আপনাকে এমন একজনের সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হবে, যে এরমধ্যেই দুটো খুন করেছে। প্রয়োজন হলে তৃতীয় খুন করতেও তার হাত কাঁপবে না। পোয়ারোর শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
আমাকে সাবধান করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এ রহস্যের শেষ না দেখে আমি ছাড়ছি না। আমরা যে সমস্ত খবর জোগাড় করব সবই সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলকে জানিয়ে দেব। অবশ্য সমস্ত ঘটনা থেকে আমার সিদ্ধান্ত কাউকে জানাব না।
কর্নেল রেস উঠে দাঁড়ালেন, ঠিক আছে। ফের ডেসপার্ড-এর খবর দু চারদিনের মধ্যে এনে দেব।
আমি ঠিক কি ধরনের খবর চাইছি বুঝতে পারছেন তো?
বুঝতে পেরেছি। কোন শিকার দুর্ঘটনা বা ওই জাতীয় কিছুর সঙ্গে ভদ্রলোক জড়িত ছিলেন কিনা, এই তো?
মাথা নাড়লেন ব্যাটেল। কর্নেল রেস সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
মিসেস অলিভার জিজ্ঞাসা করলেন, ভদ্রলোক কে বলুন তো?
সেনা বিভাগের একজন বড় অফিসার। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ঘুরে এসেছেন।
তাহলে ঠিকই ভেবেছিলাম। ভদ্রলোক সিক্রেট সার্ভিসের অফিসার। মিসেস অলিভার মৃদু হাসলেন তাই তো, তা না হলে মিঃ শেটানই বা কেন ওকে ডিনারে ডাকবেন। চারজন খুনি, চারজন গোয়েন্দা। একজন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের, একজন সিক্রেট সার্ভিসের, একজন বেসরকারী আর বাকি রইলাম আমি–কাল্পনিক রহস্য উপন্যাসের–বাঃ! প্ল্যানটা ভালই করেছিলেন শেটান।
ব্যাটেল হঠাৎ বলে উঠলেন, আপনার কি মনে হয় মিঃ পোয়ারো, কোন পথে এগোলে রহস্যের হদিশ মিলবে?
মনস্তত্বই হচ্ছে আসল। আজ রাতের ডিনার পার্টির অতিথিদের চরিত্র সম্পর্কে আমরা কিছু কিছু জানি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, লক্ষ্য করেছি এদের প্রত্যেকের ব্রীজ খেলার ধরন, হাতের লেখা, স্কোর রাখার ধরন–এ সমস্ত থেকেই এদের মনস্তত্ব কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তবে এই খুনের একটা ব্যাপার আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, খুনির মনের জোর অসাধারণ। অহঙ্কার খুব বেশি।
আপনি তো এদের চারজনের ব্রীজ খেলার ধরন নিয়ে খুব ভাবনা চিন্তা করছিলেন।
হ্যাঁ, কিন্তু সেদিক দিয়ে বিচার করতে গেলে কাউকেই বাদ দেওয়া যাবে না। সুতরাং ওদিকে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা আছে–অতীত। অতীতের গোপন আবরণ খসে গেলেই পাব সত্যের সন্ধান। মিঃ শেটানের বিশ্বাস ছিল এরা প্রত্যেকেই খুনি। তিনি কি কোন প্রমাণ পেয়েছিলেন, না সবটাই তার কল্পনা? আজ এসব কিছুই জানা যাবে না।
চারজনই খুনি আর তার প্রমাণ শেটানের হাত মজুত ছিল, এ আমার বিশ্বাস হয় না। ব্যাটেল মাথা নাড়লেন।
হতে পারে। হয়ত কাউকে তিনি খুনি বলে সন্দেহ করেছিলেন, কিন্তু প্রমাণ ছিল না। তখন গল্প করতে করতে অতিথিদের কাছে বিশেষ ধরণের সেই খুনের পদ্ধতির কথা বললেন। কেউ হয়ত গম্ভীর হয়ে উঠল, কারোর চোখের পলক পড়ল না বা কেউ কথা ঘোরাতে চেষ্টা করল–সবই তিনি লক্ষ্য করলেন। এ ভাবে উদ্দেশ্য বিহীনভাবে ছুঁড়ে দেওয়া কথাতে আসল অপরাধী মনে মনে অস্থির হয়ে পড়বে। একটা বা দুটো ক্ষেত্রে শেটানকে এরকম চালাকি করতে হয়েছিল। অন্য ক্ষেত্রে হয়ত তার হাতে প্রমাণ ছিল। তবে পুলিসে ধরিয়ে দেবার মত অত জোরালো প্রমাণ হয়তো ছিল না।
খুবই গোলমেলে ব্যাপার। একটাই মাত্র পথ–এদের চারজনের অতীত জীবনের খোঁজখবর চালান। অতীত হাতড়ে বার করা-এদের কেউ কোন অপঘাত মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত কিনা। ডিনার টেবিলে মিঃ শেটান বলেছিলেন মনে আছে মিঃ পোয়ারো।
হ্যাঁ। বলেছিলেন ডাক্তারদের পক্ষে খুন করার সুযোগ সুবিধা বেশি, আবার শিকার করতে গিয়ে ভুল করেও কেউ খুন করতে পারে–দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই কেউ ভাবত না। কিন্তু এসব বলে নিজের বিপদকেই ডেকে এনেছিলেন শেটান।
তবে কেবলমাত্র এসব কথার ওপর ভিত্তি করে চারজনের অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করা–
একজন হয়তো নির্দোষ হতে পারে। শেটানের ভুলও হতে পারে।
একজন নির্দোষ? চিন্তিত হয়ে পড়লেন ব্যাটেল। ব্যাপার দেখছি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে। ধরুন, জানালাম কেউ ছোটবেলায় ঠাকুমাকে সিঁড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খুন করেছে–তাতে কি লাভ হবে আমাদের?
কিছু যে লাভ নেই একথা আপনি বলতে পারবেন না। এক্ষেত্রে খুনি হয়ত তার পুরোন পদ্ধতিকেই কাজে লাগিয়েছে। পোয়ারোর শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
তা অবশ্য ঠিক। হয়ত একইভাবে দ্বিতীয় খুনটা করেনি, কিন্তু কোথাও একটা যোগাযোগ দুটো খুনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
ধরুন মি. শেটানকে কেউই খুন করেনি। তিনি প্ল্যান করে ঐ চারজনকে ডেকে এনে মজা দেখবার জন্য আত্মহত্যা করলেন। হতেও তো পারে।
মিসেস অলিভার বলে উঠলেন–আপনার কল্পনা শক্তি আছে। কিন্তু মি. শেটান আত্মহত্যা করার লোক ছিলেন না। মৃদু হাসলেন পেয়ারো, মিঃ শোন মোটেই ভাল লোক ছিলেন না, এটা মানতেই হবে। মিসেস অলিভার মাথা নাড়লেন।
ঠিক কথা। কিন্তু এ রহস্যের শেষ না দেখে আমি ছাড়ছি না। এর জন্যে বাঘের খাঁচার মধ্যে যেতেও আমি রাজি। পোয়ারোর শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এল, আমি যাবোই।
ব্যাপারটা নিয়ে কাগজে যে বেশি লেখালেখি হয়নি, এটাই বাঁচোয়া, ডাঃ রবার্টস বললেন।
হ্যাঁ, মিঃ শেটান হঠাৎ মারা গেছেন। এটুকুই লেখা হয়েছে। সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। একটু আগেই ব্যাটেল এসেছেন ডাঃ রবার্টসের চেম্বারে। ডাঃ রবার্টসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তার।