বুঝলাম, কে তার পরে?
ফিলিপের বড় ভাই। এক ছোট খাটো জমিদার। লোকটা একটু ঘরকুনো ধরনের, থাকতো। বাড়িতেই।
একটা সুর গুনগুনিয়ে উঠলো মনের মধ্যে। ওটাকে অতি কষ্টে পোয়ারো চাপা দিলো। সব সময়ে ছেলে ভুলানো ছড়া চিন্তা করা ওর উচিত নয় আদৌ। অথচ এই এক রোগ হয়েছে ইদানীং তার। ছড়ার সুরগুলো ওর মনের মধ্যে যখন তখন ঝংকার দিয়ে ওঠে, বাজারে এই শুয়োর ছানাটা গিয়েছিলো, বাড়িতেই রয়ে গেল ঐ শূয়োর ছানাটা…।
আপন মনে বিড়বিড় করে পোয়ারো বললো, রয়ে গেলো বাড়িতেই হা, কি যেন বলছিলেন?
বলছিলাম এর কথাই তো…সে এক কাণ্ড বাঁধিয়ে বসেছিলো ওষুধপত্র গাছপালা মিলিয়ে। রসায়ন চর্চা করতো। ওর ছিলো ওটাই নেশা। দাঁড়ান মনে করে দেখি নামটা। মিল ছিলো সাহিত্যিকের নামের সঙ্গে। হ্যাঁ পড়ছে মনে…মেরিডিথ..মেরিডিথ ব্লেক। এখনও বেঁচে আছে কিনা জানি না।
কে তারপর?
তারপরে? সব গণ্ডগোলের দলে ছিলো তারপরের জনই। এই মামলা যে মেয়েটাকে নিয়ে এলসা গ্ৰীয়ার।
মাংসের কোর্মা খেয়েছিলো এই শূয়োর ছানাটা। আপন মনে পোয়ারো বিড়বিড় করে বললো।
পোয়ারোর দিকে বড় বড় চোখ করে স্যার মন্টেগু তাকালেন। এ কথা মানতে হবে ওর মা-বাবা মেয়েটাকে ভালোমতই খাইয়েছিলো মাংস। দারুণ নাছোড়বান্দা মেয়ে। তার তিনবার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো তখনই। ওর কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের আদালতে যাওয়া আসা করাটা ছিলো জলভাতের মতো সহজ। তবে স্বামী পাল্টেছে প্রত্যেকবারই ভালো মক্কেল ধরে আগের বারের চেয়ে। উনি সম্প্রতি লেডি ডিটিশাম। ওর নাম পাবেন গুজব রটানো পত্রিকার যে কোনো একটার পাতা খুলুন।
আর বাকি দুজন?
বাড়ির গভর্নেস তো একজন। মনে নেই নামটা কাজের মহিলা বেশ। টমসন…জোনস্..এই ধরনের নাম ছিলো। বাচ্চা মেয়ে আর একটা, সৎ বোন ক্যারোলিন ক্রেলের। তখন বড়জোর পনের বছর বয়েস ছিলো। মেয়েটার খুব নাম হয়ে গিয়েছিলো। সাক্ষ্য দিয়েছিলো গুছিয়ে অতীতের অনেক কথা স্মরণ করে করে। ওয়ারেন–অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন। একবারে সাড়া জাগানো মহিলা হয়ে উঠেছে এখন। কদিন আগেই দেখা হয়েছিলো।
উঁউঁ করে কাদা শূয়োর ছানার মতো এই মেয়েটি তাহলে ছিলো না…।
পোয়ারোর দিকে অবাক হয়ে স্যার মন্টেগু তাকিয়ে রইলেন। নীরস গলায় তারপর বললেন, তাকে অবশ্য সারা জীবনই কাঁদতে হয়েছে, মুখটাকে একেবারে বিকৃত করে দিয়েছে মুখের এক পাশে একটা বিশ্রী দাগ।…আপনি সব ব্যাপারটা বুঝতে পারছি জানতে চান, পোয়ারো তাই না? আপনি পাবেন সব খবরই, চিন্তা করবেন না।
উঠে দাঁড়ালো পোয়ারো, ধন্যবাদ। আমাকে অনেক উপকার করলেন। যদি তার স্বামীকে মিসেস ক্রেল হত্যা না করে থাকেন। স্যার মন্টেগু মাঝপথে বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, আঃ উনিই করেছেন বলছি, বিশ্বাস করুন আমার কথা। তার এই মাঝপথের ব্যাঘাত পোয়ারো গ্রাহ্য না করে শেষ করলো নিজের আগেকার কথাটা–তবে যুক্তিগ্রাহ্য এটাই বলে মনে হয় যে কেউ না কেউ এই পাঁচজনের মধ্যে তা করেছে।
একজন এদের মধ্যে কাজটা করে থাকতে পারতো, কিন্তু করবে কেন খুঁজে পাচ্ছি না তার কোনো কারণ, কোনো কারণ নেই। আমি আসলে পুরোপুরি নিশ্চিত খুন এরা কেউই করেনি। মশাই পোকাটাকে মাথা থেকে তাড়ান তো।’
পোয়ারো মাথা নেড়ে স্যার মন্টেগুর কথার উত্তর না দিয়ে একটু হাসলো।
.
