ঐ ভাবেই তাহলে ব্যাপারটাকে আপনি নিয়েছেন?
বলুন না অন্য কিভাবে নেওয়া যায়? যদি আমার মা করে থাকেন ওটা, তবে এই পাঁচ জনের মধ্যে করেছেন কেউ না কেউ। এবং আমি তার কারণও চিন্তা করে দেখেছি।
আহ! ব্যাপারটা ভারী আশ্চর্যের তো। বলুন শুনি।
না, না, শুধুই তত্ত্ব ওগুলো। যেমন ধরুন ফিলিপ ব্লেক–উনি ব্যবসা করেন শেয়ারের। প্রাণের বন্ধু বাবার হয়তো ওঁকে বিশ্বাসও করতেন আমার বাবা। শিল্পী বেশ অসাবধানী হয় টাকা পয়সার ব্যাপারে। ঝাটে পড়ে হয়তো ফিলিপ টাকা নিয়েও থাকতে পারেন বাবার কাছ থেকে। কিছু সইও করিয়ে নিয়ে থাকতে পারেন বাবাকে দিয়ে, তাহলে হয়তো সত্যি কথাটা প্রকাশ হয়ে পড়তো এবং তাকে বাঁচাতে পারতো বাবার মৃত্যুই। মনে হচ্ছে এই ধরনের কথা।
দেখছি খুব অযৌক্তিক চিন্তা করেননি। আর কি?
ঐ এলসার ব্যাপারটা। এখানে বলেছেন ফিলিপ ব্লেক যে বিষ নিয়ে কারসাজি বাবার ব্যাপারে নাকি বড় বেশি মাথা ঘামিয়ে ছিলেন এলসা, কথাটা তো সত্যি বলে আমার মনে হয় না। ধরুন এলসাকে আমার মা বললেন বাবাকে ডিভোর্স দেবেন না কিছুতেই। তাহলে যাই বলুন না কেন যে বড়লোকী ভাব এলসার মধ্যে আছে তার জন্যে সে বিবাহ চাইবে সম্মানজনক ভাবে। এবং খানিকটা ঐ বিষের জোগাড় করে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করতো মাকে। হয়তো ক্যারোলিনের ক্ষতি না করে ভাগ্যদোষে বাবার ক্ষতি করে দিলো।
না, খুব ভুল চিন্তা করেননি এবারও আপনি। আর কি?
মানে, ধারণা হয়েছিলো আমার…মেরিডিথও এটা করে থাকতে পারেন।
তাই নাকি, মেরিডিথ ব্লেক?
হা। দেখুন খুনী খুনী মনে হয় ওঁর কথাবার্তা শুনলে। হয়তো মনে হবে না বাইরে থেকে কারণ খুব চাপা লোক উনি। যাকে উনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তাকে বাবা বিয়ে করে নিয়েছিলেন। বিষ তৈরি করতেন মেরিডিথ। হয়তো কাউকে মারার জন্যেই ওগুলো উনি তৈরি করতেন। কি হয় বিষ খেলে এই সব ব্যাখ্যা করে নিজেকে উনি চেয়েছিলেন সন্দেহের অতীত করে রাখতে। হয়তো উনি ফঁসী কাঠে আমার মাকে ঝোলাতে চেয়েছিলেন, কারণ মা ওঁকে অনেককাল আগে প্রত্যাখ্যান করেন। অনেক সময় মানুষ উল্টোপাল্টা কথা বলে যার সঙ্গে কোনো সঙ্গতি থাকে না তার চরিত্রের। এ-ও তো হতে পারে তিনি নিজেকেই ওটা লেখার সময় বোঝাতে চেয়েছেন।
পোয়ারো বললো, অন্ততঃ এ ব্যাপারে ভুল করেননি আপনি সব সময় লেখাগুলোকে সত্যি বলে নেওয়া চলে না। ইচ্ছে করেই ভুল পথে চালাবার জন্যে মিথ্যে কথা বলা হয়ে থাকতে পারে।
হা, জানি এবং আমার মাথায় এটাও আছে।
আর ভেবেছেন কিছু।
