বের হচ্ছি।
আপনি আমার কাছে মিঃ ক্যাথারিন-এর গতিবিধির খবর জানতে চেয়েছিলেন। তিনি গত চোদ্দ তারিখে রিভিয়ারায় গেছেন। আবার বলল মিঃ গোবি, তাছাড়া মিরেলি নামে যে নাচিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দহরম মহরম সেও রিভিয়ারায় গেছে।
–কোনো ট্রেনে গেছে?
–ব্লু ট্রেনে।
-ধন্যবাদ মিঃ গোবি। দুটো খবরই আমার কাছে মূল্যবান। আচ্ছা আপনি আসুন, গুড নাইট।
.
১৩.
ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে
তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট ক্যারেজ-এর আদালত। আজ এখানে বিচার হচ্ছে না। সুতরাং ভিড় নেই।
আদালত কক্ষে আজ মাদাম রুথ ক্যাথারিন-এর হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রাথমিক এবং গোপন শুনানির দিন স্থির হয়েছে। কয়েকজন সাক্ষীকে আনা হয়েছে, তারা বাইরের ঘরে অপেক্ষা করছে।
আদালত কক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট এবং তার আরদালী ও দুজন দেহরক্ষী ছাড়া আর যাঁরা উপস্থিত আছেন তারা হলেন নিস শহরের কমিশনার অব পুলিশ মঁসিয়ে কক্স। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রাইভেট ডিটেকটিভ মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো এবং নিহত মাদাম ক্যাথারিন-এর পিতা মিঃ কিউফাশ ভ্যান আলডিন।
মঁসিয়ে পোয়ারোই প্রথমে কথা বললেন, মঁসিয়ে আলডিন দ্রুত অ্যাকশন আশা করেন, তাই না মঁসিয়ে কক্স?
পোয়ারোর কথা শুনে এবং বিশেষ করে তার সিভিল ড্রেস দেখে মিঃ আলডিন তার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। যেন বলতে চাইলেন–ইনি আবার কে?
তার মনে কথাটা আঁচ করে মঁসিয়ে কক্স বললেন, একে বোধহয় আপনি চেনেন না। আলডিন, এর নাম এরকুল পোয়ারো। পোয়ারোর নাম এবং খ্যাতির কথা আগেই শুনেছেন তাই পরিচয় পেয়ে খুশী হলেন।
পরিচয় পর্ব শেষ হতেই মিঃ আলডিন বললেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি মিঃ পোয়ারো, আমার ইচ্ছে আপনি আমার পক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করুন পুলিশের কাজ পুলিশ তো করবেই। তাদের বাধা দেবার কিছু নেই, আমি শুধু জানতে চাই হত্যাকারী কে? আশা করি আমার অনুরোধটা আপনি রাখবেন।
–আপনার প্রস্তাবে আমি সম্মত, মিঃ আলডিন।
-ধন্যবাদ, আপনি যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে যে কোনো অবস্থায় আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তাতে কোনোই অসুবিধা হবে না।
–ঠিক আছে মঁসিয়ে। আমি আজ থেকে কাজে লেগে যাচ্ছি।
এবার ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, এবার তাহলে কাজ আরম্ভ করতে পারি। কি বলেন মঁসিয়ে কক্স?
–নিশ্চয়ই স্যার। আর দেরি করা ঠিক নয়।
ম্যাজিস্ট্রেট কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিয়ে এসো এখানে। দুমিনিটের মধ্যেই স্ত্রীলোকটিকে আনা হলো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন।
-আপনার নাম?
–আমার নাম অ্যাডা বিয়েত্রিস্। ডাক নাম অ্যাড়া ম্যাসন।
–মাদাম ক্যাথারিনকে চেনেন কি?
–বিশেষভাবে। আমি তার মেইড।
–তিনি নিহত হয়েছেন সে খবর জানেন কি?
–জানি।
—আপনরা কি একই সঙ্গে রওনা হয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।
–আপনি যখন লণ্ডন থেকে রওনা হন তখন কি আপনি জানতেন যে আপানকে প্যারীতে নেমে যেতে হবে?
-না, স্যার।
–আপনি কি এর আগেও মাদাম ক্যাথারিন-এর সঙ্গে বিদেশে গেছেন?
–না, স্যার, সে সুযোগ হয়নি, কারণ মাত্র দুমাস হলো আমি তার মেইড নিযুক্ত হই।
–ট্রেনে ওঠবার সময় বা ওঠবার পরে মাদাম ক্যাথারিন-এর কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করেছিলেন কি?