যেন পুরো ব্যাপারটাই এক দুঃস্বপ্ন। খানা তল্লাসী করছে পুলিশ, প্রশ্ন করছে সবাইকে, তারপর কাগজের রিপোর্টাররা পৌঁছে গেলো, ফ্ল্যাশ বা ঘন ঘন জ্বলে উঠতে লাগলো।
সে এক ঘোরতর দুঃস্বপ্নের জগৎ-এতগুলো বছর তারপর থেকে পার হবার পরও দুঃস্বপ্নের মতো ঘটনাকে মনে হয়। হে ঈশ্বর, প্রকৃত ঘটনাটা ছোট্ট কালার মন থেকে তুমি তো মুছেই দিয়েছিলে, চিরকালের জন্য আমরাও ভুলে যেতে চাই।
শোনাক না কেন যত অসম্ভব–আত্মহত্যাই করেছিলো অ্যামিয়াস।
বক্তব্য শেষ মেরিডিথ ব্লেকের।
.
লেডী ডিটিশামের বিবৃতি
আমার অ্যামিয়াস ক্রেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় থেকে শোচনীয় তার মৃত্যু পর্যন্ত আমি এখানে লিখছি সমগ্র কাহিনী।
একটা স্টুডিয়ো পার্টিতে আমি ওকে প্রথম দেখি। ও দাঁড়িয়েছিলো। একটা জানলার ধারে যতদূর মনে পড়ে, ওকে আমি দেখেছিলাম দরজার কাছে আসার পর। ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যেন ও বললো যে ও ক্রেল, শিল্পী। সঙ্গে সঙ্গে আমি বলেছিলাম পরিচিত হতে চাই ওর সঙ্গে।
আমরা সেবারে বোধ হয় কথা বলেছিলাম মিনিট দশেক। কিভাবে আমাকে প্রভাবিত করেছিলো ও তা বর্ণনা করা কঠিন। তবে বলতে পারি এটুকু ওর পাশে আর সবাইকে মনে হয়েছিলো ভীষণ ম্লান।
ঐ দেখা হবার পরে যতগুলো আমি পারলাম দেখলাম ওর আঁকা ছবি। সেই সময় একটা প্রদর্শনী চলছিলো বণ্ড স্ট্রীটে। অ্যামিয়াসের ছবি ছিলো ম্যানচেষ্টার লীডস আর লন্ডনের দুটো ছবির গ্যালারীতে। সবগুলো দেখার পর দেখা করে ওকে বললাম,আপনার সবকটা ছবি আমি দেখেছি. সত্যিই অসাধারণ।
শুনে যে খুব খুশি হয়েছে ও তা বোঝা গেলো, ও বললো, কে বললো যে একজন ছবির সমঝদার আপনি? আমার তো মনে হয় না আপনি এ সম্বন্ধে কিছু জানেন।
আমি বলেছিলাম, কথাটা হয়তো ঠিক। কিন্তু অসাধারণ ছবিগুলো, চমৎকার।
ও দাঁত বের করে হেসে বলেছিলো, কথা বলবেন না অতি উৎসাহী বাচ্চার মতো।
আমি বললাম, বলছি না। আমি চাই আমার একটা ছবি আঁকুন আপনি।
অ্যামিয়াস বলেছিলো, যদি একটুও বুদ্ধি থাকতো আপনার মাথায় তবে দেখতেন যে সুন্দরী মহিলাদের প্রতিকৃতি আমি আঁকি না।
আঁকতে হবে যে প্রতিকৃতিই একথা আমি বলিনি, তাছাড়া সুন্দরীও নই আমি।
আমার দিকে ও তাকালো, যেন নতুন করে আমায় দেখতে শুরু করেছে, বললো, তা ঠিক, ঠিক তুমি সুন্দরী নও।
তাহলে কি আমার ছবি আঁকবেন?
অনেকক্ষণ ধরে ঘাড় কাৎ করে আমাকে দেখলো, একটা অদ্ভুত মেয়ে তুমি, তাই না? আমি বলেছিলাম, ভালোই টাকা পয়সা আছে আমার। ছবিটার জন্যে ভালো টাকাই দিতে পারবো।
ও বলেছিলো, আমাকে দিয়েই তুমি বা ছবি আঁকতে চাইছো কেন?
