এতেই আমাদের চলে যাবে। ব্যাটেল মন্তব্য করলেন শেটানের মৃত্যুর ব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার হবে না। অবশ্য প্রয়োজন হলে মিঃ ক্র্যাক আর মিসেস ক্র্যাডককে খুন করার দায়ে আপনাকে অভিযুক্ত করা যায়।
ক্র্যাডকদের নাম শুনেই ডাঃ রবার্টস হতাশভাবে মুষড়ে পড়লেন। কোন প্রতিবাদ করতে পারলেন না তিনি। হতাশাভাবে এলিয়ে পড়লেন চেয়ারের ওপর।
বেশ, আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন ডাঃ রবার্ট, আর বাধা দেব না, মনে হয় শয়তান শেটানই এ বিষয়ে আপনাদের কোন আভাস দিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম খুব ভালোভাবেই শেটানের মুখটা বন্ধ করতে পেরে
না, শেটান নয়। ব্যাটেল বললেন, সমস্ত কৃতিত্বটাই মঁসিয়ে পোয়ারোর।
ডাক্তার রবার্টসকে সঙ্গে করে দুজন পুলিশ কর্মচারী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তখনই বলেছিলাম, রবার্টস-এর কীর্তি– মিসেস অলিভার বলে উঠলেন।
পোয়ারো গম্ভীরভাবে সোফার ওপর বসে রয়েছেন, ঘরের সকলের উদগ্রীব দৃষ্টি তার দিকে। বলতে শুরু করলেন পোয়ারো।
আমি জীবনভর যতগুলো রহস্যময় মামলার মুখোমুখি হয়েছি বলতে বাধা নেই তার মধ্যে সবথেকে জটিল আর চমকপ্রদ মামলা হল এটা। এগিয়ে যাবার মত কোন সূত্র হাতে নেই, চারজন মাত্র লোক এবং তাদের মধ্যে একজন এই অপকীর্তির নায়ক। কিন্তু কে সে? কোন প্রমাণ-কাগজপত্র এমনকি কোন হাতের ছাপও নেই। শুধু সন্দেহভাজন চারজনই আমাদের সামনে হাজির।
আর একটা মাত্র সূত্র পাওয়া গেছে ব্রীজ খেলার চারটে স্কোরশীট, শুধু হাতে এল এইটা।
আপনাদের হয়ত মনে আছে, আমি প্রথমদিকে এই স্কোরশীটগুলোর উপর বিশেষভাবে নজর দিয়েছিলাম। কারণ এর মধ্যেই ঐ চারজনের মনের গতিবিধির কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে। সত্যিই এর মধ্যে একটা মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেল। দেখলাম রাবারের স্কোরশীটে একদিকে লেখা রয়েছে১৫০০ সংখ্যাটা। বুঝলাম এটা বেশ বড় খেলা মানে গ্রাণ্ডস্ল্যামের খেলা। সেদিন সন্ধ্যের পরিবেশটা কল্পনা করুন, সেই অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে শেটানকে যখন খুন করার কথা ভাবছে কোন একজন তাকে অন্তত দুটো মারাত্মক ঝুঁকি নিতে হবে, প্রথমটা মারা যাবার আগে শেটান চীৎকার করে উঠতে পারেন, দ্বিতীয়ত সেই মুহূর্তে কেউ খুনীকে দেখে ফেলতে পারে।
ভেবে দেখুন, প্রথম ঝুঁকিটায় করার কিছু নেই, ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে, কিন্তু দ্বিতীয়টা? সেটা তা নয়, চেষ্টা করলে কিছু করা যেতে পারে। সাধারণ তাস পড়লে ব্রিজ খেলোয়াড়রা খুব একটা মনোযোগ দেন না, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেন, গল্প করেন নিজেদের মধ্যে। কিন্তু কোন জটিল তাসের খেলা হলে, বিশেষতঃ তা যদি গ্র্যাণ্ডস্ল্যামের খেলা হয় সকলেই খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গ্র্যাণ্ডস্ল্যামের খেলা। তিনজন খেলোয়াড়ই মন দিয়ে তাস খেলছে। একজনের চিন্তা কিভাবে তেরোটা পিটই তোলা যায়। আবার অন্য পক্ষ চেষ্টা করছে কোন সুযোগে একটা পিটও অন্তত ছিনিয়ে নেওয়া যায়। পার্টনার কোন রঙটায় উৎসাহ দেখাচ্ছে, কোনটায় দেখাচ্ছে না, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর রাখতে হয় সবকিছুর ওপর। ভেবে দেখলাম, একমাত্র ডামিই পারে এরকম পরিবেশে খুন করতে। খোঁজ করে জানলাম ডাঃ রবার্টসই ছিলেন এই ডিলটার ডামি। যে কোন দুজন পার্টনারের মধ্যে একজন অন্যজনের তাস নিয়ে খেলতে পারে। অন্যজন হল ডামি। সে ইচ্ছেমত ঘোরাফেরা করতে পারে।
আপনার মনে আছে মামলাটার অপরাধীদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটায় আমি বেশি জোর দিয়েছিলাম। সন্দেহভাজনদের মানসিক গঠন বিচার করে আমার ধারণা হয়েছিল যে একমাত্র মিসেস লরিমারই পারেন কোন প্ল্যানকে সার্থক রূপ দিতে। কিন্তু মুহূর্তের উত্তেজনায় খুন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব। তার সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছিল হয় তিনি শেটানকে খুন করেছেন নয়ত শেটানের খুনী কে তা জানেন। আর বাকি তিনজনের যে কেউই খুন করতে পারেন কিন্তু খুন করতে গেলে এদের প্রত্যেক-এর মনে ভিন্ন মনোভাব কাজ করবে।
এরপর আমি সকলকেই একটাই প্রশ্ন করলাম যে সেদিন ঘরের মধ্যে কি কি জিনিস তাদের চোখে পড়েছে। ডাক্তার রবার্টসের ছুরিটা চোখে পড়ার কথা। কেন না তিনি সবকিছু খুঁটিনাটি নজর দিয়ে দেখেন–ডাক্তারদের এই গুণটা সহজাত। কিন্তু সেদিন ব্রীজ খেলার তাসের সম্বন্ধে কোন কথাই তিনি বলতে পারলেন না। আমি অবশ্য আশাও করিনি, কিন্তু এতটা ভুলে যাবার কি কারণ হতে পারে? তবে কি তিনি তখন অন্য চিন্তায় ব্যস্ত ছিলেন? এদিক থেকেও সন্দেহটা ডাক্তার রবার্টসের ওপরেই পড়েছে।
মিসেস লরিমারের কাছ থেকে একটা মূল্যবান তথ্য পেলাম। ডাক্তার রবার্টস গ্র্যাণ্ডস্ল্যামের ডাক দিয়েছিলেন, খুবই অযৌক্তিকভাবে। এবং তিনি তার পার্টনার মিসেস লরিমারের রঙেই ডাক দেন। ফলে ভদ্রমহিলাকে তাসটা খেলতে হয়। এও একটা পয়েন্ট।
এরপর সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল আর মিসেস অলিভারের চেষ্টায়, সন্দেