সিসিল সঙ্গে সঙ্গে মিসেস ক্রেলের কথায় বাড়ি ফিরে যায় টেলিফোন করার জন্যে ডাক্তারকে। মেরিডিথ ব্লেকের সঙ্গে পথে দেখা হয়ে যাওয়াতে তার ওপর টেলিফোন করার কাজটা চাপিয়ে ফিরে আসে কামান বাগানে সিসিল। ডাঃ ফসেট মিনিট পনেরোর মধ্যে আসেন। মিঃ ক্রেল কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন তিনি দেখেই বুঝতে পারেন। একটা থেকে দুটোর মধ্যে ডাক্তারের মতে মারা যাবার সময়। অবশ্য বোঝা যাচ্ছিলো না মৃত্যুর কারণটা, কোনো চিহ্ন নেই আঘাতের, আর খুবই স্বাভাবিক ক্রেলের মুখের ভাবও। এঁদের পারিবারিক ডাক্তার ডঃ ফসেট, ক্রেলের শরীর স্বাস্থ্য ভালো তা উনি জানতেন, তার কোনো অসুখ বা এধরনের কোনো দুর্বলতা ছিলো না। তাই তিনি স্বাভাবিকভাবে এই মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারলেন না। এই সময় ডাঃ ফসেটের সঙ্গে ফিলিপ ব্লেকের কিছু কথাবার্তা হয়।
হেল এতদূর বলে একটু থামলেন, আবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে শুরু করলেন বলতে, কাহিনীর দ্বিতীয় অধ্যায় যেন এবার শুরু হচ্ছে,
ঐ কথাগুলোই পরে মিঃ ব্লেক জানান ইন্সপেক্টর কনওয়েকে। এই ধরনের ছিলো কথাটা, ব্লেক সেদিন সকালে তার দাদা মেরিডিথের কাছ থেকে টেলিফোন পান একটা (দেড় মাইল দূরে হ্যাণ্ডক্রশ ম্যানরে মেরিডিথ থাকতেন)। একজন সখের রসায়নবিদ ছিলেন মেরিডিথ ব্লেক, বোধহয় ভেষজ-বিজ্ঞানী বললেই ভালো হয়। মেরিডিথ নিজের গবেষণাগারে সকালে ঢুকে চমকে ওঠেন, বিষলতার বিষের শিশিটা যেটা তাকের উপর রাখা সেটা প্রায় খালি হয়ে গেছে। যদিও ওটা ভর্তি ছিলো আগের দিন। উনি ভাইকে খুব দুঃশ্চিন্তায় পড়ে ফোন করে কি করা উচিত এক্ষেত্রে জানতে চান। দাদাকে সঙ্গে সঙ্গে ফিলিপ অ্যাল্ডারবেরিতে চলে আসতে বলে সামনাসামনি যাতে আলোচনা করা যায় ব্যাপারটা নিয়ে। নিজেই খানিকটা পথ ফিলিপ এগিয়ে যান, তারপর একসঙ্গে দুই ভাই বাড়িতে ফেরেন। কি করা উচিত এক্ষেত্রে এ নিয়ে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে না পৌঁছতে পেরে, ঠিক করলেন দুজনেই এনিয়ে আর এক দফা লাঞ্চের পর আলোচনা করা যাবে।
ইন্সপেক্টর কনওয়ে আরও খোঁজখবর নেবার পর যেসব নতুন তথ্য জোগাড় করেছিলো সেগুলো হলো এই অ্যাল্ডারবেরি থেকে আগের দিন বিকেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পাঁচজন হ্যাণ্ডক্রশ ম্যানরে যান। ওখানে চায়ের নেমন্তন্ন ছিলো। এই পাঁচজন হলেন মিঃ আর মিসেস ক্রেল, মিস অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন, মিস এলসা গ্ৰীয়ার, আর মিঃ ফিলিপ ব্লেক। ওখানে নেশা সম্বন্ধে মিঃ মেরিডিথ ব্লেক জোর আলোচনা জানান, তারপর সবাইকে নিজের গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে সব কিছু দেখান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। সেই সময় কয়েকটা বিশেষ বিশেষ ওষুধের নাম বলেন মেরিডিথ, একটা হলো তার মধ্যে বিষলতার থেকে পাওয়া কোনাইন চিতল এক বিশেষ ধরনের বিষ। তারপর মেরিডিথ নানা গুণাগুণ ব্যাখ্যা করেন বিষটার, বলেন দুঃখ করে যে এই ওষুধটার নামই ফার্মাকোপিয়া থেকে এখন উবে গেছে, অথচ কোনাইন খুব অল্প মাত্রায় খাইয়ে হুপিং কাশি, হাঁপানি সারানো যেতে পারে। অবশ্য পরে মারাত্মক দিক্ষাগুলো নিয়েও আলোচনা করেন বিষটার। কিভাবে এই বিষটার ক্রিয়া হয় তা বলার জন্যে একজন গ্রীক লেখকের বই থেকে মেরিডিথ খানিকটা অংশ পড়েও শুনিয়েছিলেন।
