এরকুল পোয়ারো বললো, বাগানে বীয়ারের বোতলটা নিয়ে যাবার আগে ওতে কোনাইন নিশ্চয়ই মেশানো হয়ে গিয়েছিলো?
কোনাইন ছিলোই না বোতলে, ছিলো গ্লাসে।
একটু থামলেন স্যার মণ্টেণ্ড–তাঁর ভারিক্কী সুন্দর মুখের ভাবটা পাল্টে গেলো হঠাৎ। মাথা খুব জোরে নেড়ে বললেন–আরে তাইতো, কী বলতে চাইছেন পোয়ারো আপনি?
পোয়ারো বললো, যদি নির্দোষ হবে ক্যারোলিন ক্রেল তাহলে কোনাইন বীয়ারে এলো কোত্থেকে? অ্যামিয়াস ক্রেল নিজেই রেখেছিলো আসামী পক্ষ থেকে তা বলা হয়েছিলো। কিন্তু তা প্রায় অসম্ভব আপনি বলছেন–এবং যদি আমাকে বলেন, তবে আমিও বলবো একমত আপনার সঙ্গে। অ্যামিয়াস ক্রেল ঐ ধরনের লোক ছিলো না। অতএব যদি কাজটা ক্যারোলিন না করে থাকে তবে অন্য কেউ নিশ্চয়ই ওটা করেছে।
স্যার মন্টেগুর প্রায় রাগে কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো, উনি বললেন, মশাই আজেবাজে কথা ছাড়ুন তো। চাবকে কখনো মরা ঘোড়াকে ছোটানো যায় না। ব্যাপারটা চুকেবুকে গেছে অনেক বছর আগেই। ক্যারোলিনই করেছিলো খুন। যদি আপনি সেই সময় ওকে দেখতেন তাহলে কোনো সন্দেহই মনে থাকতো না। সব কিছু ক্যারোলিনের মুখে চোখে ফুটে উঠেছিলো। ভয় পায়নি একটুও এমনকি নার্ভাসও হয়নি। বিচারটা তাড়াতাড়ি শেষ হোক ও যেন তাই চাইছিলো। তা বলতে হবে সাহস ছিলো মহিলার, সত্যিই ছিলো সাহস…।
এবং তৎসত্ত্বে, উনি একটা চিঠি লিখে রেখে যান মারা যাবার সময় মেয়েকে উদ্দেশ্য করে, তাতে তিনি নিজেকে নিরপরাধ বলে গেছেন ঈশ্বরের নামে শপথ করে।
জোর দিয়েই কিন্তু আমি বলবো খুন করেছিলেন মহিলা, আমি-আপনিও ওর জায়গায় থাকলে তাই করতাম, বললেন স্যার মন্টেগু ।
উনি ঐ ধরনের মহিলা ছিলেন না তা বলছেন ওর মেয়ে।ওর মেয়ে বলছেন ফুঃ, সে এসব ব্যাপারের কী জানে? যখন বিচার চলছিলো তখন তো একেবারে বাচ্চা ছিলো মেয়েটা। বয়স ছিলো কত…চার…পাঁচ। ইংল্যান্ডের বাইরে কোনো আত্মীয় স্বজনের কাছে ওকে ওর নাম বদলে দিয়ে ওরা পাঠিয়ে দেয়। কতটুকুই বা মেয়েটা জানতে পারে, আর কতটুকুই বা মনে রাখতে পারে?
কখনও কখনও শিশুরা খুব ভাল মানুষ চিনতে পারে।
হয়তো তা পারে, কিন্তু তা নয় এক্ষেত্রে। তবে খুব স্বাভাবিক এটাও যে বিশ্বাস করতে চায় না মেয়ে যে ঐ কাজটা তার মা করেছে। সে ঐ বিশ্বাস নিয়েই থাকুক না। তাতে তো কোনো ক্ষতি হবে না কারুর।
মাথা নাড়লো পোয়ারো, এই দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে প্রমাণ চাইছে এখন মেয়েটি।
স্যার মন্টেগু হাঁ হয়ে গেলেন তার স্বামীকে ক্যারোলিন ক্রেল খুন করেনি প্রমাণ চাই তার?
