ক্যারোলিন তারপরেই অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে ভীত হয়ে উঠেছিলেন, দাদার প্রতি যদি অতি ভালোবাসর ফলে স্বীকার করে নেয় সে দোষ। তাই অ্যাঞ্জেলাকে কোনো গতিকে ইংল্যান্ডের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ক্যারোলিন নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
.
চতুর্থ অধ্যায়
সত্য
জানলার দিক থেকে ধীরে ধীরে বাকীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে ঘৃণা। উনি বললেন। অন্ধ, নির্বোধ সবাই আপনারা কেন এটা বুঝতে পারছেন না, আমি খুন করলে স্বীকার করতামই। দিদিকে আমার জন্যে কষ্ট পেতে দিতাম না।
পোয়ারো বললো, কিন্তু একটা অবৈধ কিছু বিয়ার নিয়ে আপনি করেছিলেন।
আমি? কিছু মেশানোর কথা বলছেন বিয়ারে?
পোয়ারো বললো মেরিডিথের দিকে ফিরে, শুনুন মিঃ ব্লেক, পরদিন সকালে আপনি ল্যাবরেটারিতে বলেছিলেন না বেড়াল ঢোকার কথা?
হা, সেটাতো মাত্র একটা বেড়াল।
জানলেন কি করে সেটা, দেখে ছিলেন কি নিজের চোখে? না, তবে ফাঁক ছিলো যেটুকু জানলা তাতে বেড়াল ঢুকতে বড়ো জোর পারে। পারে না মানুষ।
কিন্তু মিঃ ব্লেক শার্সিটা তো নামাল ওঠানো যায়। তাহলে শুনুন-ধরুন খুনের ঘটনার দিন কেউ আপনার ল্যাবরেটারিতে সকালবেলায় ঢুকছিলো, কেউ যদি অ্যাল্ডারবেরি থেকে এসে থাকেন তবে ফিলিপ, এলসা ক্যারোলিন বা অ্যামিয়াস হবেন না, কারণ ওঁরা তখন কে কি করেছিলেন প্রমাণ আছে তার। দুজনে বাকী থেকে যায়–মিস উইলিয়ামস আর অ্যাঞ্জেলাও যাবেন। বাড়ি থেকে আপনি বেরোতেই দেখা হয়েছিলো মিস উইলিয়ামসের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলাকে উনি নাকি খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। অ্যাঞ্জেলা বলছেন সমুদ্রে ঐ সময় স্নান করছিলেন। অথচ ওঁকে মিস উইলিয়ামস জলে দেখতে পাননি। অতএব হতে পারে সাঁতার কেটে অ্যাঞ্জেলা এখানে এসে কিছু নিয়ে যান ল্যাবরেটারি থেকে।
দৃঢ় স্বরে অ্যাঞ্জেলা বললেন, আমি ও ধরনের কিছু করিনি…অন্তত…না…।
বিজয়ীর হাসি হেসে পোয়ারো বলে উঠলো, আজ, তাহলে আপনার মনে পড়েছে দেখছি কথাটা আমায় তো আপনি বলেও ছিলেন একটা বিশ্রী রসিকতা জামাইবাবুর সঙ্গে করার জন্যে আপনি ঐ যাকে বলে বিড়ালের খাদ্য খানিকটা তাই সরিয়ে রাখবেন–মানে…।
ঝট করে মেরিডিথ বলে উঠলেন, ভ্যালেরিয়ান নিশ্চয়ই ভ্যালেরিয়ান।
হা, ঠিক তাই। এবং আপনি সেই জন্যেই বেড়ালের কান্ড মনে করেছিলেন ওটাকে। শব্দ শুনে ল্যাবরেটারিতে নেমে এসে সম্পূর্ণ ভ্যালেরিয়ানের গন্ধ অজান্তেই পেয়ে বিড়ালের কথা স্বাভাবিকভাবে আপনার মনে পড়েছিলো। ভ্যালেরিয়ান খেতে বেড়াল ভালোবাসলেও, এমনিতে খুব খারাপ ওটার স্বাদ। তারই খানিকটা অ্যাঞ্জেলা জামাইবাবুর বিয়ারের সঙ্গে চেয়েছিলেন মেশাতে…।
আশ্চর্য হয়ে অ্যাঞ্জেলা বলে উঠলেন, ওটা কি ঠিক ঘটেছিলো এই দিনই, এখন মনে পড়ছে ওটা চুরি করার কথা, বিয়ারের বোতলে মেশানোর পর মুহূর্তে দেখেছিলো দিদি আমাকে, সেটাও মনে পড়ছে কিন্তু ঘটনাকে তার সঙ্গে জড়ানোর কথা কখনও চিন্তা করিনি। করবেনই বা কেন…ঐ দুটো ঘটনার মধ্যে আপনার মনে তো কোনো ক্ষোভ ছিলো না। সম্পূর্ণ আলাদা দুটো ঘটনা। একটা ছেলেমানুষী দুষ্টুমি, অন্যটা গভীর ট্রাজেডী। আপনিই অথচ বলেছিলেন, চুরি করেছিলাম আমি ইত্যাদি ইত্যাদি, জামাইবাবুর ড্রিঙ্কের সঙ্গে মেশাবার জন্যে। বললেন যে আপনি তো মিশিয়ে ছিলেন।
বলিনি, তার কারণ আমি ওটা করিনি। যখন খুলছিলাম বোতলের মুখটা এসে যায় দিদি। আহ, আর ভেবে নিলো দিদিও আমি করেছি।
অ্যাঞ্জেলা একটু থেমে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন আবার, সবাই তো আপনারা তাই মনে করেছেন? বিশ্বাস করুন জামাইবাবুকে আমি খুন করিনি। করলে বন্ধ করে থাকতাম না মুখ।
করোনি নিশ্চয়ই বোকারা ছাড়া একমাত্র একথা ভাবতে পারে না কেউ। পোয়ারোর দিকে রেগে তাকালেন মিস উইলিয়ামস।
পোয়ারো খুবই নিরীহ ভাবে বললো, বোকা নই আমি এবং সে কথা আমিও ভাবিনি। কে খুন করেছে অ্যামিয়াস ক্রেলকে আমি তা জানি ভাললাভাবেই।
একটু থামলেন। প্রমাণ করা হয়েছে যে ভাবে ঘটনা বাস্তবে তা না হলে মেনে নেওয়া যায় না কোনো প্রমাণকেই। নেওয়া যাক না কেন অ্যাল্ডারবেরির ঘটনাটাই। সেই চিরাচরিত কাহিনী দুটি মহিলা আর একজনের পুরুষের এটা প্রায় আমরা মেনেই নিয়েছি যে অ্যামিয়াস ক্রেল নিজের স্ত্রীকে অন্য একটি মহিলার জন্যে পরিত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। আমি কিন্তু বলছি–তার ওই রকম কোনো ইচ্ছেই ছিলো না।
দুর্বলতা আর মোহ মহিলাদের প্রতি তার বরাবরই ছিলো। কিন্তু চিরস্থায়ী হতো না কোনোটাই। যে সব মহিলার সঙ্গে আগে জড়িয়ে ছিলেন উনি তাদের অভিজ্ঞতা ছিলো কিছুটা, তাই বেশী কিছু অ্যামিয়াসের কাছ থেকে দাবি করতেন না। বয়স কম এবারকার মেয়েটির আশা-আকাঙ্ক্ষাও তার ভিন্নতর। বলি ক্যারোলিনের ভাষাতেই, ভীষণ ভাবে মেয়েটি ছিলো একনিষ্ঠ। কাটাকাটা কথাবার্তা হলে কি হবে, ভয়ংকর একমুখী একটা মন ছিলো ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই অল্পবয়সী মেয়েটির। যেভাবে স্বামীকে ক্যারোলিন ভালোবাসতেন, সেই গভীরতা এই মেয়েটির মধ্যেও দেখে তিনি আশংকিত হয়ে উঠেছিলেন, হয়তো তাকে স্বামী ছেড়ে এই মেয়েটিকে বিয়ে করতেও পারেন।
প্রশ্ন করতে পারেন এবার আপনারা, কেন অ্যামিয়াস ছলনা করবেন না তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। উত্তর আমার-ঐ ছবিটি। উনি চাইছিলেন শেষ করতে ছবিটা।