প্রচ্ছন্ন গর্ব জেগে উঠলো ফিলিপ ব্লেকের–অশেষ ধন্যবাদ। দেখলাম লিখতে গিয়ে মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক কথাই, কি আশ্চর্য, তাই না?
বর্ণনা দিয়েছেন অপূর্ব সুন্দর, তবে বাদ পড়ে গেছে কিছু, তাই না?
বাদ পড়ে গেছে? ভ্রু কুঁচকালের ফিলিপ ব্লেক।
সব সময়ে আপনার বর্ণনা আপনি খোলা মন নিয়ে পুরোপুরি লেখেননি, গলাটা পোয়ারোর ক্রমশঃ কঠিন হয়ে আসছে, খবর পেয়েছি আমি যে কোনো এক গ্রীষ্মকালের রাতে খুবই উদ্ভট সময়ে আপনার ঘর থেকে মিসেস ক্রেলকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিলো।
অনেকক্ষণ পরে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে ফিলিপ বললেন, কে বলেছে আপনাকে?
সেটা বড় কথা নয় কে বলেছে। আমি যে জানি এটাই বড় কথা।
নিস্তব্ধতা নেমে এলো আবার, মনঃস্থির করে ফিলিপ ব্লেক বললেন, কেমন করে আপনি জানি না হঠাৎ ব্যক্তিগত ব্যাপারটা আমার জেনে ফেলেছেন, হ্যাঁ, স্বীকার করছি আমি, আমার বিবৃতির সঙ্গে অসঙ্গতি আছে এর। যদিও অসঙ্গতি নেই আমার মতে। ফলে বাধ্য হচ্ছি আমি সত্যি কথাটা বলতে।
আমার মনে কিছুটা বিদ্বেষ ভাব ছিলো ক্যারোলিন ক্রেলের প্রতি। তবে আকর্ষণ বোধ করতাম সেই সঙ্গে ওর প্রতি। হয়তো প্রথমটার জন্ম দিয়েছিলো শেষোক্তটিই। ওর প্রভাবটাকে আমার ওপর ঘৃণা করতাম এবং সেই জন্যেই ওর খারাপ দিকগুলো নিয়ে খালি আঘাত করবার চেষ্টা করতাম। পছন্দ করিনি ওকে, অথচ যেকোনো মুহূর্তে ওর সঙ্গে প্রেম করা খুবই সহজ ব্যাপার ছিলো আমার পক্ষে। আমি ওকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতাম। অথচ আমাকে ও পাত্তা দেয়নি। ফলে কোনো দিনও ওকে আমি ক্ষমা করিনি।
যখন ঐ এলসা মেয়েটার প্রেমে মজলো অ্যামিয়াস তখন সুযোগ আমার এসে গেলো। বিনা কারণেই সম্পূর্ণ আমি আমার ভালোবাসার কথা ক্যারোলিনকে বলে ফেললাম। ও শান্ত ভাবে বলেছিলো, হ্যাঁ, তা তো আমি বরাবরই জানি। মহিলার কী ঔদ্ধত্য।
অবশ্য জানতাম আমিও যে ও ভালোবাসে না আমাকে। তবে ঐ অ্যামিয়াসের মতিগতি দেখে বেশ খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলো ক্যারোলিন। মেয়েদের জয় করা সহজ এই রকম মানসিকতার। ও আমার কাছে সেই রাতে আসতে রাজী হয়েছিলো। এবং এসেওছিলো।
এবার চুপ করলো ফিলিপ। বোধ হয় পরের কথাগুলো বলতে বেশ ওর কষ্ট হচ্ছে।
ও এসেছিলো আমার ঘরে। তারপর খুব ঠান্ডা গলায় আমার আলিঙ্গনের মধ্যেই বলেছিলো ভালো নয় এটা। সে এক পুরুষে আসক্তা ও অ্যামিয়াস ক্রেলের, তা সে হোক ভালো অথবা মন্দ, ও যে ভালো ব্যবহার আমার প্রতি করেনি সেটা স্বীকার করলো এবং এটাও বললো যে ওর ছিলো না কোনো উপায় চাইলো ক্ষমা।
তারপর চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। আশ্চর্য হবেন শুনলে মিঃ পোয়ারো ওর প্রতি একশোগুণ ঘৃণা বেড়ে গেলো। শুনলে কি আপনি আশ্চর্য হবেন যে আমি কখনই ক্যারোলিনকে ক্ষমা করতে পারিনি? আমাকে যে ভাবে ও অপমান করেছিলো–এবং পৃথিবীতে আমার বিশেষ করে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে যে ভাবে ও খুন করেছিলো তার জন্যে ।
কাঁপতে কাঁপতে রাগে ফিলিপ ব্লেক বলে উঠলেন, কিছু বলতে চাই না এ ব্যাপারে শুনছেন? আমি কোনো উত্তর দেবো না। এবার আসুন। আর কোনোদিনও এই ধরনের প্রশ্ন করবেন না আমাকে।
.
