আরও কিছুক্ষণ গল্প করে লেনক্স বিদায় নিল। যাবার আগে ক্যাথারিনকে বলে গেল, সে যেন তার সবচেয়ে দামী আর সুন্দর পোশাকটা পরে ডিনার পার্টিতে যায়।
রাত প্রায় সাড়ে সাতটায় ক্যাথারিন ড্রয়িংরুমে এলো। ড্রয়িংরুমটা ইতিমধ্যেই বিশিষ্ট আর বৈশিষ্টদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ পরীর মত সুন্দর বেশে ক্যাথারিনকে ঢুকতে দেখে সবাই খুশী হলো।
লেডী ট্যাম্পলিন খুশী হলো তার মামাতো বোনকে দেখে। সে মনে মনে স্বীকার করল যে সত্যই মেয়েটার কাণ্ডজ্ঞান আছে। উঠে দাঁড়িয়ে গেস্টদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কাজিন, মিস ক্যাথারিন গ্রে। মস্ত বড় সম্পত্তির মালিক। অনেক কাজ ওর কিন্তু আমার অনুরোধে কাজকর্ম ফেলে রেখেই চলে এসেছে।
গেস্টরা খুশী হলো। একে একে এসে ক্যাথারিন-এর সঙ্গে করমর্দন করতে লাগলো। লেডী টাম্পলিন প্রত্যেকের পরিচয় জানিয়ে দিল সঙ্গে সঙ্গে।
এদিকে খানসামা এসে জানিয়ে গেছে যে, ডিনারের আয়োজন প্রস্তুত হয়ে গেছে। কিন্তু ড্রেক কে না দেখে লেডী টাম্পলিন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।
একটু পরেই ড্রেক এসে হাজির। ঘরে ঢুকেই নাটকীয় কায়দায় বো করল অতিথিদের উদ্দেশ্যে। দেরির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করল। তারপর সোজা এগিয়ে গেল লেডী টাম্পলিনের সামনে।
লেডী টাম্পলিন করমর্দন করে ড্রেককে পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে বলল, বসো ড্রেক। আমরা এতক্ষণ তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তোমার এত দেরি করা উচিত হয়নি।
ড্রেক আরেকবার ক্ষমা প্রার্থনা করল তার ত্রুটির জন্যে। তারপর শুরু হলো কুশল প্রশ্ন। লেডী টাম্পলিন আলাপে জমে উঠল। ক্যাথারিন একটু দূরে বসে ড্রেককে লক্ষ্য করছিল। তাহলে ইনিই ড্রেক। এই নিয়ে চারবার এর সঙ্গে দেখ হল। স্যাভয় হোটেলের করিডেরে, টমাস কুক-এর অফিসে, ব্লু ট্রেনে। এবং চতুর্থবার এখানে।
তার মনে হল ড্রেক তাকে চিনতে পেরেছে। সে মাঝে মঝেই তাকাচ্ছিল তার দিকে। ড্রেক ক্যাথারিনকে লক্ষ্য করছে দেখে টাম্পলিন বলল, আমার মামাতো বোন ক্যাথারিন। আমার এখানে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। মস্ত বড় সম্পত্তির মালিক হয়েছে ও।
–বিবাহিত নন নিশ্চয়ই? মৃদু স্বরে ড্রেক বলল।
-না এখনও বিয়ে হয়নি ওর। ভাবছি, এবার পাত্রস্থ করব। এই রকম দু-চারটে কথা বলার পর খানসামা বলল, ডিনার তৈরি আপনারা সবাই আসুন।
ডিনারের জন্যে সবাই রওনা হল ডাইনিং হলের দিকে। ডিনার টেবিলে বসেই ক্যাথারিন দেখল তার পাশের আসনে ড্রেক বসেছে। সে তখন ড্রেক-এর দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে যে আপনার সঙ্গে দেখা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
–আমিও তাই, এইবার নিয়ে তিনবার দেখা হলো আপনার সঙ্গে। স্যাভয় হোটেলে, কুক কোম্পানির অফিসে এবং তৃতীয়বার এখানে।
–আপনি হয়তো ভুল করলেন মঁসিয়ে। এবার নিয়ে চারবার ব্লু ট্রেনেও দেখা হয়েছিল আপনার সঙ্গে।
-কি বললেন ব্লু ট্রেনে? হ্যাঁ তা হয়তো….
