এবার মিঃ শেটানের কথাটা চিন্তা করুন। ডাঃ রবার্টস হঠাৎ বুঝতে পারলেন যে খুব তাড়াতাড়ি শেটানের মুখ চিরকালের জন্য বন্ধ করতে না পারলে, তার সমস্ত কুকীর্তির কথা জানাজানি হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি নিলেন। আমরা ব্রীজ টেবিলের ডাঃ রবার্টসকে জানি তিনি ঝুঁকি নিয়েও দক্ষভাবে খেলেন। এক্ষেত্রেও তিনি সম্পূর্ণ কাজটা হাসিল করলেন।
আমি মনে মনে প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠেছি ডাঃ রবার্টসই খুনি, ঠিক তখনই মিসেস লরিমার আমাকে জানালেন খুনটা তিনিই করেছেন। প্রথমে আমি প্রায় তার কথা বিশ্বাসই করে বসেছিলাম, কিন্তু একটু পরেই আমার মনে হল–না, তিনি এ-কাজ কিছুতেই করতে পারেন না।
কিন্তু ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায় যখন মিসেস লরিমার বললেন, যে অ্যানা মেরিডিথকে তিনি এই খুনটা করতে দেখেছেন। পরের দিন মিসেস লরিমারের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারলাম, তিনি যা বলেছেন তাও সত্যি, আবার আমার ধারণাও সত্যি।
আসলে ব্যাপারটা ছিল এই–অ্যানা মেরিডিথ জমি থাকাকালীন ঘুরতে ঘুরতে শেটানের কাছে চলে যায়। শেটান যে মারা গেছেন এটা সে সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে। কিন্তু মেরিডিথের নজরে পড়ে শেটানের বুক পকেটের দিকে, কিছু একটা চকচক করতে দেখে সে হাত বাড়ায়, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চকচকে জিনিসটা কি সে বুঝে যায়।
ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় সে। ডিনার টেবিলে শেটানের মন্তব্য মনে ছিল তার। হয়ত শেটান কোন কাগজপত্রে এই ঘটনা সম্বন্ধে লিখে রেখে যেতে পারেন। তাতে, প্রমাণ হবে সেই শেটানকে খুন করেছে এবং সকলেই ভাববে এতে মেরিডিথের কোন উদ্দেশ্য ছিল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ব্রীজ টেবিলে ফিরে এল সে।
তাহলে মিসেস লরিমার যা দেখেছেন তাও ঠিক। আবার আমার ধারণাও ঠিক তিনি খুনীকে দেখেননি।
ডাক্তার রবার্টস যদি এই খুনের পর চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন তবে হয়ত তাকে কোনভাবেই ধরা যেত না। অবশ্য এতো সহজে হাল ছাড়তাম না আমি।
যাই হোক শেটানকে খুন করে বেশ অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন রবার্টস। তিনি জানতেন যে ব্যাটেল যত দিন না এই খুনের কিনারা হয় ততদিন তার পেছনে লেগে থাকবেন। আর এইভাবে পুলিশের খোঁজখবর করার ফলে তার আগেকার অপরাধের কথা হয়ত প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। এর থেকে বাঁচতে তিনি একটা চমৎকার উপায় বের করলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মিসেস লরিমার আর বেশিদিন বাঁচবেন না। রোগের জ্বালাযন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পেতে তাঁর পক্ষে আত্মহত্যা করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর আত্মহত্যার আগে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
সেই কারণেই ডাক্তার রবার্টস কোনভাবে মিসেস লরিমারের হাতের লেখা যোগাড় করে সেই লেখার নকলে তিনটে চিঠি লিখলেন, তারপর কাক পক্ষী জাগার আগে সেই চিঠির ছুতো করে ছুটলেন মিসেস লরিমারের বাড়িতে। তার আগে নিজের বাড়ির পরিচারিকাকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে যান। পুলিশের সার্জন এসে পৌঁছনোর আগে নিজের কাজ হাসিল করবার সময় তিনি পেয়েছিলেন এবং সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন। ছককাটা প্ল্যান। একেবারে নিখুঁত।
রবার্টসের তখন একমাত্র লক্ষ্য নিজের নিরাপত্তা আর মিসেস লরিমারের মৃত্যু। তাই আমি যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে মিসেস লরিমারের হাতের লেখা তার পরিচিত কিনা–তখন তিনি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন, সত্যিই যদি কোন সময় এই নকলের ব্যাপারটা ধরা পড়ে। তিনি মিসেস লরিমারের হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত নন এই অজুহাতই তাকে রক্ষা করল। সেইজন্য আমার প্রশ্নের জবাব তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দিলেও খুব একটা তৎপরতার সঙ্গে দিতে পারেন নি।
উইলিংফোর্ড থেকে আমার ফোন পেয়ে মিসেস অলিভার আমার বাড়িতে রবার্টসকে নিয়ে এলেন। ডাক্তার রবার্টস সব ঝামেলা মিটে গেছে ভেবে যখন মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত। এরকুল পোয়ারো বিদ্যুৎ গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শিকারের ওপর। ডাক্তার রবার্টসও আর কোন নতুন খেলা দেখানোর আগেই অসহায়ভাবে ধরা দিলেন।
কিছুক্ষণ কারোর মুখে কোন কথা নেই। সকলেই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। একসময় রোডার কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ভাগ্যিস জানালা দিয়ে ঐ উইণ্ডোক্লীনার্স লোকটা ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছিল। তা না হলে ডাক্তার রবার্টসের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই খাড়া করা যেত না।
না, না ম্যাডাম। এতে ভাগ্যের কোন হাত নেই। পোয়ারো হেসে উঠলেন, লোকটা আদৌ কোন উইণ্ডো-ক্লীনার্স নয়। এখানে উদীয়মান অভিনেতা মিঃ জেরাল্ড হেমিংওয়ে। এসো এসো এদিকে চলে এসো বন্ধু। পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে উইণ্ডো ক্লীনার্সকে নিয়ে এলেন। তখন সেই ভদ্রলোককে এখানে অন্যরকম মনে হচ্ছে।
বন্ধু তুমি তোমার ভূমিকা চমৎকার অভিনয় করেছ, সত্যিই চমৎকার। তারিফ করলেন পোয়ারো।
তাহলে! রোডা চেঁচিয়ে উঠল, রবাটর্সকে কেউই দেখেনি, গোটা ব্যাপারটা দারুণ ভাঁওতা।
আমি দেখেছিলাম ম্যাডাম। পোয়ারোর রহস্যময় গম্ভীর কণ্ঠস্বর বাতাসে ভেসে বেড়ালো, আমি দেখেছিলাম। কিভাবে জানেন? মৃদু হাসলেন পোয়ারো মনের চোখ দিয়ে।