- বইয়ের নামঃ ফাইভ লিটল পিগস্
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ বুক স্ট্রিট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
ফাইভ লিটল পিগস্
১.১ আসামী পক্ষের উকিল
ফাইভ লিটল পিগস্ (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
ভূমিকা :- কার্লা লেমারচেন্ট
আগ্রহ আর প্রশংসার দৃষ্টিতে এরকুল পোয়ারো লক্ষ্য করছিলো মেয়েটিকে। মেয়েটি ঘরের মধ্যে এলো চাকরের পেছন পেছন।
তেমন কোনো বৈশিষ্ট্য ওর লেখা চিঠিতে ছিলো না। সাদামাঠা একটা অনুরোধ মাত্র দেখা করার জন্যে, চিঠিটিতে কেন দেখা করতে চায় তার আভাস বিন্দুমাত্র দেওয়া হয়নি। ব্যবসাদারী ঢংয়ে ছোট্ট করে লেখা চিঠি, হাতের লেখার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে শুধু বোঝা যায় যে একজন কমবয়সী মহিলা কার্লা লেমারচেন্ট।
এখন সশরীরে সেই মেয়েটিই হাজির। ছিপছিপে গড়ন, লম্বা, বয়স কুড়ি-বাইশ হবে। মানুষ দুবার বাধ্য তাকাতে এই ধরনের যুবতীদের দিকে। পোষাক দামী ও সুন্দরও বটে, বেশ সামঞ্জস্য আছে কাঁধ আর মাথার মধ্যে। বেশ পুরু প্রাটি, চমৎকার নাকের গড়নটিও, সুস্পষ্ট চিবুকে দৃঢ়তার ছাপ। বেশ সতেজ প্রাণবন্ত চেহারা। এই সজীব ভাবটা রূপের চেয়েও বেশি সুস্পষ্ট।
এরকুল পোয়ারোর নিজেকে বেশ বুড়ো বুড়ো লাগছিলো ঘরে মেয়েটি আসার আগে, এখন কেটে গেছে সেই ঝিমুনিটা, বেশ সতেজ আর প্রাণবন্ত লাগছে নিজেকেও।
ওকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে পোয়ারো এগিয়ে এলো এবং বুঝতে পারলো তখনই পোয়ারোকে তীক্ষ্ণ ভাবে মেয়েটি তার গাঢ় ধূসর রঙের চোখ দিয়ে জরীপ করছে।
মেয়েটি পোয়ারোর বাড়িয়ে দেওয়া সিগারেট বসার পর ধরালো। পোয়ারোকে লক্ষ্য করেই চললো দু-একটা টান দিয়ে।
পোয়ারো খুব শান্ত গলায় বললো, হ্যাঁ, আগেই স্থির করে নিতে হবে মনটা, তাই নয় কি?
মেয়েটি চমকে উঠল, মাফ করবেন, ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা। খুব আকর্ষণীয় মেয়েটির কণ্ঠস্বর, খসখসে ভাব আছে একটু, তবে ভীষণ ভাল লাগে সেটা।
মনস্থির করতে তো পারছেন না আপনি, ভাবছেন এসে পড়েছেন একটা হাতুড়ের কাছে, না আমার মতো সত্যিসত্যিই লোকই দরকার আপনার।
হেসে ফেললো মেয়েটি, আঁ…হা…ব্যাপার এই ধরনের আর কি। মঁসিয়ে পোয়ারো সত্যি বলতে কি, যা কল্পনা আমি করেছিলাম আপনার কিন্তু তার সঙ্গে মিল নেই।
এবং বৃদ্ধ আমি, তাই না? যা ভেবে আপনি এসেছিলেন তার চেয়েও বৃদ্ধ?
