প্রত্যেকেই তাদের ঠিকানা দিয়ে বিদায় নেন।
আচ্ছা মিঃ পোয়ারো, আপনি তখন থেকে ওই স্কোরশীটগুলোতে কি দেখছেন? ব্যাটেল পোয়ারোর দিকে তাকালেন। তখন দেখলাম মিসেস লরিমারকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন স্কোরটা কার লেখা?
দেখছিলাম এদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্যগুলো। প্রথমটা দেখুন, স্কোর লেখেন মিস মেরিডিথ। প্রথম রাবারে মিসেস লরিমারের পার্টনার ছিলেন মেরিডিথ। ভালো তাস তুলেছিলেন মিসেস লরিমার, তাই জিত তাদেরই হয়েছে। কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি, তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে খেলা। ক্ষুদে ক্ষুদে অথচ স্পষ্ট অক্ষরে লেখা, যোগবিয়োগগুলো খুব সতর্কভাবে করা হয়েছে।
দ্বিতীয়টা কার?
মেজর ডেসপার্ডের লেখা,–খেলা অবশ্য ঠিক কিরকম হয়েছিল বোঝা যাচ্ছে না তবুও এ থেকে মেজর ডেসপার্ডের চরিত্রের একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে ভদ্রলোক একনজরে নিজের চারপাশ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকতে চান, ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষরগুলোও একটা বৈশিষ্ট্য আছে।
আর তৃতীয়টা বোধহয় মিসেস লরিমারের!
হ্যাঁ, তিনি তখন ডাক্তার রবার্টসের পার্টনার। খেলাটা বেশ জমেছিল। বোঝা যাচ্ছে, দুদিকের লম্বা যোগবিয়োগের সারি। মিসেস লরিমারের হাতের লেখারও একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সুন্দর দৃঢ়।
এই অসমাপ্ত স্কোরশীটটা?
এটা ডাক্তার রবার্টসের লেখা। পার্টনার ছিলেন মিসেস মেরিডিথ একটু ভীতু স্বভাবের, কম কম ডাক দেন। খেলাটাও খুব একটা জমেনি। রবার্টসের হাতের লেখা সুন্দর না হলেও পড়া যায়। সমস্ত স্কোরটায় কেমন একঘেয়ে একটা ভাব রয়েছে।
কিছু বুঝতে পারলেন এর থেকে?
একটা ধোঁয়াটে ছায়া, বিশেষ কিছু না।
সম্ভাবনার দিক থেকে দেখতে গেলে, আমার যা মনে হয়, প্রথম সন্দেহ হবে ডাঃ রবার্টসের ওপর। ভদ্রলোক ডাক্তার, বুকের ঠিক কোথায় ছোরা বসালে সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত মৃত্যু, খুব ভালভাবেই তা জানেন। অবশ্য এছাড়া আর কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। তারপর, আসছেন মেজর ডেসপার্ড। বিপজ্জনক জীবনযাত্রায় অভ্যস্থ। নার্ভ খুব শক্ত, চটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। একেও সন্দেহ হয়। অবশ্য মেয়েদের সন্দেহ না করার কোন কারণ নেই।
মিসেস লরিমারকেই ধরুন না, বেশ শক্ত নার্ভের মহিলা, তার হাবভাব। দেখলে বোঝা যায় কোন মানসিক অশান্তি আছে, গোপন রহস্যও থাকতে পারে। আবার অন্যদিক থেকে ভাবতে গেলে তিনি খুন করতেই পারেন না। একজন আদর্শবাদী হেডমিস্ট্রেসের মতই মনে হয় তাকে। সুতরাং কারো বুকে ছোরা বসাচ্ছেন ভাবাও যায় না। বাকি থাকল মিস মেরিডিথ, সুন্দরী তরুনী, একটু লাজুক লাজুক ভাব, ভীতু। তার সম্বন্ধে কিছুই আমরা জানি না–
