সব কথা শোনবার পর মঁসিয়ে পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে কমিশনার বললেন, ওনার মনে হয় ওই লোকটাই হয়তো…..
তার কথায় বাধা দিয়ে ক্যাথারিন বলল, ব্যাপারটা তো আত্মহত্যাও হতে পারে।
-না, আত্মহত্যার ঘটনা এটা নয়। কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে নিজের গলায় ফাঁস লাগান না।
–কি বললেন। গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়েছে।
–শুধু তাই নয়, কোনো ভোতা জিনিস দিয়ে আঘাত করে তার মুখটা বিকৃত করা হয়েছে।
-কী ভয়ানক!
সত্যিই ভয়ানক। হত্যাকারী যেই হোক, সে যে মহাপাষণ্ড এতে কোনোই ভুল নেই। যাই হোক, আপনাকে আর একটু কষ্ট দেব আমি। আমাদের সঙ্গে সেই মহিলাটির কামরায় একবার যেতে হবে।
কেন বলুন তো?
-মৃতদেহটা একবার দেখবেন। এখনও সনাক্ত হয়নি মৃতদেহটা। আমার মনে হয় আপনি হয়তো সনাক্ত করতে পারবেন।
-বেশ তাহলে চলুন।
এইসময় পোয়ারো বললেন, আমি আপনাদের সঙ্গে যেতে পারি কি?
–একথা জিজ্ঞেস না করলেও চলতো মঁসিয়ে। আপনি নিশ্চয়ই যাবেন।
রুথ ক্যাথারিনকে সীটের ওপরে চিৎ করে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। তার বিকৃত মুখখানা দেখে ক্যাথারিন শিউরে উঠেছিল। গতকালের সেই হাসিখুশী মুখের সঙ্গে আজকের এই মুখের কত তফাৎ। রুথের অত সুন্দর মুখখানার বীভৎস পরিণতি দেখে ক্যাথারিন-এর চোখে জল এল।
কমিশনার বললেন, আপনি একে চিনতে পারছেন তো?
–হ্যাঁ, পারছি। মুখ দেখে চেনার উপায় না থাকলেও ওর গায়ের ওই সিল্ক কোট আর ডান হাতের কব্জির ওপর তিল চিহ্ন দেখে আমি ওকে চিনতে পেরেছি।
পোয়ারো বললেন, মাদমোয়াজেল-এর সাক্ষ্যটা খুবই মূল্যবান হবে মঁসিয়ে কক্স। কিন্তু এখনও খুনীর উদ্দেশ্যটা জানা যায়নি।
–আমার মনে হয় ওকে রব করবার জন্য হত্যা করেছে।
–তাই যদি হয়, তাহলে হত্যাকারী ওর মুখখানাকে ওভাবে বিকৃত করবে কেন?
–তাও তো বটে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয়?
–কিছুই মনে হয় না। তদন্ত না করে এবং ঘটনাবলী বিশ্লেষণ না করে এ ব্যাপারে কিছুই বলা যায় না। তবে এটা ঠিক যে এটা রবারী কেস নয়।
এই সময় ক্যাথারিন বলল, আমাকে আর কতক্ষণ আটকিয়ে রাখবেন মঁসিয়ে?
-না, আর বেশিক্ষণ নয়। এবার পাশের কামরাটা একটু দেখেই আপনাকে ছেড়ে দেব। ক্যাথারিন ও পোয়ারোকে নিয়ে কমিশনার পাশের কামরায় ঢুকেই দেখে যে, কামরার ভেতরে তিন-চার খানা কম্বল এলোমেলো ভাবে জড়ো হয়ে পড়ে আছে।
কম্বলগুলো তুলে একটা একটা করে পরীক্ষা করতে লাগলেন পোয়ারো। কমিশনার কয়েকটা পরীক্ষা করলেন।
সীটের পাশে একটা টুপি রাখার বাক্স এবং দুটো স্যুটকেশ দেখতে পাওয়া গেল।
জিনিসগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কমিশনার ক্যাথারিন-এর দিকে তাকালেন। এখান থেকে কোনো কিছু খোয়া গেছে কিনা দেখুন তো, মাদমোয়াজেল।
কমিশনারের কথা শুনে ক্যাথারিন ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখে বলল, একটা জিনিস দেখতে পাচ্ছি না।
–কি জিনিস?
