সলিসিটার কমবয়সী
প্রথম থেকেই খুব সাবধান হয়ে জর্জ মেহিউ কথাবার্তা বলছিলো, স্পষ্টভাবে হ্যাঁ না বলছিলো না কোনো কথার উত্তরেই।
মনে পড়েছে বটে মামলাটা, তবে স্পষ্টভাবে নয়। মামলার ভার ছিলো ওর বাবার হাতেই–আর তার বয়স তখন তো মাত্র উনিশ।
হ্যাঁ, খুব হৈহৈ পড়ে গিয়েছিলো মামলাটা নিয়ে, কারণ খুব বিখ্যাত লোক ছিলেন ক্রেল। দারুণ সুন্দর ওঁর আঁকা ছবিগুলো, ওঁর দুটো ছবি বিখ্যাত স্টেট গ্যালারিতে জায়গা পেয়েছে, তার মানে খুব একটা আজেবাজে শিল্পী উনি ছিলেন না।
এতোদিন পরে মঁসিয়ে পোয়ারো কেন যে মাথা ঘামাচ্ছেন ঐ মামলা নিয়ে সেটা ঢুকছে না তার মাথায়। ওঃ মেয়েটার কথা বলছেন? সত্যিই কি তাই? ঠিক তো? কানাডায়, মেয়েটা থাকতো নিউজিল্যান্ডে ও তো সব সময়েই তা শুনে এসেছে।
আস্তে আস্তে জর্জ মেহিউ একটু নরম হলো, ঘাড় কিন্তু পোয়ারো শক্ত করেই থাকলো।
নিঃসন্দেহে এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা মেয়েদের জীবনে। সহানুভূতি আছে গভীর, যেন বেশি ভাল হতো সত্যি কথাটা মেয়েটা না জানলেই। অবশ্য ওসব কথা বলে এখন আর লাভ নেই।
এখন জানতে চায় মেয়ে? কিন্তু আছেই বা কি জানবার? তখনকার কাগজে অবশ্য বিচারের খবরগুলো ছাপা হতো। এখন কিছুই ওর মনে নেই।
না। জজের মনে মিসেস ক্রেলের অপরাধ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাকে অবশ্য ক্ষমাও করা যায় কিছুটা পরিমানে। ঘর করা এই শিল্পীগুলোর সঙ্গে খুব সহজ কাজ নয়। ঐ ক্রেলের জীবনে যতদূর জানে সব সময় থাকতো একটা না একটা মেয়ে।
আর বোধ হয় খুব তীব্র ছিলো ঐ মহিলার অধিকার বোধটা। মেনে নিতে পারেননি বাস্তবকে। নিশ্চিন্ত হয়ে যেতেন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে এখনকার দিন হলে। তারপর জর্জ মেহিউ খুব সাবধান হয়ে বললেন, একটু ভেবে দেখি দাঁড়ান–এখন ঐ মেয়েটি মামলার লেডি ডিটিশাম।
তারও সেইরকম ধারণা, পোয়ারো জানালো।
মাঝেমধ্যে ওর কথা থাকে খবরের কাগজে। বহুবার ওকে আদালতে যেতে হয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য। শুনেছি প্রচুর টাকা পয়সাও আছে মেয়েটার। ডিটিশামকে বিয়ে করার আগে ও বিয়ে করেছিলো সেই বিখ্যাত অভিযাত্রীকে। সেই জাতীয় মেয়ে এলসা যারা বেঁচে থাকতে চায় সব সময় খবর হয়ে আর সুখ্যাতির চেয়ে কুড়োতে চায় বেশি কুখ্যাতি।
আচ্ছা। মিসেস ক্রেলের হয়ে কি আপনার ফার্ম অনেক দিন কাজ করেছিলো? হঠাৎ আলোচনার মোড় ফেরালো পোয়ারো।
মাথা নাড়লো জর্জ মেহিউ, জোনাথান অ্যান্ড জোনাথন সলিসিটার ফার্ম প্রথম দিকে মহিলার হয়ে মামলা দেখাশোনা করতো। পরে আর কাজ করতে চাইলেন না মিঃ জোনাথন। আমাদের, অর্থাৎ কথাবার্তা বলে আমার বাবার সঙ্গে নিজের ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলেছিলেন মামলাটা। মিঃ জোনাথনের সঙ্গে যদি আপনি যোগাযোগ করেন তবে অনেক সুবিধে হতে পারে আপনার। অবশ্য ব্যবসা থেকে উনি এখন অবসর নিয়েছেন, সত্তরের ওপর বয়সও হয়ে গেছে। তবে উনি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন ক্রেল পরিবারের সঙ্গে। এসব কথা উনি অনেক ভালো বলতে পারবেন আমার চেয়ে।
