ঐ যে বলছিলাম মাঝে মাঝে ঝঞ্ঝাট বাঁধতো মেয়েদের নিয়ে। মুখ বুঝে সব সহ্য করার মতো ভীরু মিসেস ক্রেল ছিলো না। চেঁচামেচিও হতো, এবং শেষ পর্যন্ত সব কিছু ছেড়ে আবার স্বামীটি ফিরে আসতে স্ত্রীর আশ্রয়ে আবার ভুলেও যেতো ঐ সব ঘটনা। কিন্তু অন্য ধরনের ছিল শেষ ঘটনাটি। ভীষণ কম বয়েসী ছিলো এবারের মেয়েটি, মাত্র কুড়ি।
এলসা গ্ৰীয়ার ছিলো ওর নাম। ইয়র্ক শায়ারের এক ব্যবসাদারের একমাত্র মেয়ে। টাকা ও গোঁ দুটোই ছিলো মেয়েটির। আর সে ভাল বুঝতো নিজের প্রয়োজনটাও। অ্যামিয়াস ক্রেলের ওপর ওর নজর পড়লো। নিজের ছবি আঁকাবে ক্রেলকে দিয়ে। এই ধরনের সমাজের উঁচুতলার মানুষদের ও অবশ্য প্রতিকৃতি আঁকতো না, তবে আঁকতো মানুষের ছবি। তাছাড়া মনে হয় না কোনো মহিলা তার নিজের ছবি ওকে দিয়ে আঁকাতো, কারণ কাউকে ছেড়ে ক্রেল কথা বলতো না। কিন্তু ও এঁকে ছিল এই মেয়েটির ছবি, আর শেষের দিকে জড়িয়েও পড়েছিলো পুরো মাত্রায়। ওর তখন চল্লিশ বছর বয়স হতে চলেছে। বুঝতেই পারছেন, বেশ কয়েক বছর হলো বিয়েও হয়ে গেছে। ওর একরত্তি মেয়ের জন্যে ভেড়া হয়ে ওঠার বয়েস হয়ে উঠেছিলো, আর এলসা গ্ৰীয়ার হলো সেই একরত্তি মেয়েটা। ক্রেল ওর জন্য পাগল হয়ে গিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেবার চিন্তা করতে শুরু করেছিলো এলসাকে বিয়ে করার কথাও।
এটা মেনে নিতে রাজী ছিল না ক্যারোলিন ক্রেল, শাসিয়ে ছিলো স্বামীকে, ওদের কথাবার্তা দুজন মানুষ শুনে ফেলেছিলো, বিশেষ করে যখন তার স্বামী অ্যামিয়াসকে ক্যারোলিন বলেছিলো, যদি না ছাড়ে ওই মেয়েটাকে তবে ক্যারোলিন ওকে খুন করবে। এবং ওর শুধু ওটা মুখের কথা ছিল না। আগের দিন ঘটে ঘটনাটা, ওরা চা খেতে গিয়েছিলো এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। লতাপাতা নিয়ে শখের গবেষণা করতেন সেই প্রতিবেশীটি। নানা রকমের ওষুধ-বিষুধ বাড়িতেই তৈরি করতেন। কোনাইন ছিল ওঁর তৈরি করা ওষুধের মধ্যে একটা–এই বিষটা যে চিতি-বিষলতা চায়ের আসরে কত মারাত্মক এবং কাজ করে কিভাবে তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছিলো সামান্য।
ভদ্রলোক পরদিন সকালে আবিষ্কার করলেন অর্ধেক খালি কোনাইনের বোতলটা। সন্দেহ ঘোরালো হয়ে উঠলো ওঁর মনে। মিসেস ক্রেলের ঘরে একটা আলমারীর তলার তাকে ওরা মানে পুলিশরা খুঁজে পেয়েছিলো প্রায় খালি একটা বোতল।
এরকুল পোয়ারো সামান্য অস্বস্তিতে একটু নড়ে উঠলো, ওটা ওখানে অন্য কেউ রেখে দিয়ে আসতে পারে।
না, আদালতে স্বীকার করে মিসেস ক্রেল সেই রেখেছিলো বোতলটা ওখানে। ও কথাটা খুবই বোকার মত স্বীকার করে ফেলেছিলো, ওকে এসব ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে এমন কোনো ওর সলিসিটারও ছিলো না। তাই ও তরফ থেকে বোতলটা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতেই ও স্বীকার করে নেয়।