ইচ্ছে হয়েছে আমার।
ওটাই কি কারণ?
হা, যখন যা চাই আমি তাই পাই।
ও তখন বললো, আহারে একেবারে বাচ্চা তুমি।
আমি বললাম, তাহলে আমার ছবি আঁকছেন আপনি?
আমার কাধ ধরে ও মুখটা ভালোভাবে দেখলো আলোর দিকে ফিরিয়ে। তারপর সরে দাঁড়ালো একটু দূরে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম নিশ্চল হয়ে। ও বলেছিলো, মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমার অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকাও পাখি অবিশ্বাস্য রঙে রাঙানো সেন্টপলস গির্জার ওপর নামছে একরকম ছবি আঁকা একটা। যদি কোনো একটু প্রাচীন আমলের প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে আঁকতে পারি তোমায় তাহলে আমার হয়তো ইচ্ছেপূরণ হলেও হতে পারে।
আমি বললাম, আপনি তাহলে আমাকে আঁকছেন? বলেছিলো ও, যত মেয়ে আমি দেখেছি তুমি হলে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সবচেয়ে স্থূল, এক অসাধারণ অগ্নিশিখা বিচিত্র বর্ণের সংমিশ্রণে। তোমার ছবি আমি আঁকবো।
তাহলে পাকা কথা? ও তখন বলেছিলো, তোমায় কিন্তু আমি সাবধান করে দিচ্ছি, এলসা গ্ৰীয়ার, তোমার ছবি যদি আঁকি তাহলে হয়তো প্রেমও করতে পারি তোমার সঙ্গে।
আমি বলেছিলাম, তুমি আশাকরি করবে…। খুব শান্ত অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে আমি কথাটা বলেছিলাম, দম বন্ধ যে হয়ে গেছে আমার কথা শুনে এটা বুঝতে পেরেছিলাম, পাল্টে গিয়েছিলো ওর চোখের দৃষ্টিও।
মিঃ পোয়ারো বুঝতে পারছেন, একেবারে হঠাৎই ঘটে গিয়েছিলো ব্যাপারটা।
আবার আমাদের দু-একদিন পরে দেখা হলো। আমাকে অ্যামিয়াস জানালো যে ধরনের পশ্চাদপট ও চাইছে আমাকে তার জন্যে যেতে হবে ডিভনশায়রে। আর আমি বিবাহিত জেনে রাখো। আমি খুব পছন্দও করি স্ত্রীকে।
নিশ্চয়ই সে খুব সুন্দর তা না হলে তাকে তুমি কেন পছন্দ করবে। বলেছিলাম আমি।
ও বলেছিলো স্ত্রীকে আমি সত্যি কথা বলতে কি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। অতএব এলসা যদি তোমার অন্য কোনো মতলব থাকে, তবে পথ দেখো!
আমি বুঝেছি। ও আমার ছবি এক সপ্তাহ পরে আঁকতে শুরু করলো। বেশ ভালোভাবেই ক্যারোলিন ক্রেল আমাকে গ্রহণ করেছিলো। তবে পছন্দ করতো না খুব একটা, আর কেনই বা করবে? আমিয়াসের নজর থাকতো চারদিকে, ও চালাক ভীষণ। কথা যে ওর স্ত্রীর কানে যেতে পারে আমাকে সে সম্বন্ধে কিছুই বলেনি এবং ওর সঙ্গে আমিও খুব নম্র আর ভদ্র ব্যবহার করতাম। অবশ্য আমরা তলে তলে জানতাম দুজনেই।
ও আমাকে দশদিন পরে ফিরে যেতে বললো লন্ডনে। আমি বললাম, কিন্তু শেষ তো হয়নি ছবি।
উত্তর দিলো ও, এই তো মাত্র শুরু হয়েছে। এলসা আসল কথা কি, তোমার ছবি আমি আঁকতে পারছি না।
কেন?
কেন তার কারণটা এলসা তুমি ভালো করেই জানো। আর সেইজন্যেই কেটে পড়তে হবে তোমাকে এখান থেকে। আমি চিন্তাই করতে পারছি না ছবির কথা…আমার অন্য কিছু মাথাতেই আসছে না তুমি ছাড়া।