ব্যাটেল আবার কথা শুরু করলেন, কত তুচ্ছ জিনিস থেকে গুজবের জন্ম। ধরুন, কোন রুগী মৃত্যুর আগে ডাক্তারকে কিছু সম্পত্তি দিয়ে গেল কৃতজ্ঞতাবশতঃ। সেটা যদি বেশিই হয় ক্ষতি কি? তাও দেখবেন কত কথা উঠবে–
ডাঃ রবার্টস রুগীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি তেমন কোনদিন পাননি–একজন পঞ্চাশ পাউন্ড দিয়েছিলেন, আর একজন একটা সোনার রিস্টওয়াচ।
এই ধরনের পেশায় কত যে বিপদ ধীরে ধীরে বলে চলেন ব্যাটেল হয়তো নির্দোষ ঘটনা, অথচ কেউ ব্ল্যাকমেল করতে চায়। কতরকমের স্ক্যান্ডেল রটে, একজন ডাক্তারের পক্ষে কত মারাত্মক
আর বলবেন না, বিশেষ করে ঝামেলা বাধায় হিস্টিরিয়ার মহিলা রোগী।
ভদ্রমহিলার কথা শোনার পর আমারও তাই মনে হয়েছিল।
কার কথা বলছেন–মিসেস ক্যাডাক? খুবই সাংঘাতিক মহিলা!
মিসেস ক্র্যাডাক? ব্যাটেল এমন ভাব করলেন যেন ঠিক মনে পড়ছে না। বোধহয় বছর তিনেক আগেকার ঘটনা, ঠিক মনে নেই।
না, বছর পাঁচেক আগের ব্যাপার। ভদ্রমহিলা বোধহয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। স্বামীর কাছে ডাক্তার রবার্টসের নামে বানিয়ে বানিয়ে কত কি বলছিলেন। স্বামী বেচারাও তাই সত্যি ভেবে অশান্তিতে বাকি জীবনটা কাটালেন। সকালে দাড়ি কামাবার সময় তার গলাটা কেটে গেছিল, নীচুমানের সেভিং ব্রাশ দূষিত ছিল বোধহয়, জীবানু রক্তে সংক্রামিত হয়ে তিনি মারা যান। ভদ্রমহিলা তারপর লণ্ডন ছেড়ে চলে যান। মারা যান বিদেশে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যাপারটা, মিথ্যে কথা বলে মনে মনে বেশ খুশি হয়ে উঠলেন ব্যাটেল, কোথায় যেন মারা গেছিলেন ভদ্রমহিলা?
খুব সম্ভবত মিশরে।
ডাক্তারদের আর একটা সমস্যা হল, ধরুন কোন রুগীর আত্মীয় রুগীকে স্লো পয়জন করছে, ডাক্তারকে কোন কারণে চুপচাপ থাকতে হচ্ছে, কিন্তু রুগী মারা গেলে আত্মীয়রা হয়ত ডাক্তারের ঘাড়েই দোষ চাপাল–কি ঝামেলা ভাবুন।
ডাক্তার রবার্টসের এ ধরনের কোন বিপদ হয়নি।
আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বিদায় নিলেন ব্যাটেল। মোটামুটি সব খবরই জানা হয়ে গেছে তার। মিস বার্জেস সাত বছর ডাক্তার রবার্টসের চেম্বারে আছেন। এ পর্যন্ত রবার্টসের হাতে জনা-তিরিশ রুগী মারা গেছে। রবার্টসের পশার খুব ভালো। শেটানের ছবি মিস বার্জেসকে দেখিয়েছিলেন ব্যাটেল। কিন্তু মিস বার্জেস চেনেন না শোনকে। নোটবইয়ে কয়েকটা কথা নোট করে নিলেন ব্যাটেল। মিসেস গ্রেওস? খুব সম্ভব নয়।
মিসেস ক্রাডাক? কোন উত্তরাধিকারী নেই।
বিয়ে করেননি।
রুগীদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তদন্ত চালাতে হবে।
নোটবই বন্ধ করে ওয়েসেক্স ব্যাঙ্কের দিকে পা বাড়ালেন ব্যাটেল। রবার্টসের ব্যাঙ্ক একাউন্ট সেখানেই।
.
