ওকে খুন করবার জন্যে ছুটলাম আমি…ও করলো কি করে একাজ? প্রাণ প্রাচুর্যে, জীবনী শক্তিতে ভরা এভাবে অ্যামিয়াসকে মারলো কেন? যাতে আমি ওকে না পাই এই জন্যেই কি।
কী ভয়ংকর মেয়ে মানুষ, ওকে আমি ঘৃণা করি।
ওকে ফাসী পর্যন্ত দিলো না ওরা। ওকে ফাঁসীতে ঝোলানো উচিত ছিলো।
বোধহয় ফাঁসী দিলেও ওর শাস্তি তেমন হতো না…
সমাপ্তি লেডী ডিটিশামের বিবৃতি :
সিসিলিয়া উইলিয়ামসের বিবৃতি
প্রিয় মিঃ পোয়ারো,
১৯… সালের সেপ্টেম্বর, আপনাকে একটি বিবরণ পাঠাচ্ছি সেইসব ঘটনার। খুবই খোলাখুলি ভাবে আমি বলছি আপনাকে এবং লুকোইনি কোনো কথাই। কার্লা ক্রেলকে এটা আপনি দেখাতেও পারেন, সব সময়েই আমি সত্যের পূজারী, ক্ষতি করে মিষ্টি কথা, আমাদের বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হবার সাহস থাকা উচিত। বাস্তব সত্যকে যারা আড়ালে রাখতে চায় আমাদের তারাই বেশি ক্ষতি করে সবচেয়ে।
বিশ্বাস করুন
ভবদীয়
সিসিলয়া ইউলিয়ামস
আমার নাম সিসিলিয়া উইলিয়ামস। ১৯… সালে আমাকে মিসেস ক্রেল তার সৎ বোন অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেনের গর্ভনেস নিযুক্ত করেন। …আমার বয়স তখন ৪৮ বছর।
অ্যাল্ডারবেরিতে আমি কাজে যোগ দিলাম, দক্ষিণ ডিভনে একটা সুন্দর জমিদারীতে, মিঃ ক্রেলের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি ছিলো এটা। জানতাম যে একজন নামকরা শিল্পী ছিলেন মিঃ ক্রেল। কিন্তু তাকে আমি দেখিনি অ্যাল্ডারবেরিতে ওঠার আগে পর্যন্ত।
মিঃ আর মিসেস ক্রেল ঐ বাড়িতেই থাকতেন, অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন (তার বয়স ছিলো তখন মাত্র ১৩ বছর) আর থাকতো তিনটে চাকর। এরা সবাই ওখানে চাকরী করছিলো দীর্ঘদিন ধরে।
আমরা ছাত্রীটিকে দেখলাম বেশ ভালো আর সম্ভাবনাময়। তার অনেক গুণ ছিলো, আনন্দ পেতাম ওকে পড়িয়ে। তবে স্বভাব ছিলো একটু বন্য আর উচ্ছল, সব মিলিয়ে আমার ভালোই লাগতো ওকে। তাদের মনের মতো করে প্রাণশক্তি থাকলে মানুষ করা যায়।
অ্যাঞ্জেলাকে মোটামুটিভাবে নিয়ম শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলা যেভাবে বুঝতে পারলাম সেটা। ও একটু দুষ্টু হয়ে উঠছিলো মিসেস ক্রেলের প্রশ্রয়ে। তবে আমার মতে মিঃ ক্রেলের প্রভাবটাও ঠিক ছিলো না। তিনি খুব প্রশ্রয় দিতেন মাঝে মাঝে, আবার রুক্ষ ব্যবহার কখনও করতেন, শিল্পী মানুষ তো, মেজাজ তো থাকবেই।
তবে আত্মসংযমের ক্ষমতাকে শিল্পী হলেই যে বিসর্জন দিতে হবে এর কোনো যুক্তি জানি না আমি। আমার ভালো লাগতো না মিঃ ক্রেলের ছবিও। ভালো নয় আঁকা, বড্ড চড়া রঙের ব্যবহারও।
