- বইয়ের নামঃ ঢাকায় তিন গোয়েন্দা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ঢাকায় তিন গোয়েন্দা
০১.
বেশ রহস্যজনক তো! শোনা গেল আরিফ সাহেবের কণ্ঠ।
বাগানে বসে মামার কথাটা কানে গেল কিশোর পাশার। বাংলাদেশী শীতের আমেজ উপভোগ করছে সে। টকটকে লাল গোলাপের ওপর উড়ছে একটা মৌমাছি। তাকিয়ে ছিল সেদিকে, খাড়া হয়ে গেল কান। ঘরের ভেতর থেকে কথা আসছে।– আমার তা মনে হয় না, বললো আরেকটা কণ্ঠ। সব ওর শয়তানী।
হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাচ্ছে কিশোরের। বাংলাদেশে এসেই একটা রহস্য পেয়ে যাচ্ছে না। তো?
একবার দুবার হলে না হয় ধরে নিতাম অ্যাকসিডেন্ট, বলে যাচ্ছে কণ্ঠটা। কিন্তু চার-চারবার একই ঘটনা। বলছে মাল দেয়ার জন্যে কাস্টোমারের বাড়ি ঢুকেছে, বেরিয়ে এসে দেখে উইশীল্ড ভাঙা।
হ্যাঁ, তাই দেখেছি, বললো আরেকটা তরুণ কণ্ঠ। মিথ্যে কথা বলিনি।
মিথ্যে বলছিস, সেটা তো বলছি না আমি, বললো লোকটা। আমি বলতে চাইছি, দোষটা তোর। কারও সাথে ঝগড়া করেছিস, এখন সে শোধ তুলছে…
বিশ্বাস করো, আব্বা, ওরকম কিছুই করিনি আমি!
ঠিক আছে, শান্তকণ্ঠে বললো লোকটা, করিসনি যে প্রমাণ কর। নইলে আমার যা বলার, বলে দিয়েছি। গাড়ি চালানো তোর বন্ধ। সত্যি সত্যি কি হয়েছে, জেনে এসে বলবি, যদি দেখি তোর দোষ নেই, তাহলেই চাবি পাবি।
মাল দিতে অসুবিধে হবে না? সকাল সাতটার মধ্যেই তো মাখন না পেলে রেগে যায় লোকে, ডিম আর দুরে কথা নাহয় বাদই দিলাম…রাতে একবার, সকালে একবার; কবার যাবে তুমি মাল ডেলিভারি দিতে?
সেটা তোর ভাবনা নয়। ঠিক সময়েই মাল পাবে কাস্টোমার। তোর এখন কাজ পিকআপে মাল বোঝাই করা আর কাস্টোমারের ঘরে রেখে আসা, ব্যস। দুই বেলা গাড়ি আমিই চালাতে পারবো।
এনায়েত, আবার শোনা গেল আরিফ সাহেবের কণ্ঠ, আমার এখনও মনে হচ্ছে, রহস্য একটা আছে এর মধ্যে।
তা তো আছেই, স্যার, হেসে বললো ছেলেটার বাবা। আর সেটা কি আমি খুব ভালোই জানি। কারও সঙ্গে নিশ্চয় গোলমাল বাধিয়েছে কচি, সে এখন শোধ তুলছে।…আজ উঠি, স্যার।
বসো, টাকা নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ, দুধ-ডিম-মাখন, তিনটেই ডবল করে দিয়ে যেও কদিন। আমার ভাগ্নে এসেছে তার বন্ধুদের নিয়ে, আমেরিকা থেকে। দেখি, বিলটা দেখি, কতো হলো?
