–না।
–আচ্ছা মেইডের কামরায় কোনো পরপুরুষ আছে বলে আপনার সন্দেহ হয়েছিল কি?
–সন্দেহ নয়, সত্যিই ঐ কামরায় একটা লোক ছিল। দরজাটা পুরোপুরি খোলা না থাকায় আমি তার মুখটা দেখতে পাইনি। তবে সে যে দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিল এতে কোনো ভুল নেই।
–আপনি আর কিছু লক্ষ্য করেছিলেন কি?
-না মঁসিয়ে। আর বিশেষ কিছু লক্ষ্য করিনি।
–ভোর হবার পর আপনি ওদের এদিকে এসেছিলেন কি?
–হ্যাঁ, এসেছিলাম কিন্তু উনি ঘুম ভাঙাতে নিষেধ করেছেন বলে মাদামের কামরায় ঢুকিনি।
-তারপর? কি করলেন?
–কেন্স স্টেশন আসবার আগে আর একবার এই কামরার সামনে অত বেলায় তখনও দরজা বন্ধ দেখে আমি দরজায় করাঘাত করি কিন্তু ভেতরে কোনো সাড়া পাই না। আমি তখন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। মাদামকে দেখে মনে হলো তখনও ঘুমিয়ে আছেন। তাই আমি তাকে জাগিয়ে দেবার জন্য তার মুখের ওপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে দিই। তারপরেই…
-তারপরই আপনি দেখতে পান যে মহিলাটিকে হত্যা করা হয়েছে তাই না?
-হ্যাঁ, ঠিক তাই। ব্লু ট্রেনে যে এই রকম একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটবে আমার ধারণার বাইরে। এটা সত্যই ভয়ানক। কিন্তু আমি জ্ঞানত আমার কর্তব্য কর্মে অবহেলা করিনি।
কমিশনার বললেন, না, আপনার কর্তব্য কর্মে ত্রুটি হয়নি। এ ব্যাপারে আপনার কোনো চিন্তা নেই।
কমিশনারের কথায় আশ্বস্ত হয়ে কণ্ডাক্টর বলল, মঁসিয়ে যদি দয়া করে কর্তৃপক্ষকে আমার সম্বন্ধে একটু বলেন তাহলে বড় ভাল হয়।
–ঠিক আছে। রেল কর্তৃপক্ষকে আপনার কথা বলব। কণ্ডাক্টর সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে চলে গেল।
কমিশনার বললেন, ডাক্তারের কথা মেনে নিলে ধরতে হয় মহিলাটিকে হত্যা করা হয়েছিল। গেয়ার দ্য নয়েন এবং নয়েন স্টেশনের মধ্যে। কিন্তু কে এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক। মাদমোয়াজেল-এর কথায় বোঝা যায় যে মহিলাটি তার লাভারের সঙ্গে দেখা করতে রিভিয়ারায় যাচ্ছিলেন। তবে কি লোকটা প্যারীতে এর সঙ্গে দেখা করেছিল? আমার মনে হয় দেখা করেছিল এবং এই মহিলাটি তাকে পাশের ঘরে লুকিয়ে রেখেছিল। এরপর মহিলাটি হয়তো তাকে জানায় যে তিনি আর তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। এবং এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে কলহের দরুণ ওকে হত্যা করে সে নয়েন স্টেশনে নেমে যায়।
পোয়ারো বললেন, অথবা সে নিস স্টেশনেও আসতে পারে।
-তা পারে, কিন্তু সেটা তার পক্ষে চরম দুঃসাহসের কাজ হবে।
–এটা তো ডাকাতদের কাজও হতে পারে।
–হ্যাঁ, তাও হতে পারে। কিন্তু সেই মেইডটির খোঁজ না পাওয়া অবধি সঠিক কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ভেলভেটের বাক্সটি যদি তার কাছে পাওয়া যায় তাহলে এটা রেল-ডাকাতদের কাজ নয়। শুধু তাই নয়। বাক্সটার সন্ধান পওয়া গেলে নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে এটা প্রেমঘটিত ব্যাপার। তবে আমার মনে হচ্ছে এটা ট্রেন-ডাকাতদেরই কাজ। আজকাল ওরা ভয়ানক দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে।
এই সময় ক্যাথারিন বলল, আমাকে আর কতক্ষণ আটকে রাখতে চান আপনারা?