–বেগুনি রং-এর একটা ভেলভেটের বাক্স। ওটাকে আমি মেইডের হাতে দেখেছিলাম।
–বাক্সটার ভেতরে কি ছিল জানেন কি?
-না, তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম, বাক্সটার ওপরে আর. কে. (R. K.) এই অক্ষর দুটি এমব্রস করা ছিল। আমার মনে হয় মেইড এটা নিয়ে সরে পড়েছে।
ক্যাথারিন-এর কথার উত্তরে কমিশনার বললেন, না। আপনার অনুমান ঠিক নয়। মেইডটি প্যারী স্টেশনে নেমেছেন।
কমিশনার যখন কথা বলছিলেন পোয়ারো কিন্তু তখনও কম্বলগুলো পরীক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটা কম্বলের ভাঁজের ভেতরে দুগোছা সোনালী রঙের পরচুল দেখতে পেলেন তিনি।
চুলের গোছা দুটো হাতে তুলে কমিশনারের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই জিনিসটা একবার দেখুন মঁসিয়ে কক্স।
–এতো দুগোছা চুল। এর কি কোনো গুরুত্ব আছে।
-কিসের গুরুত্ব আছে আর কিসের নেই সেটা আগে থেকে বলা যায় না। আমাদের প্রতিটি বিষয়ের দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। আপাতত কোনো কিছু অকেজো মনে হলেও সেটাও নোট করতে হবে। এই বলে চুলের গোছা দুটো একটা কাগজে মুড়ে পকেটে রাখতে রাখতে পোয়ারো বললেন, কণ্ডাক্টরকে একবার ডেকে পাঠান মঁসিয়ে কক্স। তার বক্তব্যটা বিশেষভাবে শোনা দরকার।
কমিশনার ডেকে পাঠানোর দুমিনিটের মধ্যেই কণ্ডাক্টর এসে হাজির হলো। কমিশনার বললেন, আপনার নাম?
–পিয়ের মিচেল।
–আপনি আমাকে যে সব কথা বলেছিলেন সেগুলো আরেকবার এই ভদ্রলোককে বলুন। পিয়ের মিচেল বলতে শুরু করল, আমাদের ট্রেনটা গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশন থেকে ছাড়বার পর আমি বিছানা ঠিক করে দেবার জন্য মাদামের কামরায় আসি। কামরায় ঢোকবার আগে আমি ভাবছিলাম যে মাদাম হয়তো ডিনার খেতে ডাইনিং কোচে গেছেন। কিন্তু কামরায় ঢুকে দেখি যে তিনি ডিনার বাস্কেট নিয়েছেন। আমি তার মেইডের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন যে তিনি তাকে প্যারীতে নামিয়ে দিয়েছেন। আমাকে তিনি একটি মাত্র বিছানা পাততে বলেন। বিছানা পাতা হয়ে গেলে তিনি আমাকে বলেন যে তাকে যেন সকালে ঘুম ভাঙ্গানো না হয়। আমি তাকে বলি তার কথা মতই কাজ হবে। তারপর তিনি আমাকে গুড-নাইট জানান, আমিও তাকে গুড-নাইট জানিয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে যাই।
–আপনি মেইডের কামরায় ঢুকেছিলেন কি?–প্রশ্ন করলেন পোয়ারো।
–না মঁসিয়ে।
–মেইডকে আপনি দেখেছিলেন?
–ট্রেন প্যারীতে আসবার আগে একবার দেখেছিলাম।
তার কাছে কোনো ভেলভেটের বাক্স দেখেছিলেন কি?