হ্যাঁ..তাও বটে অনেকটা…, মেয়েটি একটু দ্বিধাভাবে বললো, একটু স্পষ্টাস্পষ্টি কথাটা আমি বলতে চাই, দেখুন…আমার প্রয়োজন…প্রয়োজন নয় শুধু…আমার প্রয়োজন সবার সেরা সাহায্য।
থাকতে পারেন নিশ্চিত, সবার সেরা আমিই।
দেখছি আদৌ আপনি বিনয়ী নন, বললো কালা, ঠিক আছে আপনার কথা আমি মেনে নেবো মনে করছি।
পোয়ারো ধীর গলায় বলল, সকলকে যে পেশীর সাহায্য নিয়েই কাজ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দেখুন হাঁটা হামাগুড়ির সাহায্যে, পায়ের ছাপের মাপ নেওয়া, সিগারেটের টুকরো কুড়নো বা চাপে নুয়ে পড়া ঘাস ইত্যাদি নিয়ে আমি কাজ কারবার করি না। আমার কেবল চেয়ারে বসে চিন্তা করতে পারলেই চলে। শুধু এইটা কাজ করে…পোয়ারো নিজের ডিমের মতো মাথাটা দেখালো।
জানি। আর আপনার কাছে সেই জন্যেই এসেছি। দেখুন এক অসাধ্য-সাধন করতে হবে আপনাকে।
একটু নড়েচড়ে বসলো এরকুল পোয়ারো, ব্যাপারটা বেশ মনে হচ্ছে ইন্টারেস্টিং হবে।
কার্লা লেমারচেন্ট জোরে নিঃশ্বাস নিলো, তারপর মাথা নিচু করে বললো, কার্লা নয়, আমার নাম ক্যারোলিন, আমার মায়ের নাম মিলিয়ে আমার নাম রাখা হয়েছিলো, আবার একটু থেমে নিয়ে বললো, আমাকে লেমারচেন্ট বলে সবাই জানলেও আমার আসল পদবী ক্রেল।
সামান্য চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো পোয়ারোর কপালে, ক্রেল মনে হচ্ছে যেন শোনা শোনা।
শিল্পী ছিলেন আমার বাবা, বেশ সুখ্যাতি ছিলো ছবি আঁকার ব্যাপারে–বাবা খুব নাম করা চিত্রশিল্পী ছিলেন অনেকে বলেন। তাই মনে হয় আমার…।
প্রশ্ন করলো পোয়ারো, অ্যামিয়াস ক্রেল?
হ্যাঁ। …মেয়েটি একটু থেমে তারপর বললো, আমার মা ক্যারোলিন ক্রেলের বিচার হয়েছিলো বাবাকে খুন করার জন্যে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ,…মনে পড়ছে বটে এখন…তবে খুব আবছা ভাবে। তখন আমি বিদেশে ছিলাম। কিন্তু অনেকদিন আগেকার ঘটনা সেটা।
ষোলো বছর, ধীরে ধীরে উচ্চারণ করলো মেয়েটি। ভীষণ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ওর মুখটা। এক অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা শুধু চোখগুলোতে।
বুঝতে পারছেন আমার কথা? …মার শাস্তি হয়েছিলো বিচারে। অবশ্য ফাঁসি দেওয়া হয়নি, কারণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির জন্যে ওঁদের মতে অনেকটা কমে গিয়েছিলো অপরাধের গুরুত্ব। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় মাকে। তবে মা জেলেই এক বছরের মাথায় মারা যান। বুঝতে পারছেন? …সব কিছু হলো…ঘটলো…এবং হয়ে গেলো শেষও…।
অতঃপর, খুব ঠান্ডা গলায় পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
হাতের মুঠি দুটো কার্লা লেমারচেন্ট নামের মেয়েটির শক্ত হয়ে উঠলো, ওর বলার মধ্যে থেমে থেমে বললেও অদ্ভুত ধরনের এক প্রত্যয় ছিলো। ও বলতে লাগলো,
ব্যাপারটা আপনাকে ঠিক মতো বুঝতে হবে–মানে যা বলতে চাইছি আমি। যখন ঘটেছিলো ব্যাপারটা তখন বয়স আমার প্রায় পাঁচ। তখন ব্যাপারটা বোঝার মতো বয়স আমার নিশ্চয়ই ছিলো না। মাকে…বাবাকে ঠিকই মনে আছে, আর আমাকে হঠাৎ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয় তাও আমার মনে আছে। মনে আছে মোটাসোটা চাষী বৌ আর শুয়োরগুলোর কথাও…আমাকে স্নেহ করতো সবাই…আমার দিকে সবাই কেমন অদ্ভুতভাবে তাকাতো আমি সে কথাও ভুলিনি। এটা বুঝতে পারতাম কোথাও কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে, যেমন বুঝতে পারে সব বাচ্চা ছেলেমেয়েরা, কিন্তু সেটা যে কী তা জানতাম না।