ঠিক মতো আপনি চেনেন না মেয়েটিকে।
আর ওসব কথা ছাড়ুন তো অভিজ্ঞ লোক আপনার মতো…মাঝে মাঝে বাধা দিয়ে পুলিশ সুপারের কথায় বলে উঠলো পোয়ারো, দেখুন ভাই আমি একজন উঁচুদরের মিথ্যেবাদী হতে পারি, হয়তো তাই মনে করেন আপনি আমাকে, কিন্তু সম্পূর্ণ নিজস্ব ধরনের আমার নৈতিক সততা, নিজের নীতি নিয়েই আমি চলি।
মঁসিয়ে পোয়ারো দুঃখিত, ও কথা আপনাকে আঘাত দেবার জন্যে বলিনি। কিন্তু ধরতে গেলে এটা কি একটা মহৎ কাজ হবে না।
তাই কি সত্যি? ধীরে ধীরে হেল বললেন, সত্যি কি দুর্ভাগ্য মেয়েটির। একটা নিষ্পাপ সুখী মেয়ে ঠিক যখন যাচ্ছে বিয়ে করতে তখন কিনা পারলো জানতে তার মা খুনী। যদি আপনার জায়গায় আমি হতাম তাহলে বুঝিয়ে দিতাম মেয়েটিকে ওটা আর কিছুই নয় আত্মহত্যা ছাড়া, বলতাম মামলাটা ঠিক মতো দাঁড় করাতে পারেননি স্যার মন্টেগু। ক্রেল নিজেই বিষ খেয়েছিলো মেয়েটাকে বুঝিয়ে বলতাম এবং আপনার মনে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
কিন্তু সন্দেহ যে আছে আমার মনে। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না এক মুহূর্তের জন্য। যে আত্মহত্যা করেছিলেন ক্রেল বিষ খেয়ে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় এটা সম্ভব বলে?
হেল আস্তে আস্তে মাথা নাড়িয়ে বললেন, জানেন?–না আমি মেনে নেবো সত্যি কথাটাই, আমি মানবো না আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিগ্রাহ্য মিথ্যেকে। হেলের মুখ চোখ লাল হয়ে উঠলো কথাটা বলতে বলতে, সত্য সম্বন্ধে আপনি তো কথা বলছিলেন, তাই না। আপনাকে আমি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি যে আমরা জানতে পেরেছিলাম ক্রেল মামলাতে সত্যের স্বরূপ।
একথা আপনার মুখ থেকে শোনার তাৎপর্য আলাদা। আপনাকে ভালোমতো জানি আমি, আপনি একজন সৎ এবং দক্ষ অফিসার। এবার আমায় একটা কথা বলুন, কখনোই কি আপনার মনে ক্রেলের অপরাধ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ জাগেনি?
পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, না বিন্দুমাত্র না। মিসেস ক্রেলকেই কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা দোষী প্রমাণ করে, আমরা যে সকল তথ্য খুঁজে পেতে সংগ্রহ করেছিলাম তা জোরদার করে তোলে ঐ ধারণাটিকে।
যে সব সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করা হয়েছিলো মহিলার বিরুদ্ধে তার মোটামুটি একটা আভাস দিতে পারবেন কি?
