ক্যাথারিন খুশী মনেই লেনক্স-এর কথায় সম্মতি জানাল, হ্যাঁ তাই চলো। ক্যাথারিন তিন তলায় ছোট একটি ঘরে নিয়ে গেল। ঘরটা অবশ্য ছোট হলেও চমৎকার সাজানো রয়েছে।
ঘরে ঢুকে একটা সোফার ওপর দুজনে বসল কিন্তু তখনও ক্যাথারিনের বিরক্ত ভাবটা কাটেনি। তাই লেনক্স বলল, মায়ের কথায় তুমি কিছু মনে করো না মাসী। মায়ের স্বভাবই ওই রকম। কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে চায় না আর চ্যাক্মিমশাইও একই রকম, সেই জন্যেই আমি তোমাকে ওদের কবল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এলাম। এবার তুমি বিশ্রাম নাও, আমি চলি।
এখুনি যাবে?
–হ্যাঁ, ওরা কি বলছে তা শুনতে চাই আমি। সে আবার মায়ের কাছে ফিরে এলো। তার মা আর মিঃ ইভান্স তখন দোতলার বারান্দায় কথাবার্তা বলছিল। লেডী টাম্পলিন বলল, মেয়েটাকে যত বোকা ভাবছিলাম তত নয়। তবে, বড় গম্ভীর। কথা একরকম বলতেই চায় না!
চ্যাব্বি বলল, তা ঠিক। তবে ভদ্রমহিলার চেহারাটা কিন্তু খুবই সুন্দর। পোষাক পরিচ্ছদও বেশ রুচি সম্মত। সব দিক থেকে সমাজে মেশবার উপযুক্ত।
উপযুক্ত না ছাই। অমন গোমড়ামুখো মেয়ে কি সমাজে মেলামেশা করতে পারে?
এবার লেনক্স বলল, মোটেই গোমড়ামুখো নয়। তোমরা দুজনে যা শুরু করেছিলে তাতে মরা মানুষেরও রাগ হয়। সারা সকাল পুলিশের হয়রানি সহ্য করেছে আবার তোমরা তাকে রেহাই দিচ্ছিলে না।
-তুমি যাই বল না কেন লেনা, পরের সম্পত্তি হাতে পেয়ে খুব অহঙ্কারী হয়েছে। আর মনটাও বেশ ছোট।
-ওর কাছ থেকে কিছু খসানো যাবে না তাই না?
–কি বলতে চাও তুমি?
–ঠিকই বলছি। ওর কাছ থেকে কিছু হাতিয়ে নেবার মতলবেই তো তুমি ওকে চিঠি লিখে এখানে এনেছ।
-তুমি ভুলে যাচ্ছ যে ও আমার মামাতো বোন।
এই কথা শুনে চ্যাব্বি হঠাৎ উৎসাহিত হল, তাই নাকি? তাহলে তো আমি ওর নাম ধরেই ডাকতে পারি তাই না?
–তা পার বৈকি?
–বেশ। তা এখন থেকে আমি ওকে নাম ধরেই ডাকবো, টেনিস খেলতে পারে নিশ্চয়ই।
–ও খেলবে টেনিস। তাহলেই হয়েছে। সারাটা জীবন গেল বুড়ীর সেবা করতে। টেনিস খেলা জানবে কোত্থেকে
লেনক্স এবার রেগে গেল, তোমরা তাহলে পরনিন্দা করতে থাকো আমি চললাম। উঠে দাঁড়াল লেনক্স।
–কোথায় চললে?–জিজ্ঞাসা করলো তার মা।
–কোথায় আবার! তোমরা যার নিন্দায় পঞ্চমুখ হয়েছ তার কাছেই যাচ্ছি আমি।
ক্যাথারিন সমুদ্রের দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল। লেনক্স এসে বলল–কি গো মাসী! অমন তন্ময় হয়ে কি দেখছ?
-না কিছু না। কখন এলে তুমি?
–এই আসছি। একটা কথা তোমাকে বলতে এলাম।
–কি?
-তুমি এখানে না এলেই ভালো করতে। কেন এলে এখানে?
