কি আশ্চর্য? হা, কিন্তু কি করে জানলেন আপনি?
আপনাকে শুধু দেখাতে চাই, তুচ্ছ ব্যাপারেও খুব আমি কেমন জাদু দেখাতে পারি। অনেক কিছু না বললেও আমি জানতে পারি।
.
তৃতীয় অধ্যায়
পুনর্গঠন
হ্যাণ্ডক্রশ ম্যানরের ল্যাবরেটারিতে বিকেলের রোদের আলোয় সবাই আবার এসে সমবেত হচ্ছেন। কাটতে চাইছে না বাড়িটার পরিত্যক্ত রূপটা।
মেরিডিথ ব্লেক একটু অস্বস্তির মধ্যে এলোমেলো ভাবে কালার সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ বলে উঠলেন এক সময়ে, জানো বাছা, তুমি কয়েকটা দিক দিয়ে একেবারে তোমার মায়ের মতো, আবার একেবারেই নও কয়েকটা ব্যাপারে।
প্রশ্ন করলো কালা–মিল কোথায় আর অমিল কোথায়-শুনি বলুন না।
রঙ, হাঁটা চলা মায়ের মতো, তবে…বলি কিভাবে…অনেক বেশি স্পষ্ট।
ফিলিপ ব্লেক জানলা দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন বাইরে, বিরক্তির রেখা ফুটে উঠছে কপালে, এর কি মানে হয়? এমন সুন্দর সন্ধ্যে বেলায় শনিবারের… ।
সবাইকে শান্ত করলেন এরকুল পোয়ারো এক কথায়, আমি ক্ষমা চাইছি…এভাবে গলফ খেলার সময় নষ্ট করার জন্যে…তবে আপনার প্রিয় বন্ধুর মেয়ের জন্যে…খেয়াল করে ওর কথা…।
ঘোষণা করলো খাস-খানসামা এসে–এসেছেন মিস ওয়ারেন। ওকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মেরিডিথ নিয়ে এলেন। অ্যাঞ্জেলা সময় নষ্ট করেও এসেছো, খুশী হলাম ভারী।
ছুটে গেলো কার্লা, এই যে অ্যাঞ্জেলা মাসী। তোমার প্রবন্ধ পড়লাম আজকের টাইমস পত্রিকায়। কী ভালোই না লাগে নামী আত্মীয় থাকলে, লম্বা মতো একজন, চৌকো চোয়ালওলা যুবককে দেখিয়ে বললো, এই হলো জন ব্যাটারি। আমি আর ও…ইচ্ছে আছে বিয়ে করবার…
অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন বললেন, আঃ…জানতাম না তাতো…।
এগিয়ে গেলেন মেরিডিথ আর একজন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাতে–এই যে মিস উইলিয়ামস দেখা কত বছর পরে…।
রোগা, দুর্বল অনমনীয় দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে এলেন গভর্নেস, একবার পোয়ায়োকে দেখে নিয়ে দামী সুট-প্যান্ট পরা লম্বা মতো একজনের দিকে তাকালেন।
এগিয়ে এসে অ্যাঞ্জেলা হাসি মুখে বললেন, নিজেকে আবার স্কুলের মেয়ে মনে হচ্ছে।
মিস উইলিয়ামস বললেন, আমার গর্ব হয় তোমার জন্যে বাছা, আমার মুখ রেখেছো তুমি। এই তো কালা, তাই না। নিশ্চয়ই ওর মনে নেই আমাকে…তখন বড্ড ছোট ছিলো…।
ফিলিপ অস্থির হয়ে উঠেছেন–এসব কী হচ্ছে? আমাকে তো কেউ বলেনি।
এটার নাম দিয়েছি আমি…অতীত ভ্রমণ। আসুন, বসি সবাই মিলে। কাজ শুরু হবে শেষ অতিথি এসে গেলেই। উনি এলেই…নামানো হবে আত্মাকে, পোয়ারো বললো।
বিরক্ত হয়ে ফিলিপ বললো, কি ছেলেমানুষী হচ্ছে এসব? নিশ্চয়ই আপনি কোনো চক্র ডাকতে যাচ্ছেন না প্ল্যানচেটের।
না, না, নিশ্চয়ই না। আলোচনা করবো শুধু অতীতের ঘটনা নিয়ে। আবির্ভাব হবে না ভূত-টুতের ঠিকই। তবে বলতে পারে কে এই মুহূর্তে এঘরে অ্যামিয়াস আর ক্যারোলিনের আত্মা নেই?