কিন্তু মি. শেটানের বিশ্বাস ছিল মেয়েটি কাউকে খুন করেছে। পোয়ারো শান্ত কণ্ঠস্বরে বললেন।
আমার বিশ্বাস ঐ মেয়েটাই খুনী। ভাগ্যিস এটা কোন গল্প নয়। পাঠকেরা আবার সুন্দরী মেয়েদের খুনী বানালে অসন্তুষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আমার স্থির বিশ্বাস হয় ঐ ডাক্তার নয় ঐ মিস মেরিডিথ। কোন সন্দেহ নেই। মিসেস অলিভার মতামত দেন।
এদের চারজনের একজন তো খুনী নিশ্চয়ই, কিন্তু সেটা কে? ব্যাটেল চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
এতক্ষণ ধরে যে কথাগুলো বললাম তার তো কোন মূল্যই দিচ্ছেন না আপনারা। মি. পোয়ারো আপনি কি বলেন? মিসেস অলিভার তাকালেন পোয়ারোর দিকে।
আমি? আমি এইমাত্র একটা নতুন সূত্র আবিষ্কার করলাম।
নিশ্চয়ই আপনার ঐ স্কোরশিটটা থেকে, কি যে অত দেখছেন–
ঠিকই ধরেছেন, মিস মেরিডিথের স্কোরশিট থেকে। স্কোরশিটের পেছনে হারজিতের হিসেব করেছেন মিস মেরিডিথ।
এর থেকে কি প্রমাণ হয়?
প্রমাণ কিছুই নয়, একটা বৈশিষ্ট্য বোঝা যাচ্ছে, মিস মেরিডিথ গরিব ঘরের মেয়ে অথবা বেশ হিসেবী।
সাজপোষাকের ঘটা দেখলে তো মনে হয় না সেকথা। মিসেস অলিভার বললেন।
আমরা কিন্তু মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি। কর্নেল রেস একটু অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন। এর চাইতে সন্দেহজনকদের অতীত সম্বন্ধে খোঁজখবর করলে লাভ হত।
ব্যাটেল মৃদু হাসলেন, নিশ্চয়ই, সে বিষয়ে তো খোঁজখবর করা হবে–আমরাই করব, তবে আপনারও সাহায্য চাই–ডেসপার্ডের ব্যাপারে খবর দরকার।
আমার মাথায় একটা দারুণ মতলব এসেছে। মিসেস অলিভার খুব উৎসাহের সঙ্গে বলতে লাগলেন এখানে আমরা চারজন উপস্থিত আছি। সবাই গোয়েন্দা বিভাগের কাজকর্মের সঙ্গে পরিচিত। আর ওঁরাও সংখ্যায় চারজন। আমরা প্রত্যেকেই যদি এক একজনের ওপর নজর রাখি কেমন হয়? ধরুন কর্নেল রেস, খবরাখবর নিলেন মেজর ডেসপার্ডের। সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল নেবেন ডাক্তার রবার্টসের। মিসেস লরিমারের খোঁজখবর নিলেন মঁসিয়ে পোয়ারো। আমি না হয় মেরিডিথকে দেখবো। আমরা আমাদের নিজেদের পদ্ধতিতেই কাজ চালাব।
ব্যাটেল মাথা নাড়লেন, না, তা হয় না। এসব হল সরকারি ব্যাপার, আইনের প্রশ্ন থেকে যায়। আমার ওপর এখন দায়িত্ব দেওয়া আছে তদন্ত চালাতে হবে আমাকেই। তাছাড়া কর্নেল রেস হয়ত ডেসপার্ডকে খুনী মনে করেন না। পোয়ারো হয়ত মনে করেন মিসেস লরিমার নির্দোষ। এ নিয়ে একটা মিথ্যে গোলমালের সৃষ্টি করার দরকার কি?
হয় না, তাই না, কিন্তু প্ল্যানটা অলিভার হতাশ হয়ে পড়লেন, আচ্ছা আমি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোন অনুসন্ধান চালাই আপনার আপত্তি আছে?
না। আপনি পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন, আপনার কৌতূহল মেটাতে যেভাবে খুশি অনুসন্ধান চালাতে পারেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমার আপত্তির কি আছে? তবে এইসব খুনের মামলায় মাথা না ঘামানোই ভাল।