সেই মুহূর্তে ঠিক বেজে উঠলো টেলিফোনটা, চাকররা এসে অন্য বাড়ি হলে ফোন ধরে, কিন্তু এতোবার আমি এসেছি অ্যাল্ডারবেরিতে যে ফোনটা নিজেই তুলে নিলাম।
ফোন করছিলেন আমার দাদা মেরিডিথ। ঘাবড়ে গেছেন বেশ। জানালেন যে আমাকে ল্যাবরেটরিতে সকালে গিয়ে দেখেছেন অর্ধেক খালি হয়ে আছে কোনাইনের শিশি।
দু’বার করে আর একই কথা বলার দরকার নেই। মনে হয় এখন আমার, তখন তাই করা উচিত ছিলো। আমায় দারুণ চমকে দেয় ব্যাপারটা, গিয়েছিলাম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, সেই অবস্থা দাদারও। এমন সময় কার পায়ের শব্দ সিঁড়িতে শুনে বলেছিলাম–কথা হবে ঘরে। যেন এখুনি চলে আসেন দাদা।
আমি তারপর নিজেই দাদার সঙ্গে এগিয়ে গেলাম দেখা করার জন্যে। আপনার তো জানা নেই এ দিকটা, তাই লিখছি,একটা জমিদারী থেকে অন্য জমিদারীতে যাবার সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ হলো নৌকো করে যাওয়া। অতএব আমি এগিয়ে গেলাম জেটির দিকে, পথটা চলে গেছে কামান বাগানের পাশ দিয়ে। অ্যামিয়াস আর এলসা কথা বলছে যেতে যেতে শুনলাম, ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে। বেশ বেপরোয়া আর হাসিখুশি লাগছিলো ওদের। দারুণ গরম পড়েছে, অ্যামিয়াস বলছিলো (গরম পড়েছিলো সেপ্টেম্বরের পক্ষে বৈকি) আর সিটিং দিচ্ছিলো এলসা পাঁচিলের কাছে বসে। ওখানে শীত শীত ভাব সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়ায়। হঠাৎ বলে উঠলো এলসা, আর ভালো লাগছে না পোজ দিয়ে বসে থাকতে। লক্ষ্মীটি একটু বিশ্রাম করে নেবো? গর্জে উঠেছিলো সঙ্গে সঙ্গে অ্যামিয়াস, না, এখন ওসব বিশ্রাম-টিশ্রাম চলবে না, বসে থাকো চুপ করে। বড়ো ঝামেলার মেয়ে তুমি। এগোচ্ছে ছবিটা, অতএব কথা নয় কোনো। এলসা হাসতে হাসতে আমার কানে এলো বলছে, জংলী জানোয়ার কোথাকার।
একাই নৌকো চালিয়ে এলেন মেরিডিথ। নৌকো বেঁধে ছোট্ট জেটিতে রাখার পর আমার কাছ ফ্যাকাশে মুখ করে দাঁড়ালেন।
ফিলিপ আমার চেয়ে তোমার বুদ্ধি অনেক বেশি। কি করা যায় এক্ষেত্রে বলল, ভীষণ বিপজ্জনক জিনিসটা। বলেছিলাম আমি, আপনার এ ব্যাপারে একটুও ভুল হচ্ছে না তো? বলে রাখি এখানে বরাবরই আমার দাদাটি একটু ভুলো টাইপের মানুষ, তাই ততো গুরুত্ব ওঁর কথায় দিইনি; অথচ উচিত ছিলো দেওয়া। কিন্তু ওঁর কোনো ভুল হয়নি দাদা বললেন, শিশিটা ভর্তি ছিলো গতকাল বিকেল পর্যন্ত।
আর চুরি কে করেছে সঠিক করে এ বিষয়েও কিছু বলতে পারছেন না আপনি?
