ফিলিপ ব্লেক বললেন, আমরা সবাই জানি ঘটনাটা, আপনি বলছেন। আপনি কিছু না ভেবেই কথাটা বললেন। কোনো ঘটনার সম্বন্ধে স্বীকৃত বয়ানটাই সত্যি হবে যে সব সময়ে এমন কোনো কথা নেই। যেমন মিঃ ব্লেকের কথা ধরা যাক–অপছন্দ করতেন উনি ক্যারোলিন ক্রেলকে। ওটা স্বীকৃত বয়ান আপনার মনোভাব সম্বন্ধে। কিন্তু যার সামান্যতম জ্ঞান আছে মনঃস্তত্ত্ব সম্বন্ধে তারা কিন্তু ধরে নেবে উল্টা কথাটাই, ভীষণভাবে আপনি চাইতেন ক্যারোলিনকে, শুধু সমালোচনা করতেন না পাওয়ার দুঃখে। আবার মেরিডিথ ব্লেকের কথা দেখুন উনি মনে মনে বহু বছর ধরে ক্যারোলিনের প্রতি আসক্ত ছিলেন। উনি ক্যারোলিনের প্রতি নিজের বিবৃতিতে অ্যামিয়াসের ব্যবহারের প্রতিবাদ জানাতেন সে কথা বলেছেন। ভালো করে বিবৃতিগুলো পড়ে দেখলে জানা যাবে সুন্দরী তরুণী এলসার মতো আবির্ভাবের পরেই সব যেন শুরু করলো গোলমাল হতে। শ্রদ্ধা ভালোবাসা এতোদিনের অন্য পাত্রীতে সমর্পিত হলো।
প্রতিবাদ করার মতো মেরিডিথ শব্দ করলেন, মিষ্টি করে লেডী ডিটিশাম হাসলেন।
বলে চললো পোয়ারো, শুধু দৃষ্টান্ত দেবার জন্যে এগুলো আমি বললাম। খুনের কোনো সম্পর্ক নেই এর সঙ্গে। ঠিক আছে অতীত জগতে এবার ফেরা যাক। …বলে নিই কিভাবে করেছি এটা..আমি ক্যারোলিন ক্রেলের উকীলদের সঙ্গে আর সরকার পক্ষের সহকারী উকীলের সঙ্গে ক্রেল পরিবারের সঙ্গে পরিচিত বৃদ্ধ সলিসিটার আর উকীলের মুহুরীর সঙ্গে, আর তদন্তকারী মামলায় পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। এবং কথা বলেছি প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচজনের সঙ্গে, ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন। আমি এবার মহিলাটির একটি পূর্ণাবয়স্ক ছবি আঁকার চেষ্টা করছি ঐসব তত্ত্বের ভিত্তিতে, যা জেনেছি তা হলো…ক্যারোলিন ক্রেল একবারের জন্যেও তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রতিবাদ করেননি (ঐ চিঠিটা মেয়েকে লেখা ছাড়া)।
কোনো রকম ভয়ের চিহ্ন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ করেননি তিনি, আগ্রহ দেখাননি কোনোরকম। পরাজিতের মনোভাব আগাগোড়া নিয়ে, আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভাগ্যের কাছে। উনি হাজতে থাকাকালীনও খুব শান্ত ভাবে মেনে নিয়েছিলেন এই বিপর্যয়কে। বোনের কাছে একমাত্র লেখা চিঠিটাতে নিয়তির এই নিষ্ঠুর পরিহাসের কথা তিনি বলেছিলেন। অথচ আমি কথা বলেছি যাদের সঙ্গে, প্রত্যেকেই তারা (মাত্র একজন বাদে) বলেছেন অপরাধী ক্যারোলিন ক্রেল।
মাথা নাড়লেন ফিলিপ, ও দোষী নিশ্চয়ই।
