এই যুক্তিটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে–কিন্তু শিল্পীদের যাঁরা চেনেন, জানেন তারা। এবং প্রমাণ পাওয়া যায় এই কথার অ্যামিয়াস আর মেরিডিথের কথাবার্তা থেকে– অ্যামিয়াস কিছুটা বিব্রত হয়ে মেরিডিথের কাঁধে চাপড়ে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন–পরে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। একটা ছবি উনি আঁকছেন, দুটি মানসিক বিকারগ্রস্ত মহিলার আবর্তে পড়ে ব্যাঘাত ঘটাতে দিতে রাজী ছিলেন না অ্যামিয়াস শিল্প সৃষ্টিতে। তার কাছে ছবিটাই বড় ছিলো।
সত্যি কথাটা এলসাকে বললে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতো ছবি আঁকা। সেই জন্যে তার কথায় কোনো প্রতিবাদ করতে চাননি। ছবিটা দু-একদিনে হয়ে গেলে সত্যি কথাটা বলা যাবে। কথা দেবার ব্যাপারে মেয়েদের কাছে সহজ যেমন ছিলেন অ্যামিয়াস, তেমনি ভাঙতেও।
প্রথমে এলসাকে ভাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন অ্যামিয়াস। তাকে সাবধানও করে দিয়েছিলেন। মেয়েটি কিন্তু পুতুল হয়ে গেলো নিয়তির হাতের। আর অ্যামিয়াস মেয়েদের ব্যাপারে বেশ উদার ছিলেন। এবং এও জানতেন এলসাও ফিরে যাবে মোহ কেটে গেলে।
আসলে স্ত্রী ছাড়া আর কারুর কথা অ্যামিয়াস কখনো গভীরভাবে ভাবেননি। তাকে কখনও মাথা ঘামাতে হয়নি স্ত্রীকে নিয়ে। এলসাকে ভাগাবেন ছবি আঁকাটা হয়ে গেলেই এবং যেমন আছেন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে তেমনি থাকবেন অ্যামিয়াস এই ধরনের ভাব নিয়ে যা খুশি তাই করে যাচ্ছিলেন। ঐ ধরনের মেয়ে ঘটিত ব্যাপারের পর অতীতেও ক্যারোলিন তো ওঁকে ক্ষমা করেছেন।’
কিন্তু মনে হয় আমার অ্যামিয়াস আগের দিন সন্ধ্যেবেলায় সত্যিই চিন্তায় পড়েছিলেন। হয়তো কিছু বোঝাতে চেয়েছিলেন রাতে ক্যারোলিনকে। যাই হোক সারারাত ছটফট করে কাটাবার পর স্ত্রীকে সত্যি কথাটা বলেন সকালে প্রাতঃরাশের পর। তার মোহ কেটে গেছে এলসার প্রতি। ওর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না ছবিটা শেষ হলেই।
আর ক্যারোলিন ক্ষেপে গিয়েছিলেন ওই কথা শুনেই, তুমি আর তোমার মেয়ে মানুষগুলো এই কথাটায় এলসাকে আর পাঁচ জন মহিলাদের সমপর্যায়ভুক্ত করা হয়েছিলো। ক্যারোলিন শেষে এ কথাও বলেছিলেন, একদিন তোমায় আমি খুন করবো।
স্বামীর প্রতি এলসার এই আচরণে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ক্যারোলিন। যখন হলঘরে ফিলিপ ক্যারোলিনকে বিড়বিড় করে বলতে শুনেছিলেন এ নিষ্ঠুরতা ভারী, তখন কিন্তু এলসার কথা তিনি চিন্তা করছিলেন।
লাইব্রেরী থেকে অ্যামিয়াস বেরিয়ে এসে ডাকলেন এলসাকে শেষ করতে হবে ছবি। জানতেন না উনি লাইব্রেরীর বাইরের দিকের জানলার তলায় বসে স্বামী স্ত্রীর সব কথাগুলো শোনেন এলসা গ্ৰীয়ার। এলসা আলোচনা সম্বন্ধে যা বলেছেন সবটা তার সত্যি নয়।
