চিঠি আর নোট নিয়ে প্যাভেট তক্ষুণি বেরিয়ে গেল। ক্যাথারিন তার আসন্ন বিপর্যয়ের কথা ভাবছে যখন তখনই দরজায় নক করার শব্দ। কে?
–ভেতরে আসতে পারি কি স্যার?
–আসুন।
সঙ্গে সঙ্গে ঘরে মিঃ কিংটন। তাকে দেখে ক্যাথারিন বিস্মিত স্বরে বলল, মিঃ কিংটন যে! কি খবর?
–খবর আছে, স্যার। আমি আপনার শ্বশুর মশাইয়ের বার্তাবহ হয়ে এসেছি আজ।
–তা দাঁড়িয়ে কেন? বসুন। এবার বলুন কি বার্তা বহন করে এনেছেন।
মিঃ আলডিন একটি প্রস্তাব করেছেন আপনার কাছে।
–কি প্রস্তাব?
–প্রস্তাবটা বলতে একটু সংকোচবোধ করল কিংটন। আমার যদি কোনো অপরাধ হয় ক্ষমা করবেন। জানেন তো, বেতনভুক কর্মচারীকে মনিবের কথামতো চলতে হয়।
–আপনার সংকুচিত হবার কোন কারণ নেই। শ্বশুরমশাই যা বলেছেন আপনি নিঃসঙ্কোচে বলতে পারেন।
এবার অনেকটা সহজ হয়ে কিংটান বলল, মিঃ আলডিন বলেছেন, আপনি যদি ডিভোর্সের মামলাটা কনটেস্ট না করেন তাহলে উনি আপনাকে এক লাখ পাউণ্ড দিতে রাজী আছেন।
টাকার অঙ্কটা ভালোই। এতে আমার সমস্ত দেনা শোধ হয়ে আরও কিছু হাতে থাকবে। একটু চিন্তা করেই ক্যাথারিন স্থির করে ফেলল, মাননীয় শ্বশুরমশাইকে বলবেন যে ড্রেক ক্যাথারিন তার এই ঘুষ দেবার প্রস্তাবটাকে প্রত্যাখান করেছে।
-ধন্যবাদ, মিঃ ক্যামারিন। আপনার বক্তব্য শুনে আমার মনিব হয়তো খুশী হবেন না কিন্তু আমি এতে সত্যি খুব খুশী হয়েছি। আচ্ছা, এবার তাহলে আসি, স্যার। গুড় ইভনিং।
.
০৯.
ব্লু ট্রেন
স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসেছিল। ট্রেন ছাড়তে তখনও কিছু দেরি ছিল। হঠাৎ মিঃ আলডিনকে দেখে রুথ খুশী হয়ে বলল, বাবা তুমি যে স্টেশনে আসবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। তুমি বলেছিলে যে আজ সকালে একটা কনফারেন্স আছে।
–ঠিকই বলেছিলাম। কনফারেন্স সেরেই এলাম। তোমার সঙ্গে দেখা না করে কি আমি থাকতে পারি?
তুমি এত পরশ্রিম কর কেন বাবা? কি দরকার তোমার এত পরিশ্রম করার? তোমার কি আরও টাকার দরকার?
মিঃ আলডিন বললেন, টাকা রোজগারটা কেমন যেন নেশার মতো পেয়ে বসেছে আমায়। আমি জানি, আমার মতো ধনী পৃথিবীতে কমই আছে তবুও কেন যেন চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
রুথ বুঝল যে, অজ্ঞাতে সে বাবার দুর্বল স্থানে আঘাত করেছে। তাই সে কথাটা ঘুরিয়ে বলল, তুমি আসাতে আমার এত ভালো লাগছে যে তোমাকে তা বোঝাতে পারবো না। আরও ভালো লাগতো যদি তুমি আমার সাথে যেতে। কথাটা বলেই ভাবলো যে, বাবা সঙ্গে গেলে তো মুস্কিল তাই বাবার মনের কথা জানার জন্যে, তুমি কি আমার সাথে যেতে চাও, বাবা?
