ঘাড় নেড়ে পোয়ারো সায় দিলো, বলে চললেন হেল, ফলে কামান বাগানে ক্রেলকে একলা রেখে চলে গিয়েছিলো সকলে। কোনো সন্দেহই নেই এ বিষয়ে। উনি তারপরে বসে পড়েন। বোধহয় তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো পেশীতে পক্ষাঘাতের ক্রিয়া। উনি কোনোরকম সাহায্য পাননি হাতের কাছে এবং মিঃ ক্রেলকে গ্রাস করলো মৃত্যু এসে।
আবার ঘাড় নেড়ে সায় দিলো পোয়ারো।
কিন্তু তারপর শুরু করে দিলাম রুটিন মাফিক তদন্ত। তেমন অসুবিধা হয় না তথ্য সংগ্রহ করতে। মিসেস ক্রেল আর এলসা গ্ৰীয়ারের মধ্যে আগেরদিন বেশ খানিকটা কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। বেশ রাগত ভাবেই এলসা আপত্তি জানিয়েছিলো ফার্নিচার সাজানোর ব্যাপারে, বিশেষ করে, যখন আমি এখানে থাকছি।
মিসেস ক্রেল সঙ্গে সঙ্গে ফুঁসে ওঠেন, তোমার কথার মানে? আবার তুমি থাকতে যাচ্ছ কেন এখানে?
উত্তর দেয় এলসা গ্ৰীয়ার, ক্যারোলিন। যা আমি বলতে চাইছি সেটা ভান কোরো না না জানার। যেন তুমি মুখ গোঁজা উট পাখি বালির মধ্যে। অ্যামিয়াস আর আমি পরস্পরকে চাই তা তুমি ভালোই করেই জানো এবং শিগগির আমরা বিয়েও করতে যাচ্ছি। মিসেস ক্রেল বলেন, ও সব জানি না আমি কিছু।
এলসা গ্ৰীয়ার বলে, বেশ এখন থেকে তাহলে জেনে নাও।
অ্যামিয়াস ক্রেল ঠিক সেই মুহূর্তে বাগান থেকে ঘরে ঢোকেন, মিসেস ক্রেল স্বামীকে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন এটা কি সত্যি অ্যামিয়াস, তুমি যে বিয়ে করতে যাচ্ছ এলসাকে?
পোয়ারো খুব উৎসাহিত হয়ে প্রশ্ন করলো, মিঃ ক্রেল তার উত্তরে কি বলেছিলেন?
এলসা গ্ৰীয়ারের দিকে ফিরে চেঁচিয়ে ওঠেন সঙ্গে সঙ্গে অ্যামিয়াস যতদূর শোনা যায়, তোমার কি ওকথাটা না বললেই চলতো না। তোমার কি মুখ বন্ধ করে রাখার মতো লোপ পেয়ে গেছে বুদ্ধিসুদ্ধিও?
এলসা গ্ৰীয়ার বলেছিলো, ক্যারোলিনের সত্যি কথাটা জানা উচিত আমার তো মনে হয়।
স্বামীকে প্রশ্ন করেছিলেন মিসেস ক্রেল, সত্যি কি কথাটা?