এবার কল্পনা করুন নিজের সম্বন্ধে স্বকর্ণে নিষ্ঠুর সত্যটা শুনলে কী অবস্থা হয়।
মেরিডিথের ল্যাবরেটরির সামনে আগের দিন বিকেলবেলায় সকলে বেরিয়ে আসছিলে, মেরিডিথ তখন দরজার দিকে পেছন ফিরে মুখোমুখি বসে গল্প করছিলেন এলসার সঙ্গে। তার মানে ক্যারোলিন ঘরের ঘরের ভিতর গল্প করছিলেন এলসা গ্ৰীয়ার পুরোটা দেখেছিলেন।
বিষ চুরি করতে ক্যারোলিনকে দেখেও এলসা কিছু বলেননি। লাইব্রেরীর ঘরের জানলার তলায় বসে স্বামী স্ত্রীর কথা শোনার সময় তার মনে পড়ে যায় ঐ বিষ চুরির কথা।
কামান বাগানে যাবার জন্যে এলসাকে ডাকলেন অ্যামিয়াস। এলসা ঘরে এলেন সোয়েটার আনবার অজুহাত দেখিয়ে। মেয়েদের পক্ষে জানা সহজ মেয়েদের গোপন রাখার জায়গাগুলো, তাই সাবধানে ফাউন্টেন পেনে কালি ভরার ডুপার দিয়ে হাতের দাগ না লাগিয়ে বিষটা বের করে নিয়েছিলেন এলসা।
তারপর কামান বাগানে যথারীতি আসা। এবং বিয়ারের সঙ্গে প্রথম সুযোগেই মিশিয়ে খাইয়ে দিলেন অ্যামিয়াসকে ওটা।
মনে মনে ওদিকে ভীষণ অস্থির ক্যারোলিন, ফিরতে দেখে এলসাকে (এবার সত্যিই গরমজামা সে নিতে এসেছিলেন) কামান বাগানে তাড়াতাড়ি গেলেন। স্বামী যা করতে চাইছেন এলসাকে নিয়ে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক আচরণ, উনি সহ্য করতে পারছেন না ক্যারোলিন বললেন। অ্যামিয়াস বাধা পেয়ে ক্ষেপে লাল। জানিয়ে দিলেন পরিষ্কার এলসাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেবেন ছবি শেষ হলেই।…ঠিক হয়ে গেছে সব…গোছগাছের ব্যাপারটা ওর, আমি কথা দিচ্ছি ফেরৎ পাঠিয়ে দেবো ওকে।
এবং ফিলিপ মেরিডিথের পায়ের শব্দ ঠিক সেই মুহূর্তে পেয়ে বেরিয়ে আসেন ক্যারোলিন, মুখ বাঁচাবার জন্যে অ্যাঞ্জেলার কথা বলেন বিড়বিড় করে, যাতে মনে করে সবাই অ্যাঞ্জেলাকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছিলো। এবং, ওকে আমি ফেরৎ পাঠিয়ে দেবো। কথাটা হয়ে দাঁড়ালো, আমি দেখবো ওর গোছগাছের ব্যাপারটা।
এই সময় এলসা হাসি হাসি মুখে ফিরছিলেন। শুরু হয়ে গেলো ছবি আঁকাও। ক্যারোলিনের ঘরে কোনাইনের শিশি পাওয়া যাবে ফলে তাকেই যে সবাই সন্দেহ করবে এ বিষয়ে এলসা নিশ্চিন্ত ছিলেন। আরও একটা সুযোগ করে দিলেন ক্যারোলিন নিজেকে জড়াবার।-বাড়ি থেকে ঠান্ডা বিয়ার আনলেন, স্বামীকে ঢেলেও দিলেন।
এক চুমুকে অ্যামিয়াস সবটা খেয়ে বলেছিলেন–সব কিছু আজ বিস্বাদ লাগছে। তার অর্থ ক্যারোলিনের দেওয়া বিয়ারের আগেও কিছু একটা তিনি খেয়েছিলেন এবং তখনও তার খারাপ স্বাদটা মুখে ছিলো। ফিলিপ ব্লেক আর একটা কথা অ্যামিয়াসের পা টলার কথা বলেছেন। তার মানে আস্তে আস্তে আগে খাওয়া কোনাইনের ক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।