আমি বলেছিলাম শুধু ছবি আঁকার ব্যাপারে অ্যামিয়াস আগ্রহী। অ্যামিয়াসকে তুমি তো ভালোভাবেই চেনেনা।
ক্যারোলিন মাথা নেড়ে বলেছিলো, না, মেয়েটাকে ও ভালোবাসে।
তা একটু আধটু হতে পারে। ভীষণভাবে ভালোবাসে আমার ধারণা।
আমি বলেছিলাম, মেয়েটা দারুণ সুন্দরী স্বীকার করছি। আর এ ব্যাপারে আমরা জানি অ্যামিয়াসের দুর্বলতার কথা তবে এটাও ঠিক যে যদি মনে প্রাণে অ্যামিয়াস কাউকে চায়, সে তুমিই। ওর মোহ এ ব্যাপারে বরাবরই আছে। কিন্তু বেশিদিন তা টেকে না। আর খারাপ ব্যবহার তোমার সঙ্গে করলেও তুমিই সব ওর কাছে।
বলেছিলো ক্যারোলিন, সব সময়ে তাই মনে করতাম আমিও আগে।
ক্যারোলিন বিশ্বাস করো, তাই আছে এখনও।
না মেরিডিথ এবার কিন্তু অন্যরকম মনে হচ্ছে আমার। ঐ মেয়েটা..মনেপ্রাণে ভীষণভাবে চাইছে। প্রচণ্ড কম বয়সও…তীব্রতাও বেশি। কেমন যেন মনে হচ্ছে আমার বেশ জটিল এবারে ব্যাপারটা।
আমি বলেছিলাম, বয়েস যে ওর কম, আর প্রচণ্ড আন্তরিকতাও তাই তেমন কোনো ভাবনার কারণ দেখা দেবে না। অ্যামিয়াসের মেয়ে শিকারের ব্যাপারে কোনো বাছ-বিচার না থাকলেও ব্যাপারটা অন্যরকমের দাঁড়াবে এই ধরনের মেয়ের ক্ষেত্রে।
হ্যাঁ, আমি সে ভয়টাই খাচ্ছি, ব্যাপারটা দাঁড়াবে অন্যরকমের, ক্যারোলিন বললো, এখন আমার চৌত্রিশ চলছে। দশবছর হলো বিয়ে হয়েছে। আমার তুলনা করা চলে না ঐ এলসা মেয়েটার সঙ্গে আর আমি সেটা ভালোভাবেই জানি।
কিন্তু ক্যারোলিন তুমি তো জানো, যে সত্যি সত্যিই অ্যামিয়াস ভালোবাসে তোমাকে।
ক্যারোলিন তার উত্তরে বলেছিলো, সব সময় কী পুরুষদের চেনা যায়? একটু বিষাদের সুরে তারপর বললো, মেরিডিথ একটা আদিম নারীসত্ত্বা আছে আমার মধ্যে, ইচ্ছে করে আমার, একটা কাটারি হাতে মেয়েটির কাছে চলে যাই।
বুঝিয়েছিলাম আমি ক্যারোলিনকে যে হয়তো মেয়েটা বুঝতেই পারছে না যে ও কী করছে। দেবতার মতো ভক্তি করে অ্যামিয়াসকে এবং চিন্তাও করতে পারে না ওকে ভালোবেসে বসে আছে অ্যামিয়াস।
আমার কথাটা ক্যারোলিন হেসে উড়িয়ে দিলো এব বাগান সম্বন্ধে প্রসঙ্গ পাল্টে গল্প করতে লাগলো। ও বোধ হয় ভুলে গেছে আমি ভেবেছিলাম।
আমি বলেছিলাম, মেয়েটার ভীষণ আকর্ষণ আছে স্বীকার করছি। আর দুজনেই আমরা জানি যে অ্যামিয়াস একটু বেশি দুর্বল এ ব্যাপারে তবে একথাও সেইসঙ্গে তোমার জানা উচিত যে যদি কাউকে অ্যামিয়াস ভালবাসে তবে সে তুমিই। এইসব মোহ তার থাকলেও, কেটে যায় কদিন পরে। তুমিই একমাত্র মহিলা ওর কাছে, যতো ঝগড়াই হোক না কেন, ও নিশ্চিন্ত। তোমার ব্যাপারে।
তাইতো মনে করতাম এতোদিন।
ক্যারোলিন বিশ্বাস করো আমার কথা, তাই আছে এখনও।