অ্যামিয়াস স্ত্রীর দিকে মুখ সরিয়ে নিয়ে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলেছিলেন।
আবার মিসেস ক্রেল বলেছিলেন, মুখ ফুটে বলো, বলো তুমি। জানতেই হবে আমাকে।
অ্যামিয়াস তখন বলেন, সত্যি কথাটা। তবে ওসব নিয়ে এই মুহূর্তে আমি রাজী নই আলোচনা করতে।
অ্যামিয়াস রাগে গরগর করতে করতে হুম করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, এলসা গ্ৰীয়ার বললো, শুনলে তো। তারপর অনেক কথা কাটাকাটি হয় ওদের মধ্যে, মিসেস ক্রেলকে নাকি এলসা বলেছিলো কেন অকারণে সে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওদের জীবনে, ঘটবার যা তা তো যাচ্ছেই ঘটতে। বুদ্ধি খরচ করে সবারই উচিত পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়া। তবে হ্যাঁ, বন্ধুত্ব বজায় থাকতে পারে ক্যারোলিন আর অ্যামিয়াসের মধ্যে। এলসার তাতে কোনো আপত্তি নেই।
মিসেস ক্রেল তখন কি বলেছিলেন? প্রশ্ন করলো পোয়ারো।
জানা যায় সাক্ষীদের কথা থেকে যে এলসার ঐ কথা শুনে হেসে মিসেস ক্রেল বলেছিলেন, এলসা, আমি বেঁচে থাকতে তা হবে না। মিসেস ক্রেল কথাটা বলে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ঘর থেকে তখন, তোমার কথার মানে? পিছন ফিরে তাকিয়ে মিসেস ক্রেল বলেছিলেন, আমি অ্যামিয়াসকে খুন করে ফেলবো তোমার হাতে তুলে দেবার আগে।
একটু থামলেন হেল।
বিশ্রী ব্যাপার খুব, তাই না?
মাথা নেড়ে পোয়ারো বললো, হ্যাঁ, তবে কে শুনেছিলো ঐ কথাগুলো?
গভর্নেস সিসিল আর ফিলিপ ব্লেক। ঘরের মধ্যেই ছিলেন দুজন। নিশ্চয়ই ওরা খুব অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিলেন।
দুজনের বর্ণনায় ঘটনাটা সম্বন্ধে মিল ছিলো তো?
যথেষ্ট পরিমাণে–তবে মঁসিয়ে পোয়ারো জানেন তো দুজনে সাক্ষী কিন্তু হুবহু একভাবে একই দৃশ্য মনে রাখতে পারে না। আপনিও তো জানেন সেকথা। তাই না?
ঘাড় নেড়ে সায় দিলো পোয়ারো। তারপর যেন বললো চিন্তা করতে করতে, হ্যাঁ তবে দেখতে হবে… শেষ না করেই কথাটা পোয়ারো থেমে গেলো।
আবার শুরু করলেন হেল, বাড়িটায় তল্লাশী চালাই আমি। মিসেস ক্রেলের শোবার ঘরের একটা আলামারীর তলার তাকে একটা শিশি পাই গরম মোজার তলায়, তাতে লেবেল আঁটা ছিলো জুই ফুলের আতরের। অবশ্য খালিই ছিলো শিশিটা। ওর গায়ের আঙুলের ছাপ নিয়ে দেখলাম মিসেস ক্রেলের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে একমাত্র। পরীক্ষা ভালোভাবে করে দেখা গেলো জুইয়ের আতরের গন্ধ আছে সামান্য শিশিটাতে আর আছে কোনাইন হাইড্রো ব্রোমাইড অ্যাসিড।
শিশিটা মিসেস ক্রেলকে দেখাতেই উনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন যে মানসিক অবস্থা তার খুব ভালো যাচ্ছিলো না, তাই কোনাইনের বর্ণনা শুনে মেরিডিথ ব্লেকের মুখে একবার টুক করে গবেষণাগারে একলা ঢুকে পড়েছিলেন, ব্যাগ থেকে তারপর জুইয়ের আতরের শিশিটা নিয়ে জানলা গলিয়ে সবটা আতর ফেলে দিয়ে খালি করে নেন শিশিটা। আর বেশ খানিকটা কোনাইনের বোতল থেকে তাতে ঢেলে নেন। কেন করলেন একাজ জানতে চাইলে বলেছিলেন মিসেস ক্রেল, কয়েকটা কথা এমন আছে যার সবটা কিছুতেই আমি বলতে পারছি না। তবে ভীষণ আঘাত পেয়েছি আমি মনে। আমাকে ছেড়ে আমার স্বামী অন্য একজনকে বিয়ে করার চিন্তা করছিলেন। সেটা ঘটলে কোনো প্রয়োজন থাকে না বেঁচে থাকার, অন্ততঃ আমি বিষটা নিয়েছিলাম সেই কথা ভেবেই।
পোয়ারো বলে উঠলো হেল একটু থামতেই, সেটাও তো সম্ভব হতে পারে?