নোটখানা পকেটে ভরে সে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হল সে যেন কিছু বলতে চায়। ক্যাথারিন বিরক্ত হলো। আশ্চর্য! লোকটা এক পাউণ্ড বকসিস পেয়েও খুশী হয়নি।
বিরক্তির সুরে বলল, কি ব্যাপার! তুমি কি কিছু বলতে চাও?
-হ্যাঁ, মানে… গত কাল আপনি যে ভদ্রমহিলার সঙ্গে লাঞ্চ খেয়েছিলেন, তার সঙ্গে আপনার কত দিনের পরিচয়?
–একথা আমাকে জিজ্ঞেস করার অর্থ কি?–বেশ একটু ঝাঁঝিয়ে কথাটা বলল ক্যাথারিন।
তাকে রেগে যেতে দেখে আমতা আমতা করে বলল, না, মানে সেই মহিলাটি….
কথাটা শেষ না করেই কণ্ডাক্টর তার কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেল ক্যাথারিনের কামরা থেকে।
মিনিট পাঁচেক পরেই ট্রেন পৌঁছে গেল নিস স্টেশনে। ক্যাথারিন প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল কেউ তাকে রিসিভ করতে এসেছে কিনা।
একটু পরে একজন সুশ্রী যুবক তার সামনে এসে দাঁড়াল, ক্ষমা করবেন। আপনি কি মিস গ্রে?
-হা কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারছি না।
–আমার নাম চ্যাব্বি। আপনার পিসতুত দিদি মানে লেডী টাম্পলিন আমার স্ত্রী। আপনার জিনিসপত্রগুলো দেখিয়ে দিন। কাস্টমস-এর ঝামেলা থেকে মুক্ত করতে হবে।
দুটি স্যুটকেশ আর বিছানা ছাড়া ক্যাথারিন-এর সঙ্গে কিছুই ছিল না। চ্যাব্বিকে সেগুলো দেখিয়ে দিতেই তিনি হাঁকডাক করে একজন কুলি ডেকে সেগুলো মাথায় চাপিয়ে দিলেন।
আসুন মিস গ্রে। এবার কাস্টমস্ অফিসে যেতে হবে। কাস্টমস্-এর ঝামেলা মেটবার পর ক্যাথারিন আর চ্যাব্বি দরজার দিকে পা বাড়াতেই একজন পুলিশ-অফিসার ক্যাথারিনের সামনে এগিয়ে বলল, আপনাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, মাদমোয়াজেল!
-কেন বলুন তো?
–কোনো বিশেষ একটা ঘটনা সম্বন্ধে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করার আছে।
–কোনো ঘটনা? তাছাড়া আপনিই বা কে?
–আমি নিস-এর কমিশনার অব পুলিশ।
–আপনি কি আমার পাশপোর্ট দেখতে চান?
–না, আমি আপনার কাছে কয়েকটা খবর জানতে চাই।
–খবর কি বিষয়ে?
–একজন মহিলার সম্বন্ধে। আমি জানতে পেরেছি আপনি গতকাল তার সঙ্গে লাঞ্চ খেয়েছেন এবং লাঞ্চের পরেও অনেকক্ষণ তার সঙ্গে গল্প করেছিলেন।
-কারো সঙ্গে লাঞ্চ খাওয়া বা গল্প করা অপরাধ নাকি?
-না। তা নয়, তবে ওই মহিলাটির সম্বন্ধে আমরা যাবতীয় খবর জানতে চাই বলেই আপনার সঙ্গে কথা বলা দরকার।
–দেখুন মঁসিয়ে কমিশনার, কোথাকার কোনো মহিলার খবর জানাবার জন্যে আমার মোটেই মাথাব্যথা নেই। তাছাড়া এভাবে কোনো মেয়েকে বিরক্ত করাটাও বোধহয় আইনসম্মত নয়।
–ফরাসী পুলিশ অকারণে কোনো কিছু করে না। মাদমোয়াজেল কারণ একটা অবশ্যই আছে।
–কারণটা দয়া করে বলবেন কি?