দ্বিতীয় অধ্যায়
সরকার পক্ষের কৌসুলী
মিঃ ফগ এককথায় উত্তর দিলেন-নরকের কীটের মতো পাপী।
ভাবুকের মতো পোয়ারো তাকিয়ে রইলো ব্যারিষ্টার মিঃ ফগের চাচাছোলা কথায় তার মুখের দিকে।
স্যার মন্টেগুর, কিংস কাউন্সেল কোয়ান্টিন ফগের সঙ্গে মিল নেই একটুও। কর্মশক্তি, সম্মোহিনী শক্তি, স্বেচ্ছাচারিতার মূর্ত প্রতীক যেন স্যার মন্টেগু । একটু খোঁচা দিয়ে লোককে কথা বলার অভ্যেস আছে। দ্রুত নাটকীয় পরিবর্তন আচরণে ঘটিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পটু অপরের ওপর। শহুরে সুন্দর দেখতে, খুব মিষ্টি ব্যবহার এই মুহূর্তে, ম্যাজিকের মতো পর মুহূর্তেই রূপান্তর ঘটিয়ে ধূর্তের হাসি চাপা ঠোঁটে ফুটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন যেন তোমার ওপর।
রোগামতোন কোয়ান্টিন ফগ, চেহারা ফ্যাকাসে, মনে হয় না ব্যক্তিত্ব বলতে কিছু আছে বলে। শান্ত ভাবে প্রশ্ন করেন, ভীষণ অভাব উত্তাপের–তবে ধীর স্থির এবং অবিচল আসল ব্যাপারে। যদি ছুঁচালো মুখ তলোয়ারের সঙ্গে স্যার মন্টেগুকে তুলনা করা যায় তবে তুরপুনের সঙ্গে করা যায় ফগকে। ফুটো করে চলেন ধীর ভাবে। ইনি অর্জন করেননি বটে সেরকম সাড়া জাগানো খ্যাতি, তবে নাম যশ আছে পয়লা সারির আইনজ্ঞ বলে। মামলায় সাধারণতঃ হারেন না।
পোয়ারো তাকে খুব চিন্তান্বিত ভাবে লক্ষ্য করে চলেছিলো। সে বললো, তাহলে তাই মনে হয়েছিলো আপনার?
মাথা নেড়ে সায় দিলেন ফগ, আপনার আসামীর কাঠগড়ায় মহিলাকে দেখা উচিত ছিলো, বুড়ো হাম্পি রুডলফ আমার সিনিয়র, জেরায় জেরায় একেবারে কিমা করে ছেড়েছিলেন মহিলাকে।
ফগ একটু থেমে আবার বললেন, তবে যেন পুরো ব্যাপারটা ভালো ছিলো বড় বেশি মাত্রায়।
মিঃ ফগ কিছু মনে করবেন না, ঠিক ধরতে পারলাম না আপনার শেষ কথার মানেটা।
ফগ সুন্দর ভ্রূ-জোড়া কুঁচকে নরম আঙুল ঠোঁটে বোলাতে বোলাতে বললেন, কথাটা বলি কিভাবে? একটা চলতি কথা আছে ইংরেজদের মধ্যে, সেটা একমাত্র ভালো বোঝে ইংরেজরাই বসে থাকা পাখিকে গুলি করা–আমার বক্তব্য এই কথাটা বললে ঠিক বোঝানো যায়। কিছু কি বুঝতে পারছেন?