কি ধারণা আপনার? পোয়ারো প্রশ্ন করলো পাল্টা।
এডমণ্ডস বেশ খানিকটা সময় নিয়ে বললেন, নাহ, উপায় ছিলো না অন্য কিছু ধারণা করার, উপায় ছিলো না কোনো।
আপনি মামলা চলার সময় আদালতে যেতেন?
প্রত্যেক দিন।
সাক্ষীদের কথা শুনতেন?
শুনেছিলাম।
কোনো অস্বাভাবিকতা, কপটতা কি কারুর মধ্যে লক্ষ্য করেছিলেন?
মানে মিথ্যে কথা কেউ বলেছিলো কি না তাই চাইছেন তো জানতে? মিঃ ক্রেলের কি মৃত্যু কামনা করতো ওদের মধ্যে কেউ? মিঃ পোয়ারো মাফ করবেন, আপনি বড় বেশি মাত্রায় চিন্তা করছেন যা কিনা নাটুকে।
অনুনয় করলো পোয়ারো, ভেবে দেখুন একটু।
পোয়ারো তাকিয়ে রইলো এডমণ্ডসের ধারালো চোখের দিকে। খুব দুঃখিত এমন ভাব দেখিয়ে আস্তে আস্তে যেন বলতে শুরু করলেন এডমণ্ডস, বড্ড কটকটে আর প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলো ঐ মিস গ্রীয়ার মেয়েটা। যতোটা বলা উচিত ভদ্রভাবে বহুবার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো তার মাত্রাও। তবে ও কখনো মিঃ ক্রেলের মৃত্যু চায়নি। ওরই তো ক্ষতি তাতে। ও অবশ্যই চাইতো মিসেস ক্রেলের ফাঁসি হোক–কিন্তু একটাই তার কারণ। হঠাৎ তার মনের মানুষটিকে মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলেই। হয়ে উঠেছিলো বাধা পাওয়া বাঘিনীর মতো। ঐ যে তবে আগেই বলেছি যে অ্যামিয়াস মারা যাক তা এলসা চাইতো না। অবশ্য ফিলিপ ব্লেকও ক্যারোলিনের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন, প্রথম থেকেই ওঁর মনটা বিষিয়ে ছিলো, তাই কোপ মারতে ছাড়েন না সুযোগ পেলেই। তবে ভদ্রলোক যে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি মতো কোনো অন্যায় কাজ যে করেননি আমি একশোবার একথা বলবো। ক্রেলের বিশেষ বন্ধু ছিলেন ফিলিপ। মেরিডিথ ব্লেক ওঁর ভাই–অত্যন্ত বাজে সাক্ষী হিসাবে, অস্পষ্ট, দ্বিধাগ্রস্তভাবে সব সময়ে উত্তর দিয়েছিলেন। এই ধরনের সাক্ষীদের কথা শুনলে মনে হয় যেন মিথ্যে কথা বলছে। না বললে নয় যেটুকু, এঁরা কিছুই বলতে চায় না তার বাইরে। চায়নি মেরিডিথ ব্লেকও, তবে ওঁর পেটের কথা টেনে বের করেছিলো কেঁৗসুলী। আর ঐ গভর্নেস, ঠিকঠাক জবাব দিয়েছিলো কাটাকাটা কথায়। আজেবাজে কথা একটাও বলেনি। তবে বলেছিলো যা তার থেকে সে যে জানতো অনেক বেশি আমার এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
আমারও নেই, বললো পোয়ারো। মিঃ অ্যালফ্রেড তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এডমণ্ডসকে লক্ষ্য করলো, নিশ্চয় উনি আভাস দিতে চাইছেন কোনো কিছুর।
.