বলতে পারলেন না উনি, উল্টে কী মনে হয় আমার জানতে চাইলেন সে কথা। কেউ করে থাকতে পারে কি চাকরদের মধ্যে? হতে পারে আমি বলেছিলাম, তবে তারা কেউ করেনি খুব সম্ভব আমার ধারণা। রোজই তো বন্ধ করে রাখা হতো দরজা, তাই না? তা রাখা হতো দাদা বলেছিলেন। তারপর এক দীর্ঘ বক্তৃতা অসংলগ্ন ভাব কেঁদেছিলেন, কীভাবে আবিষ্কার করেছিলেন উনি একটা জানলার পাল্লার তলার দিকে ফাঁক দেখা গিয়েছিলো বেশ কয়েক ইঞ্চি। কেউ ঢুকে থাকতে পারে ঐ পথে–এই সব।
হতে পারে কি সিদেল চোরের কাণ্ড? আমি প্রশ্ন করেছিলাম সন্দিগ্ধভাবে। এর পেছনে আমার তো মনে হচ্ছে অনেক কিছু নোংরা থাকতে পারে।
ঠিক কি কথা আমি চিন্তা করছি তা জানতে চেয়েছিলেন দাদা। তখন বলেছিলাম আমি বিষটা চুরি যাবার ব্যাপারটা ঠিক হয় যদি তার ধারণা হয় আমার চুরি করেছে ক্যারোলিন, এলসাকে খাওয়াবার জন্যে, চুরি করেছে এলসা। তার প্রেমের পথ থেকে ক্যারোলিনকে সরিয়ে দেবার জন্যে।
একটু উত্তেজিত হয়ে মেরিডিথ বলেছিলেন, অসম্ভব এটা, অতি-নাটকে চিন্তা এবং সত্যি হতে পারে না কখনই। আমি বলেছিলাম, আচ্ছা চুরি তো বিষটা হয়ে গেছে ঠিকই, এখন আপনি কি ব্যাখ্যা এ ব্যাপারে দিতে পারেন, বলুন? কোনো সঠিক ব্যাখ্যা উনি দিতে পারেননি। উনিও আসলে ঠিক আমার কথাটাই চিন্তা করছিলেন, কিন্তু মুখ ফুটে সাহস করে বলতে পারছিলেন না।
তখন প্রশ্ন করলেন মেরিডিথ, এক্ষেত্রে কি করা উচিত আমাদের?
এবং বোকার মতো আমিও বলেছিলাম, এ ব্যাপারে খুব ভালোভাবে আমাদের চিন্তা করতে হবে। হয় বিষটা সবার সামনে চুরি যাবার কথা ঘোষণা করুন, কিংবা এ ব্যাপারে চাপ দিন ক্যারোলিনকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে তাতে যদি মনে হয় আপনার ক্যারোলিন চুরি করেনি বিষ, তখন এলসার ওপর ওই ভাবে চাপ দেবেন। তখন মেরিডিথ বলেছিলেন ও কাজ এলসার মতো মেয়ে করতে পারে।
ঐ পথটা ধরে বাড়ির দিকে আমরা এগিয়ে আসছিলাম। শেষ মন্তব্যটির পরে আমরা আর কোনো কথা বলিনি। ক্যারোলিনের গলার স্বর শুনতে পেলাম কামান বাগানের কাছে এসে।
মনে হয়েছিলো আমার ঝগড়া হচ্ছে তিনজনের মধ্যে, অথচ ওরা আসলে আলোচনা করছিলো অ্যাঞ্জেলার ব্যাপার নিয়ে। প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যারোলিন বললো, বড় বেশি নিষ্ঠুর ব্যবহার হয়ে যাবে মেয়েটার ওপর। বেশ অধৈর্য হয়ে আমিয়াসও সায় দিয়েছিলো তার কথায়। তারপর আমাদের ঢুকতে দেখে বাগানের দরজা খুলে বেশ অবাক হয়ে যায় অ্যামিয়াস। বেরিয়ে আসছিলো ক্যারোলিন, আমাদের দেখে বললো, হ্যালো মেরিডিথ আমরা অ্যাঞ্জেলাকে স্কুলে পাঠাবার ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ঠিক বুঝতে পারছি না আমি ওর পক্ষে এটা মঙ্গল হবে কিনা।
অ্যামিয়াস বলে উঠেছিলো, বেশি বাড়াবাড়ি করবে না মেয়েটাকে নিয়ে। ভালোই থাকবে মেয়েটা স্কুলে। নিষ্কৃতি পাবো আমরাও।