সুপারিনটেনডেন্ট ব্যাটেল বিষণ্ণ মুখে বসে ছিলেন। পোয়ারোর সঙ্গে একই টেবিলে লাঞ্চ করেছেন তিনি একটু আগে। পোয়ারো ফিরে তাকালেন ব্যাটেলের দিকে, আপনার পরিশ্রমটা তাহলে মাঠে মারা গেল?
গোলমেলে ব্যাপার। ব্যাঙ্কের পাসবই-এ এ-পর্যন্ত সেরকম সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না।
ডাঃ রবার্টসকে কি রকম মনে হল?
আমার মনে হয় না রবার্টস খুন করেছেন শেটানকে। তাকে খুন করা যে কত বড় ঝুঁকি–রবার্টস সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। শেটান ঘুম ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠতে পারতেন।
পাসবই পরীক্ষা করে কি বুঝলেন?
রবার্টস কোন পেশেন্টের সম্পত্তি পাননি। তাই সম্পত্তি লাভের জন্য যে কাউকে খুন করেছেন এ কথাও বলা যাচ্ছে না। তার নিজের অবস্থা খুবই ভালো, অবিবাহিত। এক যদি স্ত্রীকে খুন করে থাকেন, তবে মিসেস ক্র্যাডক নামে এক পেশেন্টকে নিয়ে কিছু একটা গোলমাল বেধেছিল শোনা যায়। এ ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখা দরকার। ভাবছি গোয়েন্দা দপ্তরের কোন চালু ছোকরাকে এ ব্যাপারটার ভার দেব।
ভদ্রমহিলার স্বামীর কি খবর?
সে ভদ্রলোক অ্যানথ্রাক্স রোগে মারা যান। সে সময় বাজারে এক ধরনের কম দামী সেভিং ব্রাশ বেরিয়েছিল, সে গুলোর কয়েকটাতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল। এ নিয়ে কোম্পানির নামে বোধহয় কি একটা মামলাও হয়েছিল কোর্টে।
খুনীর পক্ষে এটাও কিন্তু মস্ত বড় সুযোগ। গম্ভীরভাবে বললেন পোয়ারো।
আমিও এ-ব্যাপারে ভেবেছি। যদি মিসেস ক্র্যাডাকের স্বামীর সঙ্গে রবার্টসের কোন কারণে গণ্ডগোল বেধে থাকে–তবে এইসব হল অনুমাণ, কোন ভিত্তি নেই। সে থাক, আপনি কি ভাবে এগোবেন ভাবছেন? অবশ্য আমাকে বলতে যদি কোন আপত্তি না থাকে
না, না। আপত্তির কিছুই নেই। আমিও ডাক্তার রবার্টসের সঙ্গে দেখা করব।
একই দিনে দুজন। ভদ্রলোক তো ঘাবড়ে যাবেন খুবই।
আমি আপনার মত অতীত সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করব না। ভদ্রলোক যাতে সন্দেহ করতে না পারেন সেইভাবেই এগোব। আমার প্রশ্ন হবে ব্রীজ নিয়ে।
আবারও ব্রীজ? যাক আপনি যেভাবে খুশি আপনার কাজ করবেন। মনে হয় কর্নেল রেস কয়েকদিনের মধ্যেই ডেসপার্ডের খবরাখবর এনে দিতে পারবেন। আর মিসেস অলিভারের পক্ষেও অনেক খবর আনার সুবিধা আছে। মেয়েরাই মেয়েদের খবর যোগাড় করতে ওস্তাদ।
একটু পরেই ব্যাটেল পা বাড়ালেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দিকে। আর ডাঃ রবার্টসের চেম্বারের দিকে এগোলেন পোয়ারো।
পোয়ারোকে দেখে রবার্টসের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। ঠাট্টার সুরে বলে উঠলেন, একদিনে দুই টিকটিকি! হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে সন্ধ্যের মধ্যেই ওয়ারেন্ট বেরিয়ে যাবে আমার নামে।