জানি, সংক্ষেপে সারলো পোয়ারো।
কাঁধ ঝাঁকালেন স্যার মন্টেগু, অবশ্য আমার ততো অভিজ্ঞতাও তখন ছিলো না, তবে যতোটা করা সম্ভব মনের মানুষের পক্ষে ততটাই আমি করেছিলাম। খুব একটা এগোনো যায় না সহযোগিতা না পেলে। দরখাস্তও করেছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সব মা-বৌয়েরা, মহিলাটির ওপর সবার সহানুভূতি ছিলো।
স্যার মন্টেগু পা দুটো সামনে ছড়িয়ে দিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে হঠাৎ বেশ বিজ্ঞজনোচিত ভাব মুখে ফুটিয়ে তুলে বললেন, যদি গুলি করতেন মহিলা, বা খুন করতেন ছুরি দিয়ে তবে আমি সাজাতে পারতাম মানুষ খুনের মামলা। কিন্তু বিষ…খেলা করা চলে না এটা নিয়ে। ব্যাপারটা খুব জটিল হয়ে ওঠে…খুবই জটিল।
কি ছিলো আসামী পক্ষের বক্তব্য, প্রশ্ন করলো পোয়ারো, যদিও ইতিমধ্যে সে পড়ে ফেলেছে পুরোনো খবরের কাগজ। জেনেও নিয়েছে পুরো ঘটনাটা, কিন্তু তার ভালই লাগছিলো না জানার ভান করতে। স্যার মন্টেগুর সামনে বিশেষ করে।
আরে ঐ আত্মহত্যার ব্যাপার। ও ছাড়া একমাত্র আর তো বলা যায় না কিছু। কিন্তু সেটিও তুলে ধরা যায়নি ঠিক মতো। আত্মহত্যা করার লোকই ছিলো না ক্রেল। আপনার কখনো ওর সাথে দেখা হয়নি, তাই না, না। ও একটা দারুণ প্রাণ চঞ্চল, খোশ মেজাজী মানুষ ছিলো। কলির কেষ্ট বিয়ার–পাগল..এই জাতীয় যা কিছু বাকি ওর সব গুণই ছিলো। প্রবল ছিল দেহ লালসা, এবং মনে হয় তার বেশ ভালই লাগতো। নিজের থেকে চুপচাপ বিষ খেয়ে এই ধরনের নোক খতম করবে নিজেকে এটা বোঝানো কষ্টকর জুরীদের। আদৌ তার চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। আমি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার ওটা হারা মামলা। আর ঠিক মতো তাল সামলে চলতে পারলেন না মহিলাও। আর উনি কাঠগড়ায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা পরিষ্কার হয়ে উঠলো। লড়াই করার কোনো চেষ্টাই ওর তরফ থেকে ছিলো না। আর আপনার মক্কেলকে যদি আপনি কাঠগড়ায় তুলতে না পারেন বুঝতেই পারছেন জুরীরা যা বোঝার বুঝে নেবেন।
পোয়ারো বললো, সহযোগিতা না পেলে কিছুই যে করা যায় না, একটু আগে বললেন–তাই কি এর মানে?
নিশ্চয়ই, জাদুকর তো আর আমরা নই, কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে আসামী জুরীদের ওপর, অর্ধেক লড়াই নির্ভর করে তারই ওপর। বহুবার দেখেছি আমি জুরীরা একমত হন না জজের বক্তব্য বোঝানোর সঙ্গে। করেছে ঠিকই বা ও করতেই পারে না একাজ–তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এই ধরনের মনোভাব। সংগ্রামী মনোভাব দেখাবার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি ক্যারোলিন ক্রেল।
কিন্তু কেন?
স্যার মন্টেগু কাঁধ ঝাঁকালেন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গীতে। জিজ্ঞেস করবেন না ও কথা। ক্যারোলিন ভালই বাসতো স্বামীকে, একেবারে ভেঙে পড়েছিলো নিজের অপরাধের গুরুত্বটা বুঝতে পেরে। আমার বিশ্বাস আঘাতটা সামলাতে পারেননি বলেই।
মহিলাটি তাহলে আপনার মতে অপরাধ করেছিলেন?