০২.
আপনার অতিথিরা সেদিন কে কি ভাবে এবং কার পর কে বেরিয়েছিলেন ল্যাবোরেটরি থেকে সে সম্বন্ধে আমি জানতে চাই কিছু।
মিঃ মেরিডিথ ব্লেক প্রতিবাদ করে উঠলেন–কিন্তু মিঃ পোয়ারো ষোলো বছর পর…কি করে তা সম্ভব মনে থাকা? সবার শেষে ক্যারোলিন বেরিয়েছিলো আপনাকে তো বলেছি।
আপনার ও বিষয়ে ভুল হচ্ছে না তো…?
না…অন্ততঃ…তাই তো মনে করি…
চলুন ওখানে যাওয়া যাক। পুরো মাত্রায় আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, বুঝছেন তো।
মেরিডিথ আপত্তি জানাতে জানাতেই পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন। দরজার তালা খুলে, খুলে দিলেন জানলার পাল্লাগুলোও। পোয়ারো বেশ মেজাজের মাথায় বলতে শুরু করলো–বন্ধু এবার মনে করুন গাছপালা থেকে ওষুধ তৈরি করার ব্যাপারটা আপনার অতিথিদের বলা হয়ে গেছে। একটু ভাবুন চোখ বন্ধ করে…।
মেরিডিথ বাধ্য ছেলের মতো তাই করলেন। একটা রুমাল পকেট থেকে বের করে ধীরে ধীরে পোয়ারো ওটা নাড়াতে লাগলেন ব্লেকের নাকের সামনে, একটু কুঁচকে উঠলো নাকটা, বিড়বিড় করে মেরিডিথ শুরু করলেন বলতে-হা…হা…কী আশ্চর্য মনে পড়ে যাচ্ছে সব কথা…একটা হালকা কফি রঙের পোষাক ক্যারোলিন পরেছিলো। বেশ ক্লান্ত লাগছিলো ফিলিপকে…সব সময়েই ও মনে করতো কোনো মানে হয় না আমার এই নেশাটার।
পোয়ারো বললো, চিন্তা করুন এবার, ঘর থেকে আপনি বেরিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যাচ্ছেন এখান থেকে লাইব্রেরীতে…সবার আগে ঘর থেকে কে বের হলো–আপনি কি?
এলসা আর আমি। আগে দরজা দিয়ে ও বেরিয়ে গেলো। ওর খুব কাছেই ছিলাম আমি কথা বলতে বলতে ওর সঙ্গে বাকীদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আবার বন্ধ করতে হবে তো দরজাটা। তারপরে ফিলিপ এলো। অ্যাঞ্জেলা ফিলিপের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলো। অ্যামিয়াস এবং সব শেষে ক্যারোলিন ওদের পেছনেই ছিলো।
এ বিষয়ে তাহলে কোনো দ্বিধা নেই আপনার তো–সবার পরে ক্যারোলিন বেরোয়? কি করেছিলেন উনি তা কি দেখেছিলেন?
মাথা নাড়লেন মেরিডিথ, না, ঘরের দিকে আমি পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বোঝাচ্ছিলাম এলসাকে কোন্ লতা তুলতে হয় পূর্ণিমার দিন…যত সব কুসংস্কারের গল্প। বেরিয়ে এলো ক্যারোলিন যেন ব্যস্ত একটু…তালা দিলাম দরজায়। মেরিডিথ কথা শেষ করে চোখ খুললেন, রুমালটা পকেটে ভরছিলো পোয়ারো। বেশ বিরক্ত হয়ে নাক টেনে মেরিডিথ বললেন মনে মনে, এ লোকটা কেন আবার সুগন্ধী ব্যবহার করে। মুখে বললেন, ওরা এইভাবেই বেরিয়েছিলো –এলসা, আমি, ফিলিপ, অ্যাঞ্জেলা আর ক্যারোলিন, আপনার কি এতে কিছু লাভ হবে?