–গেলে মন্দ হতো না। কয়েকটা দিন বিশ্রাম হতো।
–রুথ তার মনের ভাব চেপে রেখে এমন ভাব দেখাল যে, সে যেন খুব খুশিই হয়েছে; তাহলে তো খুবই ভালো হয়। কিন্তু……
-”কিন্তু কি রুথ?
–তোমার ব্যাগ স্যুটকেশ তো দেখছি না!
আলডিন হেসে বললেন, না রুথ, আমার পক্ষে এখন লণ্ডন ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। আর সেগুলো অন্যকে দিয়ে হবে না। চলো ট্রেন ছাড়বার সময় হয়ে গেলো, এবার ট্রেনে উঠে বসা যাক।
–হ্যাঁ তাই ভালো চলো।
প্ল্যাটফর্মে এসে আলডিন বললেন, তোমার কামরাটা দেখে নিয়েছ তো?
–না, এখনও দেখিনি, তবে সেজন্য অসুবিধা হবে না। মিস ম্যাসনকে বলেছি সে যেন আমার কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেনের করিডোরে ঢুকেই কামরাটা দেখতে পেল রুথ। সে বাবাকে নিয়ে কামরায় ঢুকে পড়লো।
মিস ম্যাসন বললো, আপনার ড্রেসিং কেসটা সীটের নিচে রেখেছি। র্যাগের দরকার হবে কি?
-না, না এখন র্যাগের দরকার হবে না। তুমি গিয়ে বরং তোমার কামরাটা ঠিক করে নাও।
মিঃ আলডিন তার এ্যাটাচি কেস থেকে একখানা মাসিক পত্রিকা বার করে রুথ-এর সামনে রেখে বললেন, সময় কাটাবার জন্যে নিশয়ই কিছু আনোনি?
-তোমার দেখছি সব দিকেই নজর আছে, বাবা। সত্যিই আজ আমি কিছুই আনিনি।
–তুমি ফিরছ কবে?
–ফেরবার তারিখ ঠিক করিনি। তবে আশা করি মাস খানেকের মধ্যেই ফিরে আসবো।
–হ্যাঁ, তাই এসো। তুমি এলেই মামালাটা রুজু করা হবে। ও, আর একটা কথা, রুবীটা সেফ ডিপজিট ভল্ট-এ রেখে এসেছ তো?
-হ্যাঁ।
–ভালো করেছ। ও জিনিস নিয়ে ট্রাভেল করা উচিৎ নয়।
রুথ কিন্তু মিথ্যে বলল বাবাকে। আসলে সে রুবীটাকে সঙ্গে নিয়ে চলেছে এমন একটা কারণে, যা সে বাবাকে কিছুতেই বলতে পারবে না।
হঠাৎ এই সময় রুথ-এর বয়সী একটা মেয়েকে কামরার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে আলডিন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে স্যাভয় হোটেলে দেখেছি মনে হচ্ছে?
-হ্যাঁ, লণ্ডনে এলে আমি ওখানেই উঠি।
–তুমিও কি রিভিয়ারার যাত্রী?
–হ্যাঁ।
–তাহলে দয়া করে একবার ভেতরে এস আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিই।
মিঃ আলডিন-এর কথায় মেয়েটি দ্বিরুক্তি না করে কামরায় ঢুকে পড়ল। রুথ উঠে মেয়েটির হাত ধরে তার পাশে বসাল।
-এই আমার মেয়ে রুথ, মানে রুথ ক্যাথারিন।
–আর… আমার না ক্যাথারিন গ্রে।
আপনি কি রিভিয়ারায় বেড়াতে যাচ্ছেন?
–হ্যাঁ, একরকম তাই-ই। আমার এক পিসতুত দিদি আছেন ওখানে। তার বাড়িতেই যাচ্ছি আমি।
–এই প্রথম যাচ্ছেন, না আগেও গেছেন?
–এই প্রথম যাচ্ছি। দিদি আমাকে তার বাড়িতে যাবার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করে চিঠি লিখেছেন। আপনিও কি প্রথম যাচ্ছেন নাকি?