-হ্যাঁ, এগুলো আমার ভালো লাগে।
-এই ধরনের বই-এর চাহিদা খুব বেশি শুনেছি। কিন্তু কেন এগুলির অত চাহিদা বলতে পারেন কি?
রহস্যজনক এবং রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়ে মনে একটা উত্তেজনা জাগে। আমার মনে হয় এই কারণেই লোকে বেশি পড়ে।
-হ্যাঁ, কথাটা ঠিকই বলেছেন। এতে যেসব রোমাঞ্চকর ঘটনা থাকে সেগুলি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ।
–কিন্তু আমার ধারণা বাস্তব জগতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই।
–না মাদমোয়াজেল আপনার ধারণা ভুল। এরকম অনেক ঘটনা বাস্তবেও ঘটে।
–বলেন কি?
–ঠিকই বলছি। এমনও হতে পারে, আপনিও হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
-না, আমার তা মনে হয় না। আমার জীবনে এরকম কোনো ঘটনা কোনোদিনই ঘটেনি।
–অতীতে না ঘটলেও ভবিষ্যতে যে ঘটবে না তা কে বলতে পারে।
–আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা আছে।
–তা আছে। এবং এ ধরণের ঘটনায় নিজেকে জড়িত করাটা অপছন্দ করি না আমি। জীবনে যে অভিজ্ঞতা আমি সঞ্চয় করেছি তা হলো, লোকে যা চায় তা অনেক ক্ষেত্রেই পেয়ে যায়। আপনিও হয়তো যা চাইছেন তা পেয়ে যাবেন।
–আপনি কি ভবিষ্যৎ বক্তা না কি?
–না, আমি যা বলি তা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলি।
এই ধরণের কথাবার্তার ভিতর দিয়ে ডিনার শেষ করে ভদ্রলোকটি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। ক্যাথারিন ডাইনিং কোচ থেকে রুথ-এর কামরার পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখল রুথ জানলার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর ট্রেনের কণ্ডাক্টার সীটের ওপরে বিছানা পেতে দিচ্ছে। সে আরও লক্ষ্য করল, পাশের ছোট কামরায় কতগুলো কম্বল এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে কিন্তু রুথ-এর সহকারিণী মেয়েটি সেখানে নেই।
নিজের কামরায় ঢুকে ক্যাথারিন দেখল যে, তার বিছানা পেতে দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে নটা, সে তখন তার কামরায় আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।
অঘোরে ঘুমোচ্ছিল ক্যাথারিন। হঠাৎ একটা দুঃস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়ি দেখতে গিয়ে দেখল তার ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে। কি মনে করে বিছানা ছেড়ে কামরা থেকে বেরিয়ে ট্রেনের কণ্ডাক্টরের কাছে সময় জেনে ঘড়িটা মিলিয়ে নেবার জন্যে কণ্ডাক্টরের সীটের দিকে গেল।
ক্যাথারিন করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগল। কিছুটা যেতেই দেখল কণ্ডাক্টরের সীটটা খালি। সে তখন উল্টো দিকে গেল। রুথ ক্যাথারিন-এর কামরার কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়াল ক্যাথারিন। দেখল একটি নোক সেই কামরার দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটি করিডোরের দিকে পেছন ফিরে ছিল বলে ক্যাথারিন তার মুখটা দেখতে পেল না কিন্তু বুঝতে পারলো যে লোকটির বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশের বেশি নয়।
হঠাৎ লোকটি ঘুরে দাঁড়াতেই ক্যাথারিন তাকে চিনতে পারল। এতো সেই লোকটি যে স্যাভয় হোটেলের করিডোরে তার গায়ের উপর পড়েছিল–তাছাড়া টমাক কুক-এর অফিসেও তাকে দেখেছিল।
তবে কি এই লোকটির কথাই রুথ বলেছিল। এর সঙ্গে দেখা করার জন্যেই কি রিভিয়ারায় যাওয়া।
পরক্ষণেই মনে হলো সে হয়তো কামরাটা ভুল করেছে। ওটা হয়তো ওই ভদ্রলোকের কামরা হবে।
এই কথা মনে হতেই সে নিজের কামরায় চলে গেল। মিনিট পাঁচেক বাদেই ট্রেনের গতিবেগ কমে গেল। তার পরেই ট্রেন এসে থামল লায়ন স্টেশনে।
.
১০.
হত্যাকাণ্ড
খুব ভোরেই ক্যাথারিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই সে দেখল, চারিদিক বেশ ফর্সা হয়েছে।
তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে সে ব্রেকফাস্ট করতে ডাইনিং কোচে গেল। কিন্তু সেখানে তার পূর্ব পরিচিত কাউকে দেখল না।
ব্রেকফাস্ট সেরে নিজের কামরায় এসে দেখে কণ্ডাক্টর তার বিছানা গুটিয়ে দিচ্ছে।
ক্যাথারিনকে দেখে তাকে সুপ্রভাত জানাল, আপনার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, কারণ আকাশে আজ সূর্য দেখা দিচ্ছে। অন্যান্য দিন এ সময় বাইরে কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে।
কণ্ডাক্টরের কথার উত্তর দিল না, ক্যাথারিন বলল, ট্রেন লেট হয়নি তো?
–হ্যাঁ। কিছুটা লেট হয়েছে বৈকি। এতক্ষণ নিস-এ পৌঁছে যাবার কথা।
–নিস-এ পৌঁছতে আর কত দেরি?
–আর বেশি দেরি নেই। এসে গেলাম বলে। এরপর কেন, তারপরেই নিস। আপনি বিশ্রাম করুন, নিস-এর কাছাকাছি এলেই আমি এসে খবর দেব। কণ্ডাক্টর চলে গেল।
ক্যাথারিন বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে লাগল। দূরে পামগাছের সারি। সেই গাছের সারির ভেতর দিয়ে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি দেখা যাচ্ছে। আকাশটাও বেশ পরিষ্কার। দৃশ্যটা খুবই ভালো লাগল ক্যাথারিনের।
কয়েক মিনিট পরেই ট্রেনটা কেন স্টেশনে এলো। ক্যাথারিন পুরু ওভারকোট গায়ে দিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে পায়চারি করতে লাগল। হঠাৎ তার নতুন বন্ধুটির কথা মনে পড়ল। ঘণ্টাখানেক কথা হয়েছে তার সঙ্গে। কিন্তু এই অল্প সময়েই তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে ক্যাথারিন।
রুথ ক্যাথারিন-এর কথা মনে হতেই কামরার দিকে তাকিয়ে দেখল সব জানালাগুলি বন্ধ। তবে কি ওর ঘুম ভাঙ্গেনি এখনও! কিন্তু তার সঙ্গে মেইড রয়েছে, তারও কি ঘুম ভাঙ্গেনি! কে জানে? হবেও বা!
ট্রেন ছাড়বার ঘন্টা পড়লেই সে তার কামরায় উঠে পড়ল। ট্রেন ছাড়বার মিনিট কয়েক পরে কণ্ডাক্টর এসে জানিয়ে গেল যে, আর পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই ট্রেন নিস-এ পৌঁছে যাবে।
ক্যাথারিন তার হ্যাণ্ডব্যাগ থেকে এক পাউণ্ডের একখানা নোট বার করে কণ্ডাক্টরের হাতে দিল, এটা তোমায় বকসিস দিলাম।