অসুস্থতাকে ঘৃণা করতেন অ্যামিয়াস, তাই শরীর খারাপ ভেতরে ভেতরে শুরু করা সত্ত্বেও কিছুই বললেন না মুখে।
ঘণ্টা পড়লো খাবার, যেটুকু বিষ কাছে ছিলো তাড়াতাড়ি করে তা অ্যামিয়াসের গ্লাসে ঢেলে দিয়ে চলে গেলেন এলসা।
(নিশ্চয়ই কোথাও ড্রপারটাকে পথে ফেলে দেন।)
ছায়ার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসায় মেরিডিথ শুধু চোখধাঁধানো আলো দেখতে পাচ্ছিলেন। ছবির দিকে তাকিয়ে বন্ধু হাত-ছড়িয়ে শুয়ে আছে। এবং এক অসাধারণ তীব্রতা চোখের দৃষ্টিতে।
কিছু কি বুঝতে পেরেছিলেন অ্যামিয়াস! কি ছিলো মনে জানি না, তবে মিথ্যে বলেনি চোখ আর ঝুলে পড়া হাত।
পোয়ালরা দেওয়ালের গায়ে ঝোলানো ছবিটা দেখিয়ে বললো, এই ছবিটা সম্পর্কে বোঝা উচিত ছিলো আমার, কারণ অসাধারণ ছবিটা–নিহত মানুষটি এঁকেছেন তাঁর নিজের খুনীর ছবি। এটা একটা ছবি যাতে তার প্রেমিককে মেয়েটি মরতে দেখছে।
.
পঞ্চম অধ্যায়
পরিণাম
এক ভয়াবহ হিমশীতল নিস্তব্ধতা নেমে এলো এর পরেই। ঘরের মানুষের মাথাগুলো শুধু বোঝা যাচ্ছিলো অস্তগামী সূর্যের শেষ ক্ষীণ আলোয়।
একটু নড়েচড়ে বসে এলসা ডিটিশাম বললেন, মেরিডিথ বাইরে নিয়ে যান ওদের। আমি একটু একা থাকতে চাই মিঃ পোয়ারোর সঙ্গে।
এলসা সবাই চলে যাবার পর বললেন, খুব চালাক আপনি, মিঃ পোয়ারো তাই না?
উত্তর দিলো পোয়ারা, না। আবার এলসা বললেন, আপনি কি চান? স্বীকারোক্তি?
হা–পোয়ারো মাথা নেড়ে জানালো।
আমি সেরকম কিছুই করবো না। দুজনে এখানে বসে যা বলবো একান্তভাবে এটা আমাদের মুখের কথা হবে।
ঠিক তাই।
আপনি কি করতে চান আমি তা জানতে চাই।
পোয়ারো বললো, আমি আপ্রাণ বোঝাবার চেষ্টা করবো কর্তৃপক্ষকে ক্যারোলিন ক্রেলকে মরণোত্তর রায়দানে ঘোষণা করা হোক নিরপরাধ।
এলসা বললেন-কি আশ্চর্য নিরপরাধ ঘোষণা করতে হবে অপরাধ না করা সত্ত্বেও? …যাই হোক কি ভাবছেন আমার ব্যাপারে?
আমার সিদ্ধান্ত জানাবো উপযুক্ত লোকেদের সামনে তারপর যা করবেন তারা। তবে আপনার বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রমাণ নেই আমার হাতে, শুধু তো অনুমানে কিছু করা যায় না। তাছাড়া বর্তমান মর্যাদার কথা আপনার চিন্তা করে কিছু করতে সাহস পাবে কিনা পুলিশ বলা যায় না।
পরোয়াও করি না আমি। জীবনের জন্যে লড়তে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভালোই লাগবে আমার।
হয়তো আপনার স্বামীর ভালো লাগবে না।
স্বামীর জন্যে চিন্তা করবো আপনি কি মনে করেন?
না মনে করি না তা। কারণ আপনি শুধু নিজেকে ছাড়া সারা জীবনে আর কারুর কথাই তো চিন্তা করলেন না গভীর ভাবে। হয়তো খুশি হতেন করলে।
আমার জন্যে আপনি এতো কেন চিন্তা করছেন?
এই জন্যে বাছা, অনেক কিছু শেখা তোমার বাকী আছে।
আবার কী বাকী আছে শেখার?
দয়া, মমতা, সহানুভূতি…শিখতে হবে এগুলো। শুধু দুটো জিনিস তুমি জানো প্রেম, ঘৃণা।
বিষ চুরি করতে ক্যারোলিনকে দেখে ভেবেছিলাম ও চায় আত্মহত্যা করতে। কিন্তু পরদিন আমি পেলাম স্বামী-স্ত্রীর কথা শোনার পর। আমাকে তাড়িয়ে দেবে অ্যামিয়াস ছবি আঁকা হয়ে গেলেই। এবং আমার জন্যে ক্যারোলিন দুঃখ প্রকাশ করলো। সহানুভূতির ওর কাছ থেকে পেতে ঘৃণা করি। ফলে অ্যামিয়াসকে বিষ খাওয়ালাম। ওকে তিল তিল করে চোখের সামনে মরতে দেখে কি উল্লাস আমার হয়েছিলো তা বোঝাতে পারবো না…আমিয়াস মরছে দেখলাম।
হঠাৎ হতাশায় হাত দুটো ছড়িয়ে দিয়ে এলসা বললেন, তখন আমি বুঝিনি যে নিজেকে আমি খুন করছি…ওকে নয়। …তারপর ফাঁদে পড়লো ক্যারোলিন…ভাল হলো না সেটাও। ওকে আঘাত দিতে পারলাম না ঠিক মতো…ও বোধ হয় আমার নাগাল ফসকে গেলো। এমন জগতে ক্যারোলিন আর অ্যামিয়াস দুজনে চলে গেলো যেখানে ওদের ধরতে পারি না আমি। কিন্তু মরলো না ওরা, আমি মরলাম।
উঠে দাঁড়ালেন এলসা ডিটিশাম। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, আবার আমি মরলাম।
সদ্য ফুটে উঠতে শুরু করছে হলঘরে এমন দুজন যুবক-যুবতীর পাশ দিয়ে চলে গেলেন উনি।
গাড়ির দরজা শোফার খুলে দিলো। গাড়িতে বসলেন লেডী ডিটিশাম। ফারের কম্বল দিয়ে শোফার পা ঢেকে দিলো।