পোয়ারো বললো, রায় অন্যদের মেনে নেওয়াটা কাজ নয় আমার। আমি নিজে সাক্ষ্য প্রমাণগুলো পরীক্ষা করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে মানসিকতা ছিলো তথ্যটা তার সঙ্গে মেলে কতটা শুধু তাই পরীক্ষা করে আমি দেখেছি। এরজন্য পড়েছি পুলিশের ফাইল, প্রত্যক্ষদর্শীর পাঁচজনের বিবৃতি নিয়েছি, যেগুলোকে অবান্তর মনে করেছিলো পুলিশ সেগুলোকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি, এবং জোগাড় করেছি নতুন অনেক তথ্যও, যেমন–(ক) যেগুলোকে পুলিশ অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিলো এমন কিছু আলোচনা এবং ঘটনা, (খ) কি মনে করেছিলেন বা ভেবেছিলেন ক্যারোলিন ক্রেল সে সম্বন্ধে অভিমত বিভিন্ন লোকের (আইনতঃ যদি গ্রাহ্য নয় ওগুলো) এবং (গ) কিছু তথ্য যা পুলিশের কাছে ইচ্ছাকৃত ভাবে চেপে যাওয়া হয়েছিলো।
আমি নিজেই এখন মামলাটার বিচার করতে পারি। মনে হয় এমনিতে খুন করার পক্ষে ক্যারোলিনের যথেষ্ট কারণ ছিলো, স্বামীকে উনি ভালোবাসতেন, প্রকাশ্যে স্বামী অন্য স্ত্রীলোক আসক্তির কথা বলেছেন এবং নিজেই স্বীকার করেছেন স্ত্রী তিনি খুব ঈর্ষাপরায়ণ।
কার্য সাধনোপায়ের প্রসঙ্গে আসা যাক। উদ্দেশ্য থেকে একটা খালি সেন্টের শিশি যাতে কোনাইন ছিলো ক্যারোলিনের আলমারীতে তা পাওয়া গেছে। তাঁরই আঙুলের ছাপ আবার শিশির গায়ে। ক্যারোলিন স্বীকারও করেছিলেন পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে ওটা এই ঘর থেকে নিয়েছিলেন। সেদিন সবার শেষে এই ল্যারেটারি থেকে বেরিয়ে ছিলেন এবং একমাত্র হাতের যে ছাপ কোনাইনের বোতলে পাওয়া গেছে তাও ক্যারোলিনেরই। দেখা যাচ্ছে সব মিলিয়ে উনি চুরি করেছিলেন কোনাইন। আর একটা পরোক্ষ প্রমাণ আছে সেদিন আমায় মেরিডিথ ব্লেক বলেছিলেন, মনে পড়ছে দাঁড়িয়েছিলাম এইখানে, জুই ফুলের গন্ধ খোলা জানলা দিয়ে ভেসে আসছিলো। কিন্তু সেপ্টেম্বর ছিলো সেই মাসটা জুন-জুলাই হলো জুই ফুলের সময়।
অতএব বোঝা যাচ্ছে ক্যারোলিন বিষ চুরি করার মতলবটা আঁটার পর ব্যাগের মধ্যে থেকে জুইফুলের সেন্টের শিশিটা বের করে জানলা গলিয়ে সেন্টটা ফেলে দেন, তারপর বিষ ভরে নেন খালি শিশিটাতে।
মিঃ মেরিডিথ ব্লেককে কদিন আগে বলেছিলাম আমি কে কি ভাবে সেই দুর্ঘটনার দিন ঘর থেকে বেরিয়েছিলো সেই দৃশ্যটার পুনরাবৃত্তির অভিনয় করতে। ওকে জুই ফুলের সেন্ট মাখানো রুমাল নেড়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় শোকাতেই ওঁর মনে পড়ে যায় পূর্বস্মৃতি। মাঝে মাঝে বুদ্ধির চেয়ে প্রাণশক্তি অনেক বেশি কাজ করে।
আসা যাক এবার সেই সর্বনাশা দিনটার সকালবেলায়। মিস এলসা গ্ৰীয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন আমিয়াসকে বিয়ে করার কথা। চরম বিপদের মুখে ক্যারোলিনকে ঠেলে দিয়ে সে কথা আমিয়াস স্বীকারও করলেন, এ ব্যাপারে অনেকই সাক্ষ্য দিয়েছেন।