হা। মাথা নাড়লো পোয়ারো। তাই নাকি, কিন্তু পাবে না।
তাই কি মনে করেন আপনি, বিখ্যাত কিংস-কাউন্সেল পোয়ারোর কথা শুনে গভীর অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকালেন, আপনি খুব সৎ প্রকৃতির লোক আমার কিন্তু তা ধারণা ছিলো। কিন্তু পোয়ারো এসব কি করছেন? সরল মাতৃভক্তির সুযোগ নিয়ে একটি মেয়ের কিছু টাকা কমাতে চাইছেন?
আপনি জানেন না মেয়েটিকে। ও খুব সাধারণ মেয়ে নয়। একটা অস্বাভাবিক তেজ আছে মেয়েটার চরিত্রে।
তা হবে। আমার ভাবা উচিত ছিলো অ্যামিয়াস আর কারোলিন ক্রেলের মেয়ে যে ঐ ধরনেরই হবে। মেয়েটি কি চায়?
প্রকৃত সত্য জানতে।
হুম! আমার মনে হয় না প্রকৃত সত্যটা খুব উপাদেয় ঠেকবে ওর কাছে। পোয়ারো সত্যি কথা বলতে কি, ও ব্যাপারে আমার তো মনে হয় কোনো কারনেই থাকতে পারে না সন্দেহের। ক্যারোলিনই করেছিলো খুনটা।
স্যার মাফ করবেন, আমি নিজে নিঃসন্দেহ হতে চাই এ বাপারে। নিজের মনের কথা স্পষ্ট ভাষায় পোয়ারো জানিয়ে দিলো।
নতুন করে আপনি আর কি করতে পারেন তা ঠিক বুঝতে পারছি না। তখনকার খবরের কাগজে বিচারের খুঁটিনাটিগুলো পাবেন। হামফ্রে রুডলফ সরকার পক্ষের উকিল ছিলেন। মারা গেছেন তো উনি, ভেবে দেখি দাঁড়ান, কে ছিলো জুনিয়ার? হা পড়েছে মনে, ছোকরা ছিলো একটা, যাক, হা হামফ্রের সহকারী ছিলো ফগই। কথা বলে দেখতে পারেন ওর সঙ্গে। তাছাড়া আরও কয়েকজন আছেন ঐ সময়কার। তবে পুরো ব্যাপারটা নতুন করে খুঁচিয়ে তোলার ব্যাপারে মনে হয় না নাক গলানোটাকে খুব একটা পছন্দ করবেন। তবে সাহস করে এটা বলতে পারি যে ওঁদের কাছ থেকে আপনি যা চাইবেন জানতে তা পাবেন। আপনার মত শয়তানের সঙ্গে বাঁচাতুরিতে এঁটে ওঠা মুশকিল।
ঐ যে কাদের কথা বলছিলেন যেন ঐ সময়কার, আমার খুব দরকার। ওঁদের কথা খুব আশাকরি মনে আছে আপনার।
একটু চিন্তা করলেন স্যার মন্টেগু, ভেবে দেখি দাঁড়ান। ব্যাপারটা তো অনেকদিন আগের। বলতে গেলে মাত্র পাঁচজন এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এর মধ্যে চাকর-বাকরদের কথা ধরছি না কিন্তু…সবাই ওরা ভালো মানুষ, সন্দেহই করা যায় না ওদের।
ছিলেন পাঁচজন, আপনি তাই তো বললেন। আমাকে কিছু বলুন তাদের সম্বন্ধে।
আচ্ছা ফিলিপ ব্লেবোর কথা প্রথমেই বলি। সবচেয়ে বড় বন্ধু ক্রেলের, ওদের বন্ধুত্ব ছিলো ছোটবেলা থেকে। ওই বাড়িতেই ঐ সময়ে ফিলিপ ছিলো। বেঁচে আছে এখনও। মাঝে মাঝে দেখা হয় এখনও গলফের মাঠে। সেন্ট জর্জেস হিলে হলো ওর বাড়ি, দালালি করে শেয়ারের বাজারে। ও ভালো বোঝে ব্যবসাটা, পয়সা করেছে প্রচুর। একটু মোটা হয়ে যাচ্ছি ইদানীং।