আমার জীবনের সবকিছু ছিলো দিদি আর জামাইবাবু। অথচ আমি একেবারেই ওদের কথা চিন্তা করতাম না, গুরুত্ব দিইনি এলসা গ্ৰীয়ারের আবির্ভাবটাকেও। এবং ও বোকা মনে হতো, আর তেমন কিছু আহামরি নয় দেখতেও। এক ধনী মেয়ের ছবি আঁকছে জামাইবাবু, ব্যাস আমি ক্ষান্ত ছিলাম এইটুকুই জেনে।
লাঞ্চ খাবার পর একদিন বসে আছি চত্বরে, এমনি সময় ওদের ঝঞ্ঝাটের ব্যাপারটা প্রথম কানে এলো আমার, শুনতে পেলাম এলসা বলছে সে বিয়ে করবে অ্যামিয়াসকে। আমার খুব হাস্যকর মনে হয়েছিলো ব্যাপারটা। হ্যান্ডসে মনে আছে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে জামাইবাবুকে এ নিয়ে আমি প্রশ্ন করেছিলাম।
কেন বলছে এলসা তোমাকে ও বিয়ে করবে? ও তো পারে না তা করতে। দুটো বউ তো লোকের থাকতে পারে না। তোমাকে জেলে দিয়ে দেবে।
ক্ষেপে লাল জামাইবাবু, কি করে এ সব কথা তোমার কানে যায়? লাইব্রেরীর জানলা দিয়ে বলেছিলাম আরো সেই শুনে ক্ষেপে গিয়ে আমাকে স্কুলে পাঠাবার কথা সে বললো। কাজ নেই কোনো কেবল আড়িপাতা পরের কথায়। জামাইবাবু বলেছিলো।
আমি খুব অপমানবোধ করেছিলাম জামাইবাবুর কথায় তবুও আমি রাগের চোটে বলেছিলাম, এলসা ওই ধরনের অসভ্য কথা, বলবে কেন?
জামাইবাবু বলেছিলো–ওটা ঠাট্টা, আমি মেনে নিয়েছিলাম জামাইবাবুর কথাটা, তবে বিশ্বাস করিনি পুরোপুরি।
এলসাকে ফেরার পথে ধরলাম, জামাইবাবুকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাকে এলসা বিয়ে করবে বলছে, তার মানে কি, ও তাতে বললো ওটা ঠাট্টা করে বলেছো তুমি তাই কি?
এলসা এতেই জব্দ হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু এলসা শুধু হাসলো উত্তর না দিয়ে, ভালো লাগেনি আমার হাসিটা, খাবার আগে দিদির ঘরে সেই রাতে, প্রশ্ন করেছিলাম সোজাসুজি জামাইবাবুর পক্ষে কি বিয়ে করা সম্ভব এলসাকে।
আজো আমার দিদির উত্তরটা কানে বাজে, না মরা পর্যন্ত আমি, তোর জামাইবাবু বিয়ে করতে পারবে না এলসাকে।
আমি একেবারে দিদির কথাতে নিশ্চিত হয়ে যাই। কারণ বহু দেরি মৃত্যু আসতে। তবে রাগ আমার যায়নি জামাইবাবুর ওপর–ওই স্কুলে পাঠাবার কথাটার জন্যে। খাবার সময়েও সেদিন রাতে এক পশলা জামাইবাবুর সঙ্গে ঝগড়া হয়ে গেলো। সারারাত সেদিন কেঁদেছিলাম।
সেদিন সন্ধ্যেবেলার মেরিডিথ ব্লেকের বাড়ি কথা তেমন ভালোভাবে আমার মনে নেই। তবে মেরিডিথ যখন সক্রেটিশের মৃত্যু বর্ণনা পড়েছিলেন, ভীষণ ভালো লেগেছিলো আমার।
আমার তার পরের দিনের কথা আরও মনে নেই, যদিও অনেক ভেবেছি ঐ নিয়ে, এইটুকু শুধু মনে পড়ে স্নানটান করার পর আমাকে কি একটা সেলাই দেওয়া হয়েছিলো করতে।