পারবো। মামলার সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিলাম আপনার চিঠিটা পাবার পর। হেল একটা ছোট্ট নোটবই বের করলেন, এতে মূল ঘটনাগুলো লিখে রেখেছি।
বন্ধু অশেষ ধন্যবাদ। আমার শুনতে ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে।
হেল একটু কেশে শুরু করলেন বলতে, তার কণ্ঠস্বরে সরকারী অফিসারের মেজাজের স্পর্শ পাওয়া গেলো। ইন্সপেক্টর কনওয়ে ১৮ই সেপ্টেম্বরের দুপুর ২টা বেজে ৪৫ মিনিটে একটা টেলিফোন পেয়েছিলেন ডাঃ অ্যান্ড ফসেটের কাছ থেকে। অ্যাল্ডারবেরির মিঃ অ্যামিয়াস ক্রেল মারা গেছেন হঠাৎ ডাঃ ফসেট তা জানিয়ে ছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছে যে পরিস্থিতিতে এবং ঐ বাড়ির জনৈক অতিথি মিঃ ব্লেকের বক্তব্য থেকেও এটা পুলিশের কেস তার ধারণা।
ইন্সপেক্টর ফসেট সার্জেন্ট আর পুলিশের ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে সোজা অ্যাল্ডারবেরিতে চলে যান। ওখানে অপেক্ষা করছিলেন ডাঃ ফসেট, যেখানে মৃতদেহ পড়েছিলো তিনি পুলিশদের নিয়ে যান, ছোঁয়াছুঁয়ি করেনি কেউ অবশ্যই।
মিঃ ক্রেল ছবি আঁকছিলেন একটা ছোট্ট ঘেরা বাগানে বসে। সমুদ্র এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। আর ক্ষুদে ক্ষুদে কামান বসানো আছে দেওয়ালের খাঁজকাটা জায়গাগুলোতে আর সেই কারণেই কামানের বাগান বলা হয় বাগানটাকে। বাগানটা বাড়ি থেকে প্রায় চার মিনিটের রাস্তা। সূর্যের আলো সেদিন পাথরের ওপর পড়ে সৃষ্টি করেছিল যে পরিবেশ, ছবি আঁকার পক্ষে সেটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো বলে উনি আর বাড়িতে ফেরেননি লাঞ্চ খাবার জন্যে। ঐ আলোটা পরে নাও থাকতে পারে। ফলে ক্রেল একাই আপন মনে কামান বাগানে ব্যস্ত ছিলেন ছবি আঁকতে। অবশ্য এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়, যে হতে হবে আশ্চর্য। মিঃ ক্রেল ভীষণ উদাসীন ছিলেন খাবার ব্যাপারে। একটুকরো স্যাণ্ডউইচ কখনো কখনো পাঠিয়ে দিলেই চলতো। তবে তিনি চাইতেন কেউ যাতে তাকে বিরক্ত না করে। জীবিত অবস্থায় শেষ দেখেছিলো ক্রেলকে মিস এলসা গ্ৰীয়ার (তিনি তখন ঐ বাড়িতেই থাকছিলেন) এবং মিঃ মেরিডিথ ব্লেক (নিকট একজন প্রতিবেশী)। অন্যান্যদের সঙ্গে লাঞ্চ খাবার জন্য এই দুজন বাড়ির মধ্যে গিয়েছিলেন। সামনের খোলা চত্বরে বসে খাবার পর সবাই কফি খাচ্ছিলো। কফি শেষ করে মিসেস ক্রেল বললেন, নিচে যাচ্ছি, দেখি কত দূর এগোলো অ্যামিয়াসের কাজ। ওঁর সঙ্গে গভর্নেস মিস সিসিলিয়া উইলিয়ামস গেলো। একটা সোয়েটারের খোঁজ করছিলো গভর্নেস তার ছাত্রীর জন্যে, মিসেস ক্রেলের বোন মিস অ্যাঞ্জেলা ওয়ারেন হলো ওর ছাত্রী। অ্যাঞ্জেলা খুব সম্ভব সমুদ্রের তীরে ফেলে এসেছিলো সোয়েটারটা তাই ওটার আর খোঁজ পাওয়া গেল না।
এক সঙ্গেই এঁরা দুজনে বেরিয়ে পড়েছিলেন। একটু ঢালু মতন বাগানে যাবার পথটা, একটা সামান্য জঙ্গল পার হয়ে যেতে হয়। কামান বাগানের দরজাটা কিছুদূর গেলেই চোখে পড়ে। কামান বাগানেও যাওয়া যায় ঐ পথটা দিয়ে আবার চাইলে সমুদ্রের তীরে সোজা চলে যাওয়া যায়।
সোয়েটারের খোঁজে গভর্নেস সিসিল চলে গেলো সমুদ্রের দিকে আর কামান বাগানে গেলেন মিসেস। মিসেস ক্রেল বাগানের ভেতর পা দিয়েই আর্তনাদ করে উঠেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিসিলও ফিরে আসে। মিঃ ক্রেল বাগানের ভেতরে একটা আসনের ওপর পড়ে আছেন এলিয়ে, প্রাণ নেই দেহে।