এবার কিন্তু মেরিডিথ বেশ ভয় করছে আমার। ভীষণভাবে মেয়েটা…অ্যামিয়াসকে এমন আন্তরিকতার সঙ্গে চাইছে যে ভয় লাগছে আমার। বয়স কম…তীব্রতাও আছে আকাঙ্ক্ষায়।
আমি বলছিলাম ওর কথা শুনে, কম বয়স মেয়েটার, তার ওপর ভীষণভাবে আবার একনিষ্ঠ বলছে, তাহলে তো কমেই গেলো ভয়ের ব্যাপার। নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে পারে এ ধরনের মেয়েরা। এটা তো ঠিক অ্যামিয়াস মেয়েদের নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসে। ও অন্য পথ নেবে এই ধরনের মেয়ের পাল্লায় পড়লে।
হ্যাঁ, সেই ভয়ই তো হচ্ছে আমার, ও ধরতে পারে অন্য পথ, বললো ক্যারোলিন, এখন চৌত্রিশ চলছে আমার। বিয়ে হয়েছে দশ বছর হলো, পাল্লা দিতে এলসার সঙ্গে যে পারবো না সে কথা জানি ভালভাবেই আমি।
আমি তখন বলেছিলাম, কিন্তু ক্যারোলিন সেইসঙ্গে তুমি একথাও জানো তুমি জানো যে তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে অ্যামিয়াস।
ক্যারোলিন উত্তরে বললো, পুরুষদের ব্যাপারে কখনো কি সঠিকভাবে কিছু বলা যায়, তারপর বিষাদের হাসি একটু হেসে বললো, আমার মধ্যে কিন্তু একটা আদিম মেয়েমানুষ আছে। বলা যায় না ওর কাছে দা নিয়ে পৌঁছেও যেতে পারি।
আমি ক্যারোলিনকে অনেক বুঝিয়েছিলাম, বলেছিলাম এলসা মেয়েটা বাচ্চা, বোঝে না কি করবে কিছুই। ও অ্যামিয়াসের মুগ্ধ ভক্ত, কিন্তু নিশ্চয়ই একথা বুঝতে পারছে না যে ক্রমশঃ ওকে আমিয়াস ভালবেসে ফেলছে।
তার উত্তরে শুধু ক্যারোলিন বলেছিলো, তুমি সত্যিই সরল মানুষ মেরিডিথ, তারপর একরকম ইচ্ছে করেই বাগান করা নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিলো। যেন সে পাল্টাতে চায় প্রসঙ্গটা।
এলসা এর কিছুদিন পরেই লন্ডনে চলে যায়। কয়েক সপ্তাহ বাইরে ছিলো অ্যামিয়াসও। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের ব্যাপারটা। আবার জানলাম ফিরে এসেছে এলসা অ্যাল্ডারবেরিতে যাতে ছবিটা অ্যামিয়াস তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে।
আমাকে একটু বিচলিত করেছিলো খবরটা। কিন্তু যখন দেখা হলো ক্যারোলিনের সঙ্গে তেমন কিছুই আমাকে বললো না। ও সাধারণতঃ যেমন কোনো দিকে না কান দিয়ে যেতে থাকে নিজের কাজে তাই দেখলাম এবারও। ধরে নিয়েছিলাম আমিও, তাহলে ঠিক আছে সবকিছু।
কিন্তু ব্যাপারটা পরে অততদূর গড়িয়েছে শুনে ভীষণ আঘাত পেয়েছিলাম আমি মনে।
যা কথাবার্তা হয়েছিলো অ্যামিয়াস ক্রেল আর এলসার সঙ্গে তা আপনাকে আমি জানিয়েছি। আলোচনা করার সুযোগ হয়নি ক্যারোলিনের সঙ্গে। মাত্র দু-একটা কথা হয়েছিলো, আপনাকে যার কথা আগেই জানিয়েছি।
এখনো আমি দেখতে পাই তার মুখখানা, বড় বড় কালো চোখের তারা, সমাহিত শান্ত দৃষ্টি। কানে ভাসে এখনও তার কথাটা, সব শেষ হয়ে গেছে…