–না, ওখানে আমি আরও কয়েকবার গেছি।
–তাহলে হয়তো আমার দিদিকে চিনতেও পারেন। তার নাম লেডী টাম্পলিন।
–লেডী টাম্পলিন আপনার পিসতুত দিদি? তার সঙ্গে তো আমার ভালো পরিচয় আছে।
এই সময় মিঃ আলডিন বললেন, লেডী টাম্পলিন-এর নাম আমিও শুনেছি, তবে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচয় করবার সুযোগ হয়নি আমার।
তার কথা শেষ হতে না হতেই ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা পড়লো। তিনি রুথ আর ক্যাথারিনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নেমে এলেন।
ট্রেন ছেড়ে দিল। রুথ জানালা দিয়ে মুখ বার করে রুমাল নাড়লো আর মিঃ আলডিনও রুমাল নেড়ে বিদায় অভিনন্দন জানালেন মেয়েকে। একসময় প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দূরে মিলিয়ে গেল ট্রেন।
–আমি এবার উঠি মিসেস ক্যাথারিন। আবার দেখা হবে।
নিশ্চয়ই, আজ আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ খাব, কেমন?
–বেশ, তাই হবে। গুড বাই।
–গুড বাই।
ক্যানে স্টেশন থেকে ট্রেনটা ছাড়তেই লাঞ্চের ঘণ্টা বেজে উঠল। যাত্রীরা সবাই ডাইনিং কোচ-এর দিকে গেল। রুথ আর ক্যাথারিন একটা টেবিলে মুখোমুখি বসল। খেতে খেতে দুজনের কথাবার্তা চললো।
রুথ বলল–আচ্ছা, আমাকে দেখে কি রকম মনে হয় আপনার?
-তার মানে?
-মানে, প্রথম দর্শনেই কাউকে ভালো আবার কাউকে খারাপ লোক বলে মনে হয়। তাই আমাকে দেখে কি রকম মেয়ে বলে মনে হয়?
-আমাকে কি থট রীডার মনে করলেন নাকি?
–না থট রীডার মনে করিনি। তবু কথাটা জানতে ইচ্ছে করছে আমার।
–বেশ, আপনি যখন এতই ইচ্ছুক তবে শুনুন। আপনার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে যে, আপনি কোনো দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
-আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই আমার মনটা খুব খারাপ হয়েছে। আমার মনের কথাগুলো যদি আপনাকে বলতে পারতাম তাহলে হালকা হতো আমার মনটা।
-বেশ, আপনার মন যদি হালকা হয় বলতে পারেন।
-না, এখানে নয়। লাঞ্চের পরে আপনাকে আমার কামরায় নিয়ে গিয়ে সব কথা বলব। লাঞ্চ শেষ হলে দুজনে রুথের কামরায় গিয়ে বসলেন–পাশাপাশি।
-এবার শুনুন আমার কথাগুলি।
–বলুন, আমি শুনছি।
অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আমাকে জোর করে সরিয়ে আনা হয়। আমার বাবার মতো ধনীলোক পৃথিবীতে খুব কমই আছেন। বাবা জানতে পেরে জোর করে লর্ড-এর ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। কিন্তু আমি এ বিয়েতে খুশী হইনি।
-তারপর?
–এখনও, মানে আমি রিভিয়ারায় যাচ্ছি তার সঙ্গে মেলবার জন্যে। কিন্তু এদিকে বাবা চাইছেন আমার স্বামীর চালচলনে অসন্তুষ্ট হয়ে আমাকে ডিভোর্সের মামলা করাতে। বাবার ইচ্ছে রিভিয়ারা থেকে ফিরেই আমি যেন মামলাটা দায়ের করি। কিন্তু……
-কিন্তু কি?
–আমি যে একজন পর পুরুষের সঙ্গে মিলতে যাচ্ছি তা বাবা জানেন না। আমি-মানে-আমি ঠিক বুঝতে….