হঠাৎ যেন মুখের চেহারাটা বদলে গেল ড্রেকের। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলল, হ্যাঁ, ট্রেনে একটা বিশ্রী কাণ্ড হয়েছে শুনলাম। কে একজন মারা গেছেন নাকি ট্রেনে।
-হ্যাঁ। একজন মহিলা।
–বড়ই দুঃখের ব্যাপার। ট্রেনে মৃত্যুটা খুবই মর্মান্তিক তাই না?
টেবিলের অপরদিক থেকে একজন আমেরিকান মহিলা বলল, মিঃ ক্যাথারিন কি আমাকে চিনতে পারছেন না?
–সেকি! আপনাকে চিনতে পারবো না মানে। কেমন আছেন বলুন?
–তা একরকম ভালই আছি। আপনি কবে এলেন?
–আজই সকালে।
ব্লু ট্রেনে নিশ্চয়ই?
–হ্যাঁ।
এদিকে ক্যাথারিন ভাবছে এর সঙ্গে কি সেই নিহত ভদ্রমহিলার কোনো সম্পর্ক আছে। তার পদবীটাও তো ক্যাথারিন। তবে কি সে তার স্ত্রী। কিন্তু তাই যদি হয় তবে ইনি এমন হেসে কথা বলছেন কেমন করে।
ক্যাথারিন যখন এইসব ভাবছে সেই সময় একজন চাকর এসে ড্রেককে একখানা চিরকুট দিয়ে কানে কানে কি যেন বলল।
চিরকুট খানা একবার পড়েই ড্রেক দাঁড়িয়ে পড়ল। লেডী টাম্পলিনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে এক্ষুনি একবার বাইরে যেতে হচ্ছে মাদাম। পুলিশের প্রিফেক্ট আমার সঙ্গে এক্ষুনি একবার দেখা করতে চান। আমি বুঝতে পারছি না কেন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। এই কথা বলেই ড্রেক ডাইনিং হল থেকে বেরিয়ে গেল, সে চলে গেল।
লেডী টাম্পলিন বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে বলল, কি ব্যাপার! পুলিশ ওর খোঁজ করছে কেন!
প্রত্যেকের মনে তখন একই প্রশ্ন–পুলিশ ওর খোঁজ করছে কেন?
.
১২.
মৃত্যু সংবাদ
মিঃ আলডিন তার সেক্রেটারীর জন্যে অপেক্ষা করছেন। একটা বিশেষ কাজের জন্য তাকে প্যারীতে পাঠিয়েছেন। কথা আছে রাত আটটার মধ্যেই ফিরে আসবে সে এবং রিপোর্ট নিয়ে এলেই তিনি তার ভবিষ্যত কর্মপন্থা ঠিক করবেন।
ঠিক সময়েই ফিরে এলো কিংটন। তাকে দেখে মিঃ আলডিন বললেন, খবর ভালো তো? ওদিক সব ঠিক আছে?
-হা স্যার। সবই ঠিক আছে। আপনি গেলেই কাজটা হয়ে যাবে।
–আর কোনো খবর?
–বিজনেসের খবর আর কিছু নেই। তবে মিস ম্যাসন-এর সঙ্গে আমার প্যারীতে দেখা হয়েছিল।
–তার মানে! সেকি রুথের সঙ্গে যায়নি নাকি?
-না। সে বললে যে, মিসেস ক্যাথারিন তাকে প্যারীতে নামিয়ে দিয়েছেন। তিনি নাকি বলেছেন তার পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সে যেন রীহ্ হোটেলে অপেক্ষা করে।