নিশ্চয়ই বলব। যে মহিলাটির সম্বন্ধে আমরা খবরাখবর জানতে চাইছি, তিনি গত রাত্রে মারা গেছেন।
মারা গেছেন! বলেন কি?
–মারা গেছেন বললে ঠিক হয় না। তিনি নিহত হয়েছেন অর্থাৎ কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে।
–কি সর্বনাশ; মিসেস ক্যাথারিন খুন হয়েছেন।
এবার তাহলে বুঝতে পারছেন কেন আমরা আপনাকে যেতে দিচ্ছি না। চলুন আমরা ট্রেনের কামরায় যাই।
–তা না হয় যাচ্ছি। কিন্তু আমার কাছ থেকে বিশেষ কোনো খবর আপনি পাবেন না। কারণ তার সম্বন্ধে আমি একেবারে কিছুই জানি না বললেই হয়। আমার মনে হয়, তার মেইডের কাছ থেকে সব খবর জানতে পারবেন।
-মেইড পালিয়েছে।
–বলেন কি!
–ঠিকই বলছি। সেইজন্যেই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। কারণ ট্রেনের যাত্রীদের ভেতরে শুধু মাত্র আপনার সঙ্গেই তার কথাবার্তা হয়েছিল।
-বেশ, তাহলে চলুন কোথায় যেতে চান।
এই সময় চ্যাব্বি বলল, আমি কি ওর সঙ্গে যেতে পারি?
–আপনি কে? প্রশ্ন করে কমিশনার।
–আমি হলাম ওর দিদির, মানে লেডী টাম্পলিনের স্বামী। আমি ওকে স্টেশন থেকে নিয়ে যেতে এসেছি।
-আপনাকে একটু বাইরে অপেক্ষা করতে হবে মঁসিয়ে। মনে হয়, আধ ঘণ্টার মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের কাজ শেষ করতে পারব। এই সময়টা আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
চ্যাব্বিকে বলার পর কমিশনার ক্যাথারিনকে সঙ্গে করে একটা কামরায় গিয়ে ঢুকলেন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরেকজন ঢুকে পড়ল সেখানে।
তাকে দেখে কমিশনার খুশী হয়ে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো যে! আপনাকে পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
উনি মৃদু হেসে বললেন, ভাগাড়ে মড়া পড়লেই শকুন এসে হাজির হয়, তাই না?
–এটা কি বলছেন মঁসিয়ে, বিশ্ববিখ্যাত ডিটেকটিভ মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারোকে এখানে পেয়ে আমি যে কত নিশ্চিন্ত হয়েছি সে কথা মুখে বলে বোঝাতে পারব না। আপনি দয়া করে বসুন মঁসিয়ে, মাদমোয়াজেল গ্রে-কে আপনার সামনেই জিজ্ঞাসা করছি। ওঁর সঙ্গে নিহত মহিলাটির পরিচয় হয়েছিল, কিছু কথাবার্তাও হয়েছিল ওঁদের ভেতরে।
মঁসিয়ে পোয়ারো তখন ক্যাথারিনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, কেমন মাদমোয়াজেল, বলেছিলাম না, আপনি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কোনো একটা রোমাঞ্চকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়তে পারেন, কাথাটা খেটে গেল তো?
–হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।
এইসময় কমিশনার বললেন, আপনাকে আর বেশিক্ষণ আটকে রাখব না। এবারে আপনি বলুন, মৃত মহিলাটির সঙ্গে আপনার কি কি কথা হয়েছিল।
কমিশনারের প্রশ্নের উত্তরে ক্যাথারিন সব কথা খুলে বলল তাকে। রুথ ক্যাথারিন-এর সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে তাদের ভেতরে যা যা কথা হয়েছিল সেগুলো প্রায় হুবহু বলে গেল সে। এমন কি, রুথ যে তার বাবাকে গোপন করে লাভারের কাছে যাচ্ছিল সে কথাও বলল কমিশনারকে।