যা তা কি সব বকছেন, চেঁচিয়ে উঠতেই ফিলিপ খাস-খানসামা এসে লেডী ডিটিশাম এসেছেন জানালো।
লেডী ডিটিশাম এলেন, মুখের রেখায় ঔদ্ধত্য আর বিরিক্তির ক্ষীণ আভাস পরিস্ফুট। একটু হাসলেন মেরিডিথের দিকে তাকিয়ে শীতল দৃষ্টিতে। অ্যাঞ্জেলা আর ফিলিপের দিকে তাকিয়ে বসলেন একটা আলাদা চেয়ারে গিয়ে। দামী হারের বাঁধনটা গলা থেকে আলগা করে দিতেই লুটিয়ে পড়লো পেছন দিকে হা করে কার্লা দেখছিলো এলসাকে। তার জীবনে এই মহিলাটির জন্যেই ঐ সর্বনাশ নেমে এসেছিলো। তবে ঘৃণার বদলে তার দৃষ্টিতে ছিলো কৌতূহল।
এলসা বললো, দুঃখিত মিঃ পোয়ারো একটু দেরী হয়ে গেলো।
আপনি এসেছেন এটাই ম্যাডাম বড় কথা।
জোরে নাক টানতেই সিসিলিয়া উইলিয়ামস এলসা তাকালেন ওর দিকে, অবজ্ঞার ভাব। বললেন, অ্যাঞ্জেলা চিনতে পারতাম না তোমাকে। বলো তো কতোদিনের কথা, ষোলো বছর।
পোয়ারো কাজে লাগালো এই সুযোগটাকে, হ্যাঁ আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি যোবলা বছর আগেকার ঘটনা নিয়েই, বলে নিই তার আগে আমরা কেন জড়ো হয়েছি এখানে। কালার অনুরোধ সংক্ষেপে এবং তার দায়িত্ব নেওয়ার কথাটা বলে ফিলিপ আর মেরিডিথের তরফ থেকে ঝড় উঠতে যাচ্ছে প্রতিবাদের দেখে পোয়ারো তাড়াতাড়ি বললো, আমি কাজের ভারটা নিয়েছি–কাজও শুরু করেছি সত্যটা আবিষ্কার করার জন্যে।
পোয়ারোর কথা শুনতে শুনতে কার্লা অলক্ষে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলো আগন্তুক পাঁচজনের মুখের ওপর এদেরই মধ্যে একজন। কেউ খুন করেছিলো ওর বাবাকে।
কল্পনা করতে লাগলো কালা–কাউকে না কাউকে এরা খুন করেছেন–রাগে পাগল হয়ে গিয়ে ফিলিপ ব্লেক একজন মহিলার গলা টিপে ধরেছেন, একটা সিদেল চোরকে মেরিডিথ রিভলভার দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, হঠাৎ চলে গেলো গুলি, ভেবে চিন্তে অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন গুলি করছেন কাউকে…সিলেক মোড়া সোফায় বসে প্রাচীন দুর্গে হুকুম দিচ্ছেন এলসা হতভাগাটাকে দুর্গের পাঁচিল থেকে ছুঁড়ে ফেলে দাও তলায়। …নানা বিচিত্র এই ধরনের কল্পনার জগতে কালার মন ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর একবার ভাবলো যেন ও প্রশ্ন করছে-মিস উইলিয়ামস কাউকে কখনো খুন করেছেন আপনি, উত্তর দিচ্ছেন উনি, মন দিয়ে অংক কষে, আজে বাজে চিন্তা না করে।
নাঃ পাগল হয়ে যাবো এসব চিন্তা করলে, পোয়ারোর কথাই তার চেয়ে শোনাই ভালো, সবই তো জানেন উনি।
বলে চলেছেন পোয়ারো, আমার কাজ এটাই…অতীত কাগজে উল্টো গিয়ারে চালিয়ে চলে গিয়ে যা ঘটেছিলো আসলে তা আবিষ্কার করা।