কমিশনার বললেন, না, আর আপনাকে আটকে রাখব না। এবার আপনি যেতে পারেন আর যাবার আগে আপনার ঠিকানাটা দিয়ে যান।
–লিখে নিন। ক্যাথারিন গ্রে, কেয়ার অব লেডী টাম্পলিন, মার্গারেট ভিলা, নিস। ঠিকানাটা দিয়েই সে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল।
৩. মার্গারেট ভিলা
১১. মার্গারেট ভিলা
মার্গারেট ভিলায় ডাইনিং রুমে বসে লাঞ্চ খাচ্ছিল লেডী টাম্পলিন, তার স্বামী মিঃ চার্লস ইভান্স ওরফে চ্যাব্বি। লেডীর ভূতপূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে লেনক্স এবং ক্যাথারিন। ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে লেডী টাম্পলিন বলল, তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমিও জড়িয়ে পড়লে। আমি কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না, তোমাকে এ ব্যাপারে পুলিশ কেন টানছে।
লেডী টাম্পলিনের কথাটা ক্যাথারিনের কাছে বিরক্ত বোধ হল তাছাড়া লাঞ্চ টেবিলে এসব আলোচনা মোটেই ভালো লাগল না তাই সে চুপ করে রইল।
চ্যাব্বি বলল, পুলিশ যখন ওকে নিতে চাইল তখন আমিও সঙ্গে যেতে চাইলাম কিন্তু আমাকে তারা অপেক্ষা করতে বলল।
লেডী টাম্পলিন আবার বলল, আমার মনে হয় নিহত মেয়েটির সঙ্গে তোমার যে সব কথাবার্তা হয়েছে তা থেকে ওরা একটা সূত্র বের করতে চেষ্টা করছে।
ওদের কথাগুলো যে ক্যাথারিনের ভালো লাগছিল না সে কথা লেনক্স বুঝতে পেরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বেশ বিরক্তির সুরেই বলল, দয়া করে থামবে এবার!
মেয়ের বিরক্তি লক্ষ্য করে লেডী টাম্পলিনও বিব্রত স্বরে বলল, তুমি জানো না লেনা। খবরের কাগজে-বিষয়টাকে এমনভাবে লিখবে যে শেষ পর্যন্ত হয়ত আমাকেও টেনে আনবে এর মধ্যে। যাতে এটা না হয় সে ব্যবস্থা আমি করছি। মঁসিয়ে দ্য হেভীল্যাণ্ড আমার বিশেষ বন্ধু। খবরের কাগজের রিপোর্টারদের ওপর তার অসীম প্রভাব। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করব আমি। কি বলো ক্যাথারিন? মতলবটা কেমন মনে হয় তোমার?
এতক্ষণে কথা বলল ক্যাথারিন, না এসব কিছুই করতে হবে না আপনাকে।
ক্যাথারিন-এর কথা শুনে লেডী টাম্পলিন বেশ একটু দমে গেল। কিন্তু কেউ তাকে থামাবে এটা সে সহ্য করতে পারে না। তাই সে শুরু করল, মাদাম ক্যাথারিনকে আমি চিনতাম। ভারি সুন্দর চেহারা ছিল তার। তাছাড়া খরচের হাতটা এত বেশি যে জলের মতো টাকা খরচ করত সে।
লাঞ্চ শেষ হয়ে গেলে লেনক্স ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে বলল, চলো মাসী, তোমার ঘরটা একবার দেখে আসি।