মেরিডিথ চত্বর থেকে ফ্যাকাশে মুখে ওপরে দৌড়ে আসার আগে পর্যন্ত অস্পষ্ট আর ধোয়াটে ছিলো সব কিছুই। মনে আছে টেবিল থেকে একটা কফিপেয়ালা পড়ে ভেঙে যায়, এলসা ফেলেছিলো মনে আছে এটাও। ভয়ংকর মুখ করে নীচে ছুটে নেমে যায় সে।
মনে মনে আমি বলেছিলাম, মরে গেছে জামাইবাবু! সত্যি কথাটা বলে আমার মনে হয়নি। কেউ জামাইবাবুর কাছে আমাকে যেতেও দেয়নি। পুলিশও এসেছিলো।
পরে আমাকে দিদির ঘরে নিয়ে যান মিস উইলিয়ামস। খুব অসুস্থ লাগছিলো দিদিকে। আদর করে আমাকে ওই বাড়ি ছেড়ে লোড্রী ট্রেসিলিনার বাড়ি চলে যেতে বললো, ওখানে কাল ও থাকবে।
আমি দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম আমি যাবো না ওকে ছেড়ে। অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে শেষ পর্যন্ত ওরা রাজী করালো আমাকে চলে যেতে।
আমাকে নিয়ে তারপর পুলিশের কাছে যাওয়া হয়েছিলো। একজন জামাইবাবু সম্বন্ধে খুব মিষ্টি করে অনেক প্রশ্ন করেছিলেন? তখন ভেবেছিলাম কোনো মানে হয় না এগুলোর। কিন্তু এখন বুঝি। ওঁরা আমাকে এসব শোনার পর ছেড়ে দিলেন লেডী ট্রেসিলিনার ওখানে যাবার জন্যে।
আমাদের খুব ভালো ভাবেই লেডী ট্রেসিলিনা নিলেন। পরে দিদিকে গ্রেপ্তার করেছে শুনলাম পুলিশ। আমি অসুস্থ হয়ে যাই কথাটা শুনে।
যে সব কিছু লিখতে আমি পারিনি তাতো দেখতেই পাচ্ছেন আপনি, ভালোভাবে অনেক ভেবেছি কিছুই মনে পড়ছে না। কোনো কিছুই তো নয়ই অপরাধ সংক্রান্ত, এলসার পাগলামী, দুঃশ্চিন্তায় মেরিডিথের মুখ ফ্যাকাশে, শোকার্ত ফিলিপ এবং ক্রুদ্ধ–এসব কিছুকেই তখন স্বাভাবিক মনে হয়েছিলো। তবে অভিনয় যে কেউ করে যাচ্ছে এটা মনে হচ্ছিল আমার। একটা কথাই আমি জানতামও আজ দিদি করেনি।
আমি এ ব্যাপারে ভুল করিনি, করছি না এখনও। অবশ্য আমি যতো দিদির চরিত্রকে ভালোভাবে চিনি তারই ওপর এটা বলছি নির্ভর করে, কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ এর পেছনে দিতে পারবো না।
সমাপ্ত অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেনের বিবৃতির :–
৩. উপসংহার
তৃতীয় খণ্ড
প্রথম অধ্যায়
উপসংহার
মুখ তুলে তাকালো কার্লা লেমারচেন্ট, চোখে ক্লান্তি আর বেদনার ছাপ। কাগজের বাণ্ডিলটা ছুঁয়ে বললো, এতো গোলমেলে ঠেকছে সব ব্যাপারটা, ভিন্ন-ভিন্ন দিক দিয়ে প্রত্যেকেই মাকে দেখেছেন। অথচ একটাই বক্তব্য, কেউ দ্বিমত নন দেখছি আসল ব্যাপারে।
এগুলো পড়ে খুব হতাশ হয়েছেন?
হ্যাঁ, আপনি হননি? না, অনেক মূল্যবান তথ্য আছে এই কাগজগুলোতে।
ভালো করতাম এগুলো না পড়লেই–পোয়ারো বললো কালার এই কথাটা শুনে, তাহলে আপনিও ঐ কথাটা চিন্তা করেছেন?
কার্লা ঝাঁকানো সুরে বললো, অ্যাঞ্জেলা মাসী ছাড়া মা ওটা করেছিলেন সবাই মনে করে। আর কেউ মানবে না মাসীর কথা। কারণ পেছনে যুক্তি নেই। শুধু কি কাজ হয় বিশ্বাসে?