আমার ঘনিষ্ঠতা খুব গাঢ় হয়ে উঠেছিলো মিসেস ক্রেলের সাথে খুবই তাড়াতাড়ি। তার শান্ত আচরণ বিপদ বা ঝাটের মুখে আমার খুব ভালো লাগতো। মিঃ ক্রেল স্বামী হিসেবে খুব বিশ্বস্ত ছিলো না, এবং মনে হয় তার জন্যে খুব কষ্ট পেতেন মিসেস ক্রেল। আরো একটু শক্ত মনের মহিলা হলে স্বামীকে ছেড়ে কবে চলে যেতেন। সে ধরনের কিছু মিসেস ক্রেল চিন্তা করতেন না। স্বামীকে মেনে নিয়েছিলো দোষ ত্রুটি সমেত। তবে ভীরুর মতো নয়–বেশ বকাঝকা, চেঁচামেচি মাঝে মাঝে করতেন। এবং মেজাজের সঙ্গেই।
স্বামী-স্ত্রী কুকুর-বেড়ালের মতো ঝগড়া করতেন বিচারের সময় তা বলা হয়েছিলো। আমি বলবো না অতোটা। কখনও মিসেস ক্রেলের মর্যাদা বোধ অতো নীচে তাঁকে নামতে দেয়নি, ঝগড়া হতো। এবং সেটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয় ঐ পরিস্থিতিতে আমার।
মিসেস ক্রেলদের দু বছর কাটার পর আবির্ভাব হলো ওখানে এলসা গ্ৰীয়ারের। ১৯… সালের গ্রীষ্মকালে উনি অ্যাল্ডারবেরিতে এসেছিলেন। তার আগে কখনো মিসেস ক্রেল দেখেননি এলসা গ্ৰীয়ারকে। এলসা মিঃ ক্রেলের বান্ধবী ছিলেন, নিজের ছবি আঁকাতে এসেছিলেন।
আর সঙ্গে সঙ্গে মিঃ ক্রেল মেয়েটির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছেন তা আমাদের চোখে পড়লেন আর তাকে বাধা দেবার কোনো চেষ্টা মেয়েটিও করছেন না। বরং ব্যবহার করতেন বড় বেশি নির্লজ্জের মতো এবং অভদ্র আচরণ করতেন মিসেস ক্রেলের প্রতি আর ঢলাঢলি করতেন খোলাখুলিভাবে মিঃ অমিয়াস ক্রেলের সঙ্গে।
আমাকে মুখ ফুটে মিসেস ক্রেল কিছু না বললেও আমি সব বুঝতে পারতাম। এলসা গ্ৰীয়ারকে নিয়ে ওদিকে ছবি আঁকতে বসলেও ছবির কাজ এগোতে দেখতাম না খুব একটা। বোধ হয় বেশির ভাগ সময়ই ওঁরা কাটাতেন গল্প করেই।
অবশ্য মিসেস ক্রেল স্বামী আর এলসা মেয়েটির সম্বৰ্কটাকে মনে করতেন বন্ধুত্বই। তবে ওকে অপছন্দ করতেন এলসার নির্বুদ্ধিতা। এবং মনে হয় আমার ঠিক ওঁর অনুমানটাই, বোধ হয় খুব ভালো ছিলো না এলসা গ্ৰীয়ারের শিক্ষা-দীক্ষা কখনো বই পড়তে বা আধুনিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে দেখিনি। সহ্য করতে পারতেন না কোনো উঁচুদরের আলোচনাও।
সব সময়ে মেয়েটি নিজের রূপ, পোষাক আর পুরুষদের নিয়ে ভালোবাসতেন ব্যস্ত থাকতে।
বোধ হয় অ্যাঞ্জেলাও বুঝতে পারেনি যে খুব অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন ওর দিদি। অবশ্য সে সব বোঝার ক্ষমতাও তার ছিলো না। গেছো মেয়ে ছিলো একটু, গাছে চড়া, সাইকেল চালানো বেশি পছন্দ করতো। তবে খুব বই পড়তে এবং রুচিটাও সে ব্যাপারে খুব সুন্দর।
বোনের সামনে মিসেস ক্রেলও কখনো দুঃখে বা অশান্তির কথা প্রকাশ করতেন না।
লন্ডনে ফিরে গেলে মিস এলসা গ্ৰীয়ার সত্যি কথা বলতে কি সবাই খুশি হয়েছিলাম আমরা। অন্যদের অসুবিধেয় ফেলে এই ধরনের মেয়েরা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।