–না এলে যে তোমার সঙ্গে পরিচয় হোত না।
–না, ঠাট্টা নয়। তোমার দিদির স্বামীটি একটি চীজ। সব সময় স্ত্রীর আঁচল ধরেই আছে। কোনো স্বামী যে স্ত্রীর ওইভাবে মোসাহেবী করতে পারে তা আমার জানা ছিল না।
–মিঃ চ্যাব্বি বুঝি দিদির মোসাহেবী করে?
–হরদম। আর মোসাহেবী না করলে চলবেই বা কি করে টাকা চাই তো।
–সেকি উনি কোনো কাজকর্ম করেন না?
করেন বৈকি। বেকার সমিতির প্রেসিডেন্ট।
লেনক্স-এর কথা শুনে হেসে ক্যাথারিন বলল, তুমি তো খুব হাসাতে পার দেখছি। এবার আমার কথাটা শোন। তোমার মায়ের কাছে নিশ্চয়ই শুনেছ যে আমি এতদিন এক বৃদ্ধ মহিলার সেবা শুশ্রূষা করতাম। ভদ্রমহিলা মারা যাবার আগে তার সমস্ত সম্পত্তির-উইল করেছেন আমার নামে।
-হা শুনেছি। পদ্ধতিটা বোধহয় ভালোই, তাই না?
–হ্যাঁ, তা ভালোই বলা চলে। তবে সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লক্ষ পাউণ্ডেরও ওপর।
–বলো কি মাসী। তুমি তাহলে একজন জাঁদরেল মহিলা।
–তাই বুঝি। তা হবে, তারপর শোনো, এতদিন আমি হাই সোসাইটিতে মেলামেশা করার কোনো সুযোগ পাইনি। এবার আমি হাই সোসাইটিতে মিশতে চাই। আর সেই জন্যেই তোমার মায়ের চিঠি পেয়েই চলে এসেছি। তবে আমি আসাতে দিদি যদি……
ক্যাথারিনের কথা শেষ হবার আগেই লেডী টাম্পলিন হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল; একটা সুখবর আছে লেনা।
কি?
–এইমাত্র ড্রেক আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিল, আজ রাত্রে সে আমাদের এখানে ডিনার খাবে।
–এটা সত্যিই সুখবর মা, আজকের ডিনারটা খুবই আকর্ষণীয় হবে দেখছি।
–হ্যাঁ ড্রেক আসাতে ডিনার পার্টিটা সত্যই জমজমাট হবে।
–তুমি কি ডিনার পার্টির ব্যবস্থা করেছ নাকি?
–নিশ্চয়ই। ক্যাথারিনের সঙ্গে পরস্পরের পরিচয় করে দিতে হবে তো। কয়েকজন বিশিষ্ট লোককে নিমন্ত্রণ করতে বেরোচ্ছি। তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে চাও?
–না, মা। আমি আজ মাসীর সঙ্গে গল্প করছি আর কোথাও বেরোব না।
লেডী টাম্পলিন চলে গেলে ক্যাথারিন বলল, ড্রেক কে লেনা?
–লর্ড লুকোনবারীর ছেলে। যেমন বংশমর্যাদা তার তেমন চেহারা। তাছাড়া চালচলন কথাবার্তা সবেতেই চৌকস। মেয়েরা তো তাকে দেখলেই পতঙ্গের মত ছুটে যায় তার দিকে।
-কেন?
-কেন তা বলতে পারি না। তবে মনে হয় তার বেপরোয়া চাল চলনে তার জুয়াড়ী স্বভাবের জন্যেই তার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
জুয়াড়ী স্বভাব মানে?
–মানে, জুয়ায় তার সর্বস্ব পণ রাখতে ওর বাধে না। এটা নাকি ওর বংশানুক্রমিক স্বভাব। আমি শুনেছি, ওর পূর্বপুরুষেরা তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাজি ধরে জুয়া খেলতেন। তাছাড়া কেউ কেউ নাকি তাদের সুন্দরী বউদেরও বাজি ধরতেন। বংশের সেই ধারাটাই ড্রেক পেয়েছে।