- বইয়ের নামঃ প্লেয়িং উইথ দ্য কার্ডস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, গোয়েন্দা কাহিনী
প্লেয়িং উইথ দ্য কার্ডস
১. অদ্ভুত পার্টি চলছিল
মিঃ শেটানের অদ্ভুত পার্টি চলছিল : ডিনার টেবিলে আলোচনা চলছে এখন?
বিষ-ই হল মহিলাদের প্রধান হাতিয়ার। মন্তব্য করে ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলেন মিঃ শেটান, আপনারা কি বলেন? অবশ্য বলবারই বা কি আছে। কত মহিলা তো খুন করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শেটানের কথায় সায় দিয়ে মিসে অলিভার বলেন, যা বলেছেন।
পোয়ারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শেটানের দিকে তাকালেন। ডিনার টেবিলে প্রথম দিককার একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন শেটান। ঘরের নীলাভ আলোয় তার দু-চোখের ধূর্ত চাহনী যেন আরও ক্র হয়ে উঠেছে। শেটান কি উদ্দেশ্যে একের পর এক এ ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন? পোয়ারো চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পোয়ারো সহ আজ শেটানের নিমন্ত্রিতের সংখ্যা আটজন। পুলিশ সুপার ব্যাটেল, গোয়েন্দা গল্পের লেখিকা মিসেস অলিভার, সিক্রেট সার্ভিসের কর্নেল রেস এই তিনজনকে-ই পোয়ারো ভালভাবে চেনেন। কিন্তু বাকি চারজন? ডাঃ রবার্টস, মিসেস লরিমার, মিস মেরিডিথ এবং মেজর ডেসপার্ড এদের পরিচয় পোয়ারোর অজ্ঞাত।
পোয়ারোর মনে পড়ল, শেটান তাঁকে জীবন্ত অপরাধ প্রদর্শনী দেখতে আজকের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিসের ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন তিনি? ডিনারের শেষে হঠাৎ খুনের বিভিন্ন পদ্ধতির কথা আলোচনার অর্থ-ই বা কি?
চারপাশে তাকিয়ে নিলেন শেটান। তার মুখে সূক্ষ্ম শয়তানী হাসি, তবে আমি বলব–কাউকে খুন করতে ডাক্তারদের জুড়ি নেই। সুযোগ সুবিধাও বেশি
শেটানের কথা শেষ হবার আগেই ডাঃ রবার্টস প্রতিবাদের সুরে চেঁচিয়ে উঠলেন, এ আপনার ভুল ধারণা মিঃ শেটান। কখনো সখনো মানুষের মৃত্যুর কারণ আমরা ডাক্তাররা হই বটে তবে সে নিছক দুর্ঘটনা। মানুষ খুন? না না কক্ষনো না।
শেটানের পরবর্তী মতামতের অপেক্ষায় আগ্রহে বসে রইলেন পোয়ারো।
একটু পরেই–
আমি যদি ভাবি কাউকে খুন করব– থমথমে গলায় শেটান বললেন, তবে খুব সোজা পথেই এগোব। এই ধরুন শিকার করতে গিয়ে কাউকে মেরে বসা লোকে জানবে নিছক দুর্ঘটনা। অথবা কোন রুগীকে ভুল করে ওষুধের বদলে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেওয়া- একটু চুপ করে আবার সকলের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিলেন শেটান, তবে কথা হল এত অভিজ্ঞ লোক বর্তমান থাকতে আমি এসবে মতামত দেবার কে?
সমস্ত ঘর নিস্তব্ধ। পোয়ারো লক্ষ্য করলেন শেটানের মুখে সেই মৃদু শয়তানী হাসি।
.
