- বইয়ের নামঃ বেগুনী জলদস্যু
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
বেগুনী জলদস্যু
০১.
ঘড়ির অ্যালার্মের তীক্ষ্ণ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল মুসার। চোখ মেলে গুঙিয়ে উঠলো সে। গরমের ছুটির দ্বিতীয় সপ্তাহ সবে শুরু হয়েছে। এরই মাঝে বিরক্ত হয়ে উঠেছে কাজ করতে করতে। মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে এখন। ইস, কেন যে। পড়শীদের বাগান সাফ করার দায়িত্বটা নিলো! না নিয়েও অবশ্য উপায় ছিলো না। রবিন আর কিশোরের সঙ্গে ডিজনিল্যাণ্ডে যাবার কথা, অথচ তিন গোয়েন্দার ফাণ্ড প্রায় শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। ডিজনিল্যাণ্ডে যাওয়ার খরচই নেই, তার ওপর পড়ে আছে লম্বা ছুটিটা। টাকা খুব দরকার। অন্য দুজনও বসে নেই। রবিন লাইব্রেরিতে ওভারটাইম করছে। কিশোর খাটছে ওদের ইয়ার্ডে, বাড়তি সময়।
আরেকবার গুঙিয়ে উঠে বিছানা থেকে নামলো মুসা। তাড়াহুড়ো করে কাপড় পরে নিচে রান্নাঘরে এসে দেখলো টেবিলে বসে গেছেন তার বাবা মিস্টার আমান।
কিরে, এতো তাড়াতাড়ি? হেসে জিজ্ঞেস করলেন বাবা।
আর কি! বাগান সাফ! গোঁ গোঁ করে বলে রেফ্রিজারেটরের দিকে এগোলো মুসা, কমলার রস বের করবে।
টাকার দরকার, না? সহজ একটা উপায় বাতলে দিতে পারি। হলদে একটা কাগজ টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিলেন মিস্টার আমান। গতরাতে মেলবক্সে ফেলে গেছে এটা।
চেয়ারে বসলো মুসা। কমলার রস খেতে খেতে চোখ বোলালো কাগজের লেখায়। একধরনের বিজ্ঞাপন। স্থানীয় বিজ্ঞাপন কোম্পানি বাড়ি বাড়ি দিয়ে যায়। পড়তে পড়তে উত্তেজিত হয়ে উঠলো মুসা। লেখা রয়েছেঃ
আপনি কি অভিযানপ্রিয়? ঐতিহাসিক?
বইয়ের পোকা? জলদস্যুদের বংশধর? তাহলে
আপনার জন্যে সুখবর আছে!
ডাকাত, জলদস্যু, ছিনতাইকারী, ঠগ, চোর,
এদের ব্যাপারে কি কোনো গল্প জানা আছে আপনার?
সত্যি ঘটনা? তাহলে আসুন আমাদের কাছে।
প্রতিটি গল্পের জন্যে ২৫ (পঁচিশ) ডলার। করে পাবেন।
তবে শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার কাহিনী বলতে
হবে, আর কোনো জায়গার হলে চলবে না। এবং
এই গল্প নেয়া হবে জুন ১৮ থেকে ২২ তারিখ,
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ ১৩১২ ডি লা ভিনা স্ট্রীট।
খাইছে! বলে উঠলো মুসা। টাকা দিয়ে ভরে ফেলা যাবে! অনেক গল্প জানি আমরা। বিশেষ করে কিশোর আর রবিন। এখুনি যাচ্ছি, দেখাতে। আজ আঠারো, আটটা বেজে গেছে।
আরে বসো, বসো, হাত তুললেন মিস্টার আমান। কোটিপতি পরেও হতে পারবে। নাস্তাটা আগে শেষ করো।
বাবা, অনেক কাজ! আগে লনে পানি দিতে হবে
পেট খালি থাকলে কোনো কাজই করা যায় না। শেষ করো। তোমাকে তো খাওয়ার কথা এতো বলতে হয় না…
কিন্তু বাবা…, থেমে গেল মুসা। হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, আচ্ছা, ঠিক আছে।
বাবার ঠেলে দেয়া ভাজা গরুর মাংসের প্লেটটা টেনে নিলো সে। দ্রুতহাতে রুটি কেটে খাওয়া শুরু করলো। দেখতে দেখতে শেষ করে ফেললো পুরো প্লেট। এরপর ডিম ভাজি। চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল চারটে ডিম। একটা ফুটকেকের অর্ধেকটা শেষ করে ঢকঢক করে পানি খেলো এক গেলাস। উঠে দাঁড়িয়ে ঝুড়ি থেকে একটা আপেল তুলে নিতে নিতে বললো, হয়েছে তো?
মা কাজ করছেন রান্নাঘরে। খুটখাট আওয়াজ হচ্ছে। সেদিকে একবার তাকালো মুসা। এখন পালাতে পারলে বাঁচে। বেরিয়ে এসে যদি আবার কোনো কাজ চাপিয়ে দেন?
মুচকি হাসলেন মিস্টার আমান। হ্যাঁ, চলবে। দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারবে।
বিজ্ঞাপনটা হাতে নিয়ে প্রায় ছুটে ঘর থেকে বেরোলো মুসা। পাশের বাড়ির লনে পানি দিলো। অধৈর্য হাতে সাফ করলো মরা পাতা আর শুকনো ডাল। তারপর সাইকেল নিয়ে চললো কিশোরদের বাড়িতে, অর্থাৎ স্যালভিজ ইয়ার্ডে। সবুজ ফটক এক দিয়ে ঢুকলো ভেতরে, কিশোরের ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপে আরও দুটো সাইকেল দেখা গেল, তার মানে রবিন আর কিশোর আছে। ওগুলোর পাশে নিজেরটাও রেখে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকলো সে। হাতের কাগজটা নেড়ে চেঁচিয়ে বললো, এই দেখো, কি এনেছি!
বলেই চুপ হয়ে গেল। ডেস্কের কাছে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। রবিন হেলান দিয়ে রয়েছে একটা ফাইলিং কেবিনেটে। দুজনের কাছেই দুটো হলদে কাগজ, একই রকম।
পাঁচ মিনিট আগে এসেছি আমি, সেকেণ্ড, রবিন বললো। তোমার মতোই। সাংঘাতিক খবর নিয়ে!
আমি সকালেই পেয়েছি, কিশোর জানালো, ডাকবাক্সে। মনে হচ্ছে টাকা, কামানোর আগ্রহ আমাদের তিনজনের একই রকম।
একটা আর্মচেয়ারে প্রায় এলিয়ে পড়লো মুসা। আল্লাহ কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছি।
সত্যি সত্যি কাজ করলে কখনও বিরক্তি আসে না কারও, শুধরে দিলো কিশোর। চেয়ারে বসলো। বড়জোর ক্লান্তি আসে। সেটাই হয়েছে আমাদের। বুঝতে পারছি, জলদস্যুরা উদ্ধার করবে এবার।
সহজ পথে টাকা উপার্জন, বিড়বিড় করলো রবিন।
কাদের গল্প বলবো? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
কেন, অনেকেই তো আছে, জবাব দিলো কিশোর। ফরাসী জলদস্যু ডা বুচার্ডের কথা বলা যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে সে।
মাথা দোলালো মুসা। হ্যাঁ। এল ডিয়াবলোর কথাও বলতে পারি আমরা।
পারি, একমত হলো রবিন। এরপর আছে ডন সেবাসটিয়ান অ্যালভারো।