জর্জ মেহিউ পোয়ারোর সঙ্গে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো, কথা বলে দেখতে পারেন আমাদের ম্যানেজিং ক্লার্ক এডমণ্ডসের সঙ্গে, এই মামলাটা নিয়ে উনি খুব মাথা ঘামিয়ে ছিলেন।
কম কথার মানুষ এডমণ্ডস। পোয়ারোকে তিনি আইন জানা লোকের মতো ভালোভাবে সাবধানী চোখে বিচার করতে লাগলেন। তারপর বললেন, মনে পড়েছে ক্রেলদের কেসের কথা।…বিশ্রী কেলেংকারীর ব্যাপার। পোয়ারোকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লক্ষ্য করার পর বললেন, আবার ও সব নিয়ে এতোকাল পরে কেন খোঁচাখুঁচি?
সব সময়ে আদালতের রায়টাই শেষ কথা হতে পারে না, এডমণ্ডস মাথা নাড়াতে নাড়াতে এই কথাটা বললেন, আমি আপনার কথাটাই যে ঠিক একথা বলতে পারছি না।
নিজের মনেই কিন্তু বলে চললো পোয়ারো, একটি মেয়ে ছিলো মিসেস ক্রেলের।
হা মনে পড়ছে। ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো বিদেশে আত্মীয়দের কাছে, তাই না?
ওর মা নিরপরাধ মেয়েটির দৃঢ় বিশ্বাস।
কাঁকড়া ভ্রূ মিঃ এডমণ্ডসের কুঁচকে উঠলো, ও এই ব্যাপার তা হলে?
আপনি আমায় তেমন কিছু খবর কি দিতে পারেন মেয়েটির বিশ্বাসের সমর্থনে?
যেন চমকে উঠলেন এডমণ্ডস, তারপর মাথা ধীরে ধীরে নাড়িয়ে বললেন, তেমন কিছু খবর তো নেই আমার বিচার বিবেচনায়। আমি প্রশংসা করি মিসেস ক্রেলকে। উনি ছিলেন একজন সত্যিকারের ভদ্রমহিলা আর যাই হোন না কেন। পাঁচজনের মত আর নয়। বেহায়াপনা ছিলো না একটুও। ঋজু ইস্পাতের মত, শুধু জড়িয়ে পড়েছিলেন একটা বাজে ঘটনার মধ্যে, তবে ভুল করেননি নিজের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিতেও। দারুণ মহিলা।
কিন্তু খুনী তো বটেই? খোঁচা মারলো যেন পোয়ারো।
ভ্রূ কুঁচকে উঠলো এডমণ্ডসের, এবং অনেক বেশি স্বচ্ছন্দে কথা বলতে শুরু করে দিলেন আগের চেয়ে। দিনের পর দিন ঠিক এই প্রশ্নটাই নিজেকে করেছি আমি। শান্তভাবে কাঠগড়ার মধ্যে বসে থাকতেন। তখন নিজের মনে আমি বলতাম, কিছুতেই বিশ্বাস করবো না আমি। তবে মিঃ পোয়ারো যদি আমার কথা মানেন তাহলে আমি বলবো একটুও অবকাশ ছিলো না অন্য কিছু বিশ্বাস করার। মিঃ ক্রেলের বীয়ারের গ্লাসে বিয লতার ঐ বিষ নিজের থেকে চলে আসতে পারে না। মেশানো হয়েছিলো ওটা আর যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আর কে করতে পারে মিসেস ক্রেল ছাড়া? পোয়ারোকে আবার তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে দেখলেন এডমণ্ডস,-ও, ওই প্রশ্নটাই কি ঘুরপাক খাচ্ছে আপনার মাথায়?