ধীরে ধীরে বললো কালা, আমি মিস উইলিয়ামসের কথা এগুলো পড়ার আগে চিন্তা করেছিলাম। স্কুলে অ্যাঞ্জেলা চলে যাবার ফলে চাকরী চলে যায় মহিলার। এবং যদি হঠাৎ অ্যামিয়াস মারা যান তবে স্কুলে যেতে নাও হতে পারে অ্যাঞ্জেলাকে। আমি কিন্তু বলতে চাইছি স্বাভাবিক মৃত্যুর কথাই। এবং যদি বিষ চুরির ব্যাপারটা মেরিডিথ না জানতে পারতেন তবে মৃত্যুকে ওই ভাবেই চালানো হতো, সর্দিগর্মি বা ঐ জাতীয় কোনো কারণে মারা গেছে। চাকরি হারাবার ভয়ে মানছি কাউকে খুন করার যুক্তিটা টিকবে না ধোপে। তবে সামান্য কারণে এর তো খুন হয়েছে এর আগে।
আমার এটা পড়ার আগে মনে হয়েছিলো তাই। কিন্তু তেমন তো মনে হয় না মিস উইলিয়ামসকে। তিনি একটুও অযোগ্য নন…।
তা তো ননই। এখনও বেশ চটপটে আর বুদ্ধিমতী ভদ্র মহিলা।
জানি। দেখাও যায় সেটা। ওকে মনে হয় খুব বিশ্বাসীও। আর আমাকে সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে। আপনি তো সবই জানেন…পারেন তোতা বুঝতেও। সব সময়ে আপনি তো বলছেন প্রকাশ করতে চান প্রকৃত সত্যটাকে। মনে হয় আমার এবার আমরা সত্যটা পেয়েছি। বিশ্বাস করতে চান বলেই কখনো মিথ্যের ওপর জীবনের ভীত গড়া উচিত নয়। ঠিক আছে মেনে নিচ্ছি আমি নির্দোষ ছিলেন না আমার মা। মনের দুর্বলতার আর বাঁচাবার জন্যেই আমাকে মিথ্যে চিঠি লিখেছিলেন। বিচার করছি না তার আমি। মানুষের জেলে কি হয় তা জানা নেই আমার। মরীয়া হয়ে বাবার জন্যে ওটা করেও থাকতে পারেন মা, তাকে আমি দোষ দিচ্ছি না। আবার ঐ ধরনের প্রাণশক্তিতে ভরপুর বাবাকেও দেবো না দোষ। বোধ হয় ওঁর উপায় ছিলো না…একজন অতো বড় শিল্পী, বাবার অনেক কিছুই ক্ষমা করা যায়।
পোয়ারো বললো, তাহলে…সন্তুষ্ট তো আপনি?
সন্তুষ্ট। কার্ল লেমারচেন্ট বললো। চেঁচিয়ে উঠলো প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে।
ঝুঁকে পড়ে পোয়ারো হাত বুলিয়ে কালার পিঠে সান্ত্বনা দিলো। শুনুন, যখন লড়াই করা ঠিক দরকার আপনি তখনই লড়াই চাইছেন শেষ করতে বিশেষ করে যখন আমি এরকুল পোয়ারো ভালোভাবে ঘটনাটাতে বুঝতে শুরু করেছি।
হাঁ করে তাকালো কার্লা পোয়ারোর দিকে, মাকে ভালোবাসতেন মিস উইলিয়ামস, নিজের চোখে উনি দেখেছেন আত্মহত্যা বলে চালাবার জন্যে যা করেছিলেন মা। যদি আপনি বিশ্বাস করে থাকেন ওঁর…।
উঠে দাঁড়ালো পোয়ারো, সেটা এই জন্যে দেখেছিলেন যে আপনার মা স্বামীর আঙুলের ছাপটা বিয়ারের বোতলে লাগাচ্ছিলেন বিয়ারের বোতলে মনে রাখবেন–ঐ একটা ঘটনাই আমাকে স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে নিজের স্বামীকে আপনার মা খুন করেননি।
.
দ্বিতীয় অধ্যায়
পাঁচটা প্রশ্ন পোয়ায়োর
০১.
মিঃ পোয়ারো বললেন গলায় বিরক্তির সুর ফিলিপ ব্লেকের ট্র্যাজেডী সম্বন্ধে ক্রেল পরিবারের যা লিখে দিয়েছেন ধন্যবাদ তার জন্যে।