ডিনারের পর ড্রয়িংরুমে জমায়েত হলেন সকলে। সেখানে ব্রীজ খেলার টেবিল পাতা। মিঃ শেটানের অনুরোধে চারজন তাস টেনে পার্টনার নির্বাচন করে ব্রীজ খেলতে বসলেন। এদের মধ্যে তাস খেলার সব থেকে দক্ষ মিসেস লরিমার–তার উৎসাহও বেশি। একদিকে ডাক্তার রবার্টস আর মেজর ডেসপার্ড। টেবিলের অন্য দিকে মিসেস লরিমার এবং সুন্দরী মিস মেরিডিথ।
অন্য চারজনকে নিয়ে শেটান এলেন পাশের ঘরে। এ ঘরেও ব্রীজ খেলার বন্দোবস্ত হয়েছে। মিঃ শেটানের একান্ত অনুরোধে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেলতে বসলেন সকলে। শোন নিজে খেলবেন না।
একটু বাদেই পাশের ঘরে পা বাড়ালেন তিনি। খেলা পুরোমাত্রায় জমে উঠেছে। ওয়ান হার্ট, পাস, থ্রি ক্লাবস, স্পেডস, ফোর ডায়মন্ডস, ডবল। ফোর হার্টস বিভিন্ন ডাকগুলো ভেসে এল শেটানের কানে। টেবিল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে, চারজনকে দেখছিলেন শেটান। ডাক্তার, মিসেস লরিমার, সুন্দরী মেরিডিথ, মেজর গভীর মনোযোগে খেলে চলেছেন। টেবিলের ঠিক ওপরে একটা শেড দেওয়া আলো জ্বলছে। ঘরের সবটা আলোকিত হয়নি। ছায়া ছায়া আলো আঁধারীর কারুকাজ। ফায়ার প্লেসের কাছাকাছি একটা ইজিচেয়ারে বসে পড়লেন শেটান। মুখে মৃদু হাসি। আজ অফুরন্ত হাসির খোরাক পেয়েছেন তিনি।
মাত্র বারোটা দশ। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন মিসেস অলিভার। এ ঘরের ব্রীজ খেলা শেষ। তাস খেলতে আর কেউ-ই উৎসাহী নন। সবথেকে বেশি হেরেছেন মিসেস অলিভার।
চলুন মিঃ শেটানকে বলে আমরা বিদায় নিই। মিসেস অলিভার বললেন। পাশের ঘরে পা বাড়ালেন সবাই।
শেটানকে দেখা গেল ফায়ার প্লেসের পাশে চোখ বন্ধ করে ঘুমোচ্ছেন। এ ঘরের চারজন কিন্তু দারুণ উৎসাহে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তখনও। মিসেস অলিভার আর সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল খেলার টেবিলের দিকে পা বাড়ালেন। ফায়ার প্লেসের দিকে এগোলেন কর্নেল রেস।
আমরা এবার বিদায় নেব মিঃ শেটান। কোন জবাব এল না। কর্নেল রেস অবাক হলেন–শেটান যেন কেমন অদ্ভুত ভঙ্গীমায় ঘুমিয়ে আছেন–মাথাটা ঝুঁকে পড়েছে সামনে। পোয়ারোর দিকে তাকালেন কর্নেল রেস। একটু এগিয়ে শেটানের কাছাকাছি হতে-ই একটা অস্ফুট আর্তনাদ শোনা গেল কর্নেলের মুখে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে পোয়ারো চমকে উঠলেন শেটানের কোটের ফাঁকে একটা শক্ত জিনিস চকচক করছে।
শেটানের একটা হাত তুলে নিলেন পোয়ারো। আপন মনে মাথা নাড়লেন। ধীরে ধীরে শেটানের হাতটা নামিয়ে দিলেন তিনি।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল একবার এদিকে আসুন।
কি ব্যাপার মঁসিয়ে পোয়ারো? ব্যাটেল ফায়ার প্লেসের কাছাকাছি এগিয়ে এলেন।
শেটানকে ইশারায় দেখালেন কর্নেল রেস। চেয়ারের ওপর ঝুঁকে পড়লেন ব্যাটেল। একটু পরেই ব্যাটেল গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, দয়া করে সকলে এদিকে মনোযোগ দিন।