চতুর্থ অধ্যায়
বৃদ্ধ সলিসিটার
এসেক্সে মিঃ ক্যালের জোনাথন থাকতেন। পোয়ারো সৌজন্য বজায় রেখে কয়েকটা চিঠি লেখালিখির পর পেয়ে গেলো একেবারে রাজকীয় আমন্ত্রণ, ভদ্রলোকের বাড়িতে থাকতে হবে গিয়ে। সত্যিই এক অসাধারণ চরিত্রের মানুষ বৃদ্ধ। মিঃ জোনাথন যেন কম বয়েসী বেরসিক জর্জ মেহিউয়ের তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের মানুষ, অবশ্য সুপ্রাচীন জিনিসের প্রতি আকর্ষণের মতো মানুষের।
নিজের দৃষ্টিকোণ দিয়ে সবকিছুকে উনি পছন্দ করেন দেখতে এবং গভীর রাতে সুগন্ধী ব্র্যাণ্ডির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে সেটা করতে ভালোবাসেন। তাড়াহুড়ো করে যে এরকুল পোয়ারো তার কাছে হঠাৎ না এসে সময় করে চিঠি লিখে দেখা করতে আসছে এটা খুব ভালো লেগেছে তাঁর। ফলে এখন বিস্তারিত আলোচনা করতে ক্রেল পরিবার সম্বন্ধে তাঁর খারাপ লাগবে না।
আমাদের ফার্মের সঙ্গে ক্রেল পরিবারের বহু পুরুষ থেকে পরিচয় ছিলো। আমি অ্যামিয়াস ক্রেল, তার বাবা রিচার্ড ক্রেলকেও জানতাম। এমন কি এনোক ক্রেল ওর ঠাকুর্দা তার সঙ্গে আলাপ ছিলো আমার। ওঁরা গ্রামের জমিদার ছিলেন, তাঁদের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল মানুষের চেয়ে ঘোড়ার সঙ্গে। জীবন কাটাতেন ঘূর্তিতে, একটুও ভাবনা চিন্তার দাস ছিলেন না। কিন্তু তার ব্যতিক্রম ছিলেন রিচার্ড ক্রেলের স্ত্রী। চিন্তা খেলতো ওঁর মাথায়। অনেক বেশি প্রবল ছিলো প্রবৃত্তির চেয়ে চিন্তাশক্তি। বুঝতেন গান বাজনা, ভালোবাসতেন কবিতা, বাজাতে পারতেন তারের যন্ত্র, ভালো ছিলো না স্বাস্থ্য, পটের বিবির মতো বসে থাকতেন সোফার ওপর। খুব ভক্ত ছিলেন লেখক কিংসলের, তাই অ্যামিয়াস নাম রেখেছিলেন ছেলের। এই নিয়ে স্বামী ঠাট্টা করলেও, মেনে নিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত।
অ্যামিয়াস কাজে লাগিয়েছিলো মা বাবার চরিত্রের এই ভিন্নমুখিতার পূর্ণ সুযোগ। ক্ষীণস্বাস্থ্যের মার কাছ থেকে শিল্পী ভাবটা পেয়েছিলো আর উদ্দাম, বেপরোয়া, নিষ্ঠুর ভাবটা পেয়েছিলো বাবার কাছ থেকে। আত্মকেন্দ্রিক ছিলো ক্রেল পরিবারের সব পুরুষরাই।
বৃদ্ধ, পোয়ারোকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো সরু সরু আঙুলগুলো চেয়ারের হাতলে ঠুকতে ঠুকতে, মঁসিয়ে পোয়ারো শুধরে দেবেন ভুল হলে, তবে মনে হয় আমার আপনি আগ্রহী মানুষের চরিত্র সম্বন্ধে, তাই না?
ওটাই হল আমার সব মামলার আগ্রহের বিষয়। আমার কাছে বিশেষ করে।
বুঝতে পারছি। আপনি কি জানতে চান অপরাধীদের মনে অগোচরে কি আছে তা। ব্যাপারটা দারুণ, ভালো লাগে খুব। অবশ্য ফৌজদারী মামলা হাতে নেয়নি আমাদের ফার্ম। ফলে আমরা একটা বড় ফার্মের হাতে মিসেস ক্রেলের মামলাটা তুলে দিই, ব্রিফ দেওয়া হয়েছিলো স্যার মন্টেগুকে। একটা দারুণ বুদ্ধিমান ছিলেন খুব তা নয়, তবে নাটক জমাতে পারতেন কোর্টে খুব চমৎকার আর খুব বেশি ছিলো ফী-টাও। ওঁর সঙ্গে নাটক করার ব্যাপারে মিসেস ক্রেল যে তাল দিতে পারবেন না, উনি যে এটা কেন ভাবেননি তা জানি না। আর যাই হোন মহিলা নাটুকে ছিলেন না।