ভদ্রলোকের সলিসিটরের সঙ্গে তাঁর উইল নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। দানপত্রে এক ভদ্রলোকের নাম আছে–সিরিয়ায় থাকেন। মনে হয় শেটানের আত্মীয়। এছাড়া শেটানের ব্যক্তিগত কাগজপত্রও ঘাঁটাঘাঁটি করেছি।
চকিতে ডাক্তার রবার্টসের মুখের ওপর একটা কালো ছায়া পড়ল। ব্যাটেলের নজর এড়ায়নি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন ব্যাটেল। কিন্তু সেখানেও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
ডাক্তার রবার্টস সহজ হয়ে উঠলেন আমার কাগজপত্রও নিশ্চয়ই পরীক্ষা করবেন? সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছেন?
না।
তবুও বাধা দেব না। আপনি সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমাকে এক্ষুনি কলে বেরোতে হবে। আলমারি, ড্রয়ারের সব চাবি রেখে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আমার সেক্রেটারিও আপনাকে সাহায্য করবে।
যাবার আগে ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করব আপনাকে। আপনার জন্ম, বিবাহ এইসব।
রবার্টস সোজা হয়ে বসলেন। ছোটবেলায় মোভিউ হোটেলে থেকে পড়াশোনা করতাম। বাবা ছিলেন একটা ছোট মফস্বল শহরের ডাক্তার। আমার যখন পনের বছর বয়স, প্রথমে বাবা মারা যান, তার দু বছর বাদে মা গেলেন। বাবার দেখাদেখি মেডিক্যাল লাইনই বেছে নিলাম।
অন্যান্য ভাইবোন?
কেউ নেই। আমিই একমাত্র সন্তান। এখনও অবিবাহিত। পাশ করার পর এখানে ডাক্তার এমারির সঙ্গে পার্টনারশিপে চেম্বারে রুগী দেখতাম। বছর পনের আগে এমারি অবসর নিয়ে আয়ার্ল্যান্ডে চলে যান। ডায়রীতে তার ঠিকানা পাবেন। চাকরবাকরেরা আমার কোয়ার্টারেই থাকে–একজন বেয়ারা একজন বাবুর্চি আর এক বুড়ি ঝি। চেম্বারে আমার সেক্রেটারী মিস বার্জেস আমাকে সাহায্য করেন, সকাল আটটার মধ্যে চলে আসেন। ডাক্তারীতে আমার আয় বেশ ভালোই। রুগীরা বেশ অবস্থাপন্ন। খুব একটা গোলমেলে রোগ না হলে তারা কেউই সাধারণতঃ মারা যায় না। এই হলো আমার ইতিহাস।
ঠিক আছে। আপনাকে চেনেন এমন চারজন ভদ্রলোকের ঠিকানা দিন, এ শহরের বাসিন্দা হলেই ভাল হয়।
ডাক্তার রবার্টস প্যাডের উপর চারজনের নাম ঠিকানা লিখে দিলেন, প্রত্যেকেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের।
তাহলে আমি চলি। আমার চাবির গোছা রইল। সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি মিস বার্জেসকে বলে যাচ্ছি তিনি যেন আপনাকে সাহায্য করেন। পাশের ঘরেই আছেন–প্রয়োজন হলে ডেকে নেবেন মিস বার্জেসকে।
ডাক্তার রবার্টস পাশের ঘরে সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
ব্যাটেল কাজে লেগে পড়লেন। এখানে তেমন কিছু খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। রবার্টস তাকে সব কিছু পরীক্ষা করবার অনুমতি দিয়ে গেলেন। তিনি নিশ্চয়ই বোকা নন। আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলেন পুলিশ আসবে, তাই যা ব্যবস্থা করার করে রেখেছেন। তবু ব্যাটেলের মনে হল কিছু পেলেও পেতে পারেন।
সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল প্রথমে ড্রয়ারগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন, ব্যাঙ্কের পাশবইটাও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, রুগীর নাম ধাম লেখা খাতাটা পরীক্ষা করলেন। বিষের আলমারীটা পরীক্ষা করেও নিরাশ হলেন। চিঠিপত্রের ফাইলেও সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া গেল না। যা খুঁজছিলেন তা পেলেন না ব্যাটেল। একটু হতাশা হয়ে পড়লেন। বেল টিপে ডাকলেন মিস বার্জেসকে।
মিস বার্জেস এসে দাঁড়াতে ব্যাটেল একটা চেয়ারে বসতে বললেন। স্পষ্টই বোঝ যাচ্ছে মিস বার্জেস একটু রেগে গেছেন। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে প্রশ্ন করলেন ব্যাটেল, সমস্ত শুনেছেন নিশ্চয়ই। কি সাংঘাতিক নোংরা ব্যাপার দেখুন দেখি। আমাদের সন্দেহ চারজনের ওপর, এর মধ্যে কেউ একজন খুনটা করেছে। মিঃ শেটানকে আপনি চিনতেন? কাগজে তো প্রায় তার সম্পর্কে কত মজার মজার কথা লেখা হত–সেগুলো নিশ্চয়ই পড়েছেন?
মিঃ শেটানকে আমি চিনতাম না, আর বাজে খবর পড়ে নষ্ট করার মত আমার সময় নেই।
তা ঠিক। ব্যাটেল মাথা দোলালেন, একটা কথা কি জানেন, এই চারজনই বলছে মি. শেটানকে তারা খুব ঘনিষ্টভাবে চেনে না। তা তো হতে পারে না। নিশ্চয়ই কেউ মিথ্যে বলছে, আর সেটাই আমাদের খুঁজে বার করতে হবে।
মিস বার্জের্স নির্বিকারভাবে বসে রইলেন। ব্যাটেল বুঝতে পারলেন কোনভাবেই মিস বার্জেসের কাছ থেকে কিছু কথা আদায় করা যাবে না। তবুও হাল ছাড়লেন না ব্যাটেল।
আমাদের কত দিকে কত ঝামেলায় মাথা ঘামাতে হয় কি বলব। ধরুন, কোন মেয়ের কাছ থেকে কোন স্ক্যান্ডাল শোনা গেল। কারো সম্পর্কে গুজবে কান দেওয়া উচিত নয়, তবু আমরা ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে পারি না, নজর রাখতে হয়–অবশ্য মেয়েরাই গুজব ছড়াতে ওস্তাদ।
আপনি কি বলতে চান, কেউ ডাক্তার রবার্টসের নামে কুৎসা রটাচ্ছে।
না, ঠিক তা নয়, ব্যাটেল সতর্কভাবে এগোলেন, ধরুন কোন রুগী হঠাৎ মারা গেলেন, সাধারণলোকের কাছে মৃত্যুটা সন্দেহজনক। পাঁচজন বলতে লাগল। অবশ্য এসব ব্যাপারে ডাক্তারকে সন্দেহ করা খুবই অনুচিত।
কেউ নিশ্চয়ই আপনাকে মিসেস গ্রেওসের কথা বলেছে। ঐ সব বুড়িদের ধারণা সবাই বুঝি তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চায়। এমনকি নিজের ডাক্তারকে তার অবিশ্বাস। ডাক্তার রবার্টসের আগে আর তিনজন ডাক্তারের রুগী ছিলেন মিসেস গ্রেস। রবার্টসকেও তাঁর সন্দেহ হত। এরপর তিন চারজন ডাক্তারের কাছে ঘোরার পর শেষ অবধি ডা. ফার্মারের কাছে গেলেন। তার চিকিৎসাধীনে থাকার সময়ই মারা যান। সবাইকেই তার সন্দেহ।