একথা শুনে স্যার মন্টেগু যেন চমকে উঠলেন, আহ…মানে…মনে হয়েছিলো তো আমার আমরা ও কথাটা মেনে নিয়েই আলোচনা করছিলাম।
কখনো কি আপনার কাছে ক্যারোলিন ক্রেল অপরাধ স্বীকার করেছিলেন?
বেশ বিচলিত হয়ে উঠলেন স্যার মন্টেগু, না, না…নিশ্চয়ই না। কয়েকটা নীতিনিয়ম আছে আমাদের, আপনি নিশ্চয়ই জানেন। মক্কেল নির্দোষ তা ধরেই নেওয়া হয়। যদি এতো কৌতূহল থাকে আপনার তাহলে তো মুশকিল হলো দেখছি, কারণ আপনি তো আর মেহিউকে পাবেন না। এই মামলার ব্রিফ পেয়েছিলাম মেহিউর কাছ থেকেই আমি। এ ব্যাপারে বুড়ো মেহিউ অনেক ভাল বলতে পারতেন আমার থেকে। কিন্তু এখনতো আর উনি এ জগতে নেই। অবশ্য জর্জ মেহিউ নামে ওনার ছেলে আছে, কিন্তু সেও তো ষোলো বছর আগে বাচ্চা ছিলো। ব্যাপারটা অনেকদিন আগেকার, তাই না।
হ্যাঁ, জানি তা, আপনার অনেক কিছুই মনে আছে তা আমার ভাগ্য। স্মৃতি শক্তির প্রশংসা আপনার করতে হয়।
বেশ খুশি হলেন স্যার মন্টেগু, আস্তে আস্তে বললেন, মানে সকলেরই মনে থাকে হেডলাইনগুলো। বিশেষ, করে তো কথাই নেই যদি অভিযোগটা খুনের হয়। তাছাড়া কাগজে খুব হৈচৈ করেছিলো ক্রেল মামলাটা নিয়ে। ব্যাপারটা মেয়ে ঘটিত ব্যাপার তো, এর মধ্যে জড়িত ছিলো যে মেয়েটি, সে আবার দেখতে দারুণ, তবু শক্ত ধাতুতে গড়া।
যদি বারবার একটা কথা আমি জিজ্ঞেস করে ফেলি, আমায় ক্ষমা করবেন দয়া করে। একবার প্রশ্ন করছি আমি, দোষী ছিলেন ক্যারোলিন ক্রেল, আপনি এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে ছিলেন তো?
আবার কাঁধ ঝাঁকালেন স্যার মন্টেগু, নিজেদের মধ্যে বলেই বলছি সত্যি কথা বলতে কি, ও ব্যাপারে সন্দেহ করার কিছু ছিলো না তা আমার মনে হয়। হা…ওটা ক্যারোলিনই করেছিলো।
কি কি সাক্ষ্য প্রমাণ ছিলো ওঁর বিরুদ্ধে?–জানতে চাইলো পোয়ারো, খুবই খারাপ। উদ্দেশ্য ছিলো প্রথমেই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কয়েকবছর ধরে ছিলো অনেকটা কুকুর-বেড়ালের মতো, ঝগড়া হতো প্রায়ই। প্রায়ই কোনো না কোনো মেয়ের সঙ্গে স্বামীটি জড়িয়ে পড়তো। নিজেকে সংযত কিছুতেই রাখতে পারতো না। ঐ ধরনের স্বভাব ছিলো। মোটামুটি সহ্য করে নিতো স্ত্রীটি। কিছুটা লাগাম ছেড়ে রেখেছিলো মেজাজের কথা ভেবে, তাছাড়া একেবারে পয়লা-সারির চিত্রশিল্পী ছিলো স্বামীটি। অনেক দামে বিক্রি হতো ওর আঁকা ছবি। আমার অবশ্য ঐ ধরনের ছবি পছন্দ হয় না, তবুও অসাধারণ ওর ছবিগুলো একথা পারবো না অস্বীকার করতে।