কথাটা শেষ না করেই রুথ থেমে গেল। ক্যাথারিন দেখল যে, সে থরথর করে কাঁপছে। তার অবস্থা দেখে মায়া হলো।
-আমি বুঝতে পারছি যে, এ ব্যাপারটা আপনার মনে ঝড় তুলেছে।
–ঠিকই বলেছেন। কিন্তু এখন আমার আর পিছবার উপায় নেই।
–কেন?
–আমি যদি এখন পিছিয়ে যাই আমার বন্ধুর মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
-মানুষের মন অতটা ভঙ্গুর নয় যে, কারো সঙ্গে দেখা না হলে মনটা ভেঙে টুকরো হয়ে যাবে। আপনি কি শুধু সাহস দেখাবার জন্যে এ কাজ করেছেন? কাজটা ঠিক হচ্ছে কি না নিজেই একবার ভেবে দেখুন না।
–আমি–আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেবলই মনে হচ্ছে শীগগিরই আমার একটা বিপদ হবে। আপনি হয়তো ভাববেন আমি পাগলামি করছি। কিন্তু কেন যেন বারবার ঐ কথাই মনে হচ্ছে শুধু।-কেন বলুন তো?
–আপনার মনে হয়, আপনি যদি প্যারীতে নেমে আপনার বাবাকে টেলিগ্রাম করে নিয়ে আসেন তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। তিনি এসে পড়লে আপনার কোনো বিপদ হবে না।
–ঠিক বলছেন। আপনার কথা মতোই কাজ করব আমি।
ক্যাথারিন-এর মনে হলো এই মহিলার এখন একা থাকা দরকার।–আমি তাহলে এখন আসি। ডিনার খেতে ডাইনিং কোচে যাবেন তো?
-ইচ্ছে তো আছে। আবার হয়তো ডিনার বাস্কেটও নিতে পারি।
রুথ-এর কামরা থেকে করিডরে পা দিতেই ক্যাথারিন লক্ষ্য করল যে পাশের কামরার দরজাটা খুলে রুথ-এর মেইড কামরা থেকে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু ক্যাথারিনকে দেখেই সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল, মনে হলো কোনো কিছু দেখে সে চমকে উঠেছে। তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে সে পেছনের দিকে তাকালো কিন্তু কিছুই নজরে পড়লো না। এদিকে রুথ-এর মেইড দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে।
ক্যাথারিন এবার তার কামরার দিকে যেতেই দেখল, একটা কামরার দরজা খুলে একটি মেয়ে ক্যাথারিনের দিকে লক্ষ্য করছে। সে তাকাতেই তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দিল। কিন্তু মুখটা দেখে মনে হল চেনা কিন্তু মনে করতে পারল না কোথায় দেখেছে।
নিজের কামরায় ঢোকবার পরেও ওই সিল্ক কোট পরা মেয়েটির কথা মনে হচ্ছিল। সীটের ওপরে বসে একটা কুশন টেনে নিয়ে তাতে মাথা রেখে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল সে।
ট্রেনটা গেয়ার দ্য লায়ন স্টেশনে থামল। সঙ্গে সঙ্গে কামরা থেকে বেরিয়ে প্ল্যাটফর্মে নামল ক্যাথারিন। বাইরের ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ ভালো লাগলো তার।
হঠাৎ সে দেখল যে তার পূর্ব পরিচিত বান্ধবী জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ডিনার বাস্কেট নিচ্ছে।
ট্রেন ছাড়বার ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সে তাড়াতাড়ি নিজের কামরায় চলে এল। মিনিট কয়েক বাদেই ডিনারের ঘণ্টা বাজল। ক্যাথারিন একখানা ডিটেকটিভ উপন্যাস হাতে নিয়ে ডিনার কোচে গিয়ে দেখল, একটি টেবিলে একটি চেয়ারই শুধু খালি আছে। আর টেবিলের দ্বিতীয় চেয়ারে বসেছেন লম্বা গোঁফওয়ালা একজন ছোটখাটো লোক। বাধ্য হয়েই সেই খালি চেয়ারে বসলো ক্যাথারিন। ভদ্রলোকটি হেসে বললেন, আপনি বুঝি খুব ডিটেকটিভ বই পড়েন?