আবার একটু থামলেন পুলিশ সুপার হেল, তামাক ভরলেন পাইপে এবং শুরু করলেন কাহিনীর তৃতীয় অধ্যায় :
মামলাটা চীফ কনস্টেবল কর্নেল ফ্রিরে আমার হাতে দেয়। খুনটা সম্বন্ধে ময়না তদন্তের ফলাফল থেকে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। যতদূর জানি কোনাইন বিষ ময়না তদন্তে দেওয়া হয়েছিলো কিনা এই বিষয়ে সঠিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু ঠিক কোথায় পাওয়া যাবে বিষটা এটা ভালোমতই জানতেন ডাক্তাররা। তাই মৃত্যুর দু-তিন ঘণ্টা আগে যে বিষটা দেওয়া হয়েছিলো তার প্রমাণ যথেষ্টভাবে পাওয়া গেলো। মিঃ ক্রেলের সামনে পাওয়া গিয়েছিলো একটা টেবিলের উপর খালি একটা গ্লাস আর বিয়ারের একটা খালি বোতল। পরীক্ষা করে দেখা গেলো দুটোরই তলানি, বোতলে কোনাইন ছিলো না, কিন্তু ছিলো গ্লাসে। জানতে পারলাম খোঁজ খবর নিয়ে যে একটা ছোট ঘরে কামান বাগানের এক একস বিয়ার আর বোতল হতে রাখা, ছবি আঁকতে আঁকতে ক্রেল যাতে সহজেই তেষ্টা পেলে পেতে পারেন। কিন্তু ঐ দিন সকালে বিশেষ করে মিসেস ক্রেল বাড়ি থেকে স্বামীকে এক বোতল সদ্য ঠান্ডা করা বিয়ার এনে দিয়েছিলো। যখন উনি বিয়ারটা আনেন তখন ছবি আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন মিঃ ক্রেল। আর পোজ দিয়ে একটা কামানের উপর বসেছিলেন মিস এলসা গ্ৰীয়ার।
বোতল থেকে বিয়ার গ্লাসে ঢেলে মিসেস ক্রেল গ্লাসটা স্বামীর হাতে বাড়িয়ে দেন। এক ঢেকে সবটাই খেলেন ক্রেল ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকতে আঁকতে। মিঃ ক্রেলের নাকি ঐভাবেই বিয়ার খাওয়ার অভ্যেস ছিল। মুখটা খাওয়ার পর বিকৃত করে ক্রেল নাকি বলেছিলেন, সবিকছুরই স্বাদ যেন আজ খারাপ লাগছে। এলসা গ্ৰীয়ার হাসতে হাসতে ওর কথা শুনে বলেছিলো, লিভার।
মিঃ ক্রেল বলেছিলেন, তবে বেশ ঠান্ডা আছে আর যাই হোক না কেন কিন্তু।
একটু থামতেই হেল প্রশ্ন করলো পোয়ারো, কখন হয়েছিলো এটা?
আন্দাজ সওয়া এগারোটা। মিঃ ক্রেল তারপর আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন ছবি আঁকতে। জানা গিয়েছিলো এলসা গ্ৰীয়ারের বক্তব্যনুসারে যে মিঃ ক্রেল কিছুক্ষণ পরে বলেছিলেন যে বোধহয় ওঁর বাত হচ্ছে, কারণ সব আড়ষ্ট লাগছে হাত পা সব। এমন এক ধরনের মানুষ ছিলেন মিঃ ক্রেল, যাঁরা কিছুতেই মানতে রাজী হন না নিজের অসুস্থতার কথা এবং অস্বীকার করতে চেষ্টা করেন যে শরীর খারাপ লাগছে। বিরক্ত হয়ে একটু পরে লাঞ্চ খেতে চলে যেতে বলেন সবাইকে, কারণ একলা থাকতে চান একটু। এমন একটুতেই যে উনি বিরক্ত হয়ে যান, সবাই এ কথা জানতেন।