কিন্তু কেন?–আবার প্রশ্ন করলো পোয়ারো।
বিষটা চুরি করে আত্মহত্যা করার জন্যেই একথা বলেছিলো ক্যারোলিন। কিন্তু কি করে বোতলটা খালি হয়ে গেলো তার কারণ কিছুই সে দেখতে পারেনি বা কেন শুধু তার এবারই আঙুলের ছাপ বোতলে পাওয়া গিয়েছিলো ওর পক্ষে সাক্ষ্যের এই অংশটা খুবই মারাত্মক। স্ত্রীর বক্তব্য ও আত্মহত্যা করেছে স্বামী অ্যামিয়াস ক্রেল। কিন্তু স্ত্রীর ঘরের আলমারীতে লুকোনো কোনাইনের বোতল থেকে কেউ যদি আত্মহত্যা করার জন্যে বিষ চুরি করে তবে তার আঙুলের ছাপ বোতলের গায়ে তো থাকা দরকার।
বিয়ারের সঙ্গে তো বিষটা দেওয়া হয়েছিলো, তাই না?
হ্যাঁ। মহিলাটি নিজেই বাগানে নিয়ে যায় বোতলটা বের করে ফ্রিজ থেকে, যেখানে ছবি আঁকছিলো তার স্বামী। নিজের হাতে মহিলা বীয়ার ঢেলে দিয়েছিলো তার স্বামীকে, তারপর স্বামীকে বিয়ারটা খেতে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। তারপর লাঞ্চ খেতে চলে যায় সবাই, স্বামী বাদে। প্রায়ই করতো এটা স্বামীটি। খেতে যেতো না খাবার টেবিলে, পরে স্ত্রী আর গভর্নেস দুজনে দেখতে পায় মরে পড়ে আছে অ্যামিয়াস ক্রেল। যে বীয়ার ও দিয়েছিলো ক্যারোলিনের বক্তব্য তাতে কোনো দোষ ছিলো না। বলতে চেয়েছিলাম আমরা অ্যামিয়াসের মনের মধ্যে হঠাৎ উদয় হয় কোনো দুশ্চিন্তার যার ফলে নিজেই বীয়ারে বিষ মিশিয়ে খেয়ে নেয়। গল্পটা ধোপে টেকেনি। কারণ আত্মহত্যা করার মতো লোকই ছিলো না আমিয়াস। তাছাড়া সব ভেস্তে দিলো বোতলে আঙুলের ছাপটা।
ক্যারোলিনের আঙুলের ছাপ কি বোতলে পেয়েছিলো পুলিশ?
না, পায়নি। শুধু আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় বোতলে। তবে যখন গভর্নেস ডাক্তারকে টেলিফোন করতে দোতলায় যায় তখন ক্যারোলিনই একমাত্র মৃতদেহের কাছে ছিলো। এবং কোনো সন্দেহই এ বিষয়ে নেই যে নিজের আঙুলের ছাপ বোতলের গায়ে সেটা মুছে দিয়ে ছাপ লাগিয়ে নিয়েছিলো স্বামীর হাতের। দেখাতে চেয়েছিলো ক্যারোলিন যে ও যেন কখনই বীয়ারের বোতলটা ছোঁয়নি। কিন্তু কাজ হয়নি ওতে কোনো। বুড়ো রুডলফ সরকার পক্ষের কৌসুলী ছিলেন, কোর্টে ঐ ব্যাপারটা নিয়ে খুব রগড় করেছিলো। কোর্টে হাতে কলমে সে দেখিয়ে দেয় যে ঐভাবে বোতল ধরা যায় না–আমরাও প্রমাণ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম যে বোতল ঐভাবে ধরা যায়। মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করার সময় বিশেষ করে। কিন্তু খুবই জোলো ছিলো যে আমাদের যুক্তিগুলো তা বলাই বাহুল্য।