খানিক পরে সামনের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল মাঝারি উচ্চতার একজন মানুষকে। গায়ের রঙ কালো। ভোতা নাক। খাটো করে ছাঁটা চুল। দেখেই কিশোরের মনে হলো, এই লোকটাও একসময় পুলিশে চাকরি করেছে। বাগানের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরানো একটা টয়োটা পিকআপের দিকে এগিয়ে গেল। গাড়িটার গায়ে সাদা রঙে বড় বড় করে লেখা রয়েছে
এনায়েত উল্লাহ ডেয়ারি ফার্ম।
আমরা সুলভ মূল্যে ডিম, মাখন, দুধ
সরবরাহ করিয়া থাকি।
এনায়েত উল্লাহর পেছনে বেরোলো সতেরো-আঠারো বছরের একটা ছেলে। বাবার মতো কালো না হলেও ফর্সা নয়। গায়ে-গতরে প্রায় মুসার সমান, ভালো স্বাস্থ্য।
গাড়িতে গিয়ে উঠলো লোকটা। ড্রাইভিং সীট থেকে মুখ বের করে বললো, কি হলো, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ওঠ।
গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে রইলো ছেলে। রাগ করে বললো, না, আমি বাসেই যেতে পারবো।
তোর খুশি। তবে যতো যা-ই করিস, চাবি আমি দিচ্ছি না তোকে। আর। একটিবারও ছেলেকে উঠতে সাধলো না এনায়েত উল্লাহ। স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
কিশোরের ওপর চোখ পড়ল ছেলেটার। হাত নেড়ে তাকে ডাকলো কিশোর। এগিয়ে এলো কচি। কি?
আপনার নাম কচি, না?
অবাক হলো ছেলেটা। কি করে জানলে?
ঘরে আপনার কথা বলছিলেন, সব শুনেছি। হাত বাড়িয়ে দিলো কিশোর, আমি কিশোর পশি।
ও, তুমিই চৌধুরী আংকেলের ভাগ্নে। খুব আগ্রহ নিয়ে হাত মেলালো কচি। আর কে কে এসেছে তোমার সঙ্গে?
রবিন আর মুসা। আমার বন্ধু।
এদিক ওদিক তাকালো কচি। নাম তিনটে তাকে অবাক করেছে বোঝা গেল। কোথায় ওরা?
মামার স্টাডিতে পড়ছে রবিন। মুসা হাতুড়ি-বাটাল নিয়ে খুটুর-খাটুর করছে। ঘুঘুপাখি ধরার ফাঁদ বানাচ্ছে। মামী বলেছেন, মধুপুরের গড়ে নিয়ে যাবেন। ফাঁদ পেতে সেখানে ঘুঘু ধরবে সে। হাহ্ হাহ!…তা দাঁড়িয়ে কেন? বসুন।
আমাকে আপনি আপনি করছো কেন? কতো আর বড় হবো তোমার চেয়ে? তুমি করেই বলো। কচি ভাই-টাইয়েরও দরকার নেই। শুধু কচি। একটা চেয়ারে বসলো সে। কবে এসেছো?
এই তো, পরশু রাতে।
ও। তা থাকবে তো কিছুদিন?
থাকবো। এসেছি যখন দেখেই যাবো বাংলাদেশটা। একটা আঙুল মটকালো। কিশোর। আচ্ছা, তোমার আব্বা রাগারাগি করলেন শুনলাম। কি হয়েছে? …বেশি কৌতূহল দেখাচ্ছি না তো?
না না! বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কচি। আর বলো না ভাই। বয়েসে হয় না, বাড়িয়ে দেখিয়ে কত কষ্টে লাইসেন্সটা বাগালাম, অথচ চালাতেই পারলাম না। দুদিন চালাতে না চালাতেই বন্ধ। সহ্য হয়?
হু, বুঝতে পারছি তোমার দুঃখ, সমঝদারের ভঙ্গিতে মাথা দোলালো। কিশোর। কিন্তু ব্যাপারটা কি, বলতে আপত্তি আছে?
চুপ করে রইলো কচি।
বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছি মনে হচ্ছে তো? দাঁড়াও, দেখাচ্ছি, তাহলেই বুঝতে পারবে। পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিলো কিশোর।