স্বামী স্ত্রী তুমুল ঝগড়া হলো পরদিন লাইব্রেরীর ঘরে। হল ঘর থেকে ফিলিপ ব্লেক শুনতে পেলেন ক্যারোলিন বলছেন, তোমাকে একদিন খুন করবো আমি। বাইরের চত্বর থেকে মিস এলসাও কথাটা শুনলেন। অ্যামিয়াস ক্রেল তারপর আরও খানিকটা রাগারাগির পর ছবি আঁকতে চলে গেলেন এলসাকে নিয়ে।
মনস্তাত্ত্বিকতার বিচারে এতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু নানারকম গরমিল আসছে তার পরেই।
বিষ চুরি যাওয়ার কথা জেনে মেরিডিথ ব্লেক ভাইকে জানাচ্ছেন। অ্যাল্ডারবেরিতে চলে আসছেন আলোচনা জন্যে। শুনতে পেলেন কামান বাগানের কাছে এসে স্কুলে অ্যাঞ্জেলাকে পাঠাবার ব্যাপার নিয়ে তর্ক চলছে স্বামী স্ত্রীতে। খটকা লাগছে ঐখানেই। মিনিট কুড়ি আগে সামান্য, স্বামী স্ত্রীতে বিয়ের ব্যাপার নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়ে গেছে। খুন করাকরির কথাও উঠেছে। তারপরে কি করে তুচ্ছ ঘরোয়া কথা বলতে স্ত্রী যান।
মেরিডিথের দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বললোবলি আপনার ভাষাতেই আপনি বলতে শুনেছিলেন অ্যামিয়াসকে, ঠিক হয়ে গেছে সব…আমি দেখবো ওর গোছ-গাছের ব্যাপারটা। তাই না?
হা, ঐ ধরনের কথা বটে, মেরিডিথ বললেন।
পোয়ারো বলল ফিলিপের দিকে তাকিয়ে-তাই কি শুনেছিলেন আপনিও।
ফিলিপ ভ্রূ-কুঁচকে বললেন, আপনি না বলা পর্যন্ত মনে পড়েনি। কী একটা কথা হয়েছিল গোছ-গাছের।
মিঃ ক্রেল বলেছিলেন–মিসেস ক্রেল কিন্তু নয়?
অ্যামিয়াস বলেছিলো। তবে নিষ্ঠুরতা হবে মেয়েটার ওপর এ ধরনের কথা ক্যারোলিন বলেছিলো। কিন্তু ও নিয়ে এখন কেন আলোচনা হচ্ছে?
পোয়ারো বললো, আপনারা কেন আমার আপত্তির কারণটা দেখতে পাচ্ছেন না? অ্যামিয়াস ক্রেল কেন মেয়েটির গোছ-গাছের ব্যাপার দেখবেন? ঐ কাজটা তো মেয়েদের কাজ, বাড়িতে আছেন মিসেস ক্রেল, গভর্নেস আছেন, অতএব বুঝতে পারছেন তো…?
ফিলিপ অধৈর্য হয়ে বললেন, কি হয়েছে তাতে, খুনের কোনো সম্পর্ক নেই এর সঙ্গে।
মনে করেন না আপনি?
আর একটা দেখুন ঘটনা…স্বামীকে একটু আগে খুন করে দেবার ভয় দেখান যিনি তিনিই বা কি করে ভার নেন ঠান্ডা বিয়ার পরিবেশন করার?
হঠাৎ মেরিডিথ বলে উঠলেন, মাথায় খুন করার পরিকল্পনা থাকলে ওটাই তো স্বাভাবিক, তাই তো মানুষ করে–গোপন করে মনের ভাব।
আপনি তাই মনে করেন তো? বিষ দেবার ব্যাপারে স্বামীকে মনস্থির করে নিয়েছিলেন মিসেস ক্রেল। কামান বাগানেই স্বামী বিয়ার রাখে। ঔ বোতলে চাইলে বিষ দিয়ে রাখতে পারতেন নিশ্চয়ই।
আপত্তি জানালেন মেরিডিথ, না করতেন না তা, যদি খেয়ে ফেলে অন্য কেউ?
হ্যাঁ, পারতেন এলসা। আচ্ছা স্বামীকে খুন করার সিদ্ধান্ত আপনার মতে নিয়ে নেবার পর ও কি খুন না করার ব্যাপারে এলসাকে বিবেকের দিক দিয়ে ক্যারোলিন খুব একটা চিন্তা করতেন।
আচ্ছা আলোচনা থাক, এ নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকা যাক প্রকৃত তত্ত্বের মধ্যেই। স্বামীকে ঠান্ডা বিয়ার ক্যারোলিন পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে নিজেই ফিরে গিয়ে নিয়ে এলেন, তাই নয় শুধু স্বামীকে ঢেলে দিলেন নিজের হাতে-ওটা খেয়ে অ্যামিয়াস বলেছিলেন সব কিছুই খেতে আজ খারাপ লাগছে।
তারপর বাড়ির ভেতরে মিসেস ক্রেল চলে যান। লাঞ্চ খান, স্বাভাবিক ছিলেন বেশ। বলা হয়েছে একটু চিন্তান্বিত দেখা গিয়েছিলো তাকে। কোনো লাভ হয় না তাতে আমাদের, কারণ কোনো স্থির মানদণ্ড নেই খুনীর আচরণ সম্বন্ধে শান্তও থাকতে পারে খুনী, আবার হতে পারে উত্তেজিতও।
আবার কামান বাগানে যান খাবার পর, দেখেন গিয়ে স্বামী মৃত…এবং যা ভেবে রেখেছিলেন বলা যেতে পারে তাই হয়েছে দেখে প্রকাশ করেন উত্তেজনা, কথা বলেন ডাক্তার দেখাবার। সবাই তো জানেন এটা? এ ছাড়াও এখন কিছু নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে.যদি আপত্তি না থাকে আপনার, পোয়ারো শেষের প্রশ্নটি করলো গভর্নেস মিস উইলিয়ামসকে।
মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো মিস উইলিয়ামের, বললেন, কথাটা গোপন রাখার ব্যাপারে কোন চুক্তি তো আমার হয়নি আপনার সঙ্গে। ফলে…।
গভর্নেস আস্তে আস্তে যা বলেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি পোয়ারো করলো।
নড়ে উঠলেন এলসা ডিটিশাম। তাকিয়ে থেকে হাঁ করে অবিশ্বাসের সুরে বললেন, ওটা আপনি নিজে দেখেছিলেন?
লাফিয়ে উঠলেন ফিলিপ, তাহলে তো চুকেই গেলো সব।
তার দিকে নিরীহ ভাবে তাকিয়ে বললো পোয়ারো–তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তীক্ষ্ণ গলায় অ্যাঞ্জেলা আপত্তি জানালো, একথাটা আমি বিশ্বাস করি না। তারপর গভর্নেসের দিকে বিষ দৃষ্টিতে তাকালো।
উত্তেজিত মেরিডিথ, একমাত্র নির্বিকার মিস উইলিয়ামস বসে আছেন ঘাড় শক্ত করে। না, আমি ওটা নিজের চোখে দেখেছিলাম।
কিন্তু আপনার তো ওটা শুধু মুখের কথা, ধীরে ধীরে বললো পোয়ারো।
হ্যাঁ মুখেরই কথা, আমার কথায় মিঃ পোয়ারো কেউ সন্দেহ করুক আমি এটা পছন্দ করি না।
পোয়ারো মাথা নীচু করে বললো, সন্দেহ করছি না। যা বলেছেন আপনি সেটাই ঘটেছিলো। আর বুঝতে পেরেছি আপনার কথা থেকেই ক্যারোলিন ক্রেল খুনী নয়।
জন ব্যাটারি এই প্রথম মুখ খুললেন–আপনি কেন এ কথা বলছেন মিঃ পোয়ারো জানতে আমি আগ্রহী।
জানাবো নিশ্চয়ই। কি দেখেছিলেন মিস উইলিয়ামসনা, বিয়ারের বোতল থেকে ক্যারোলিন হাতের ছাপ মুছে সাবধানে স্বামীর হাতের ছাপ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ারের বোতলে লক্ষ্য করুন। অথচ গ্লাসে কোনাইন ছিলো–বোতলে নয়। বিষ বোতলে ছিলোই না। এবং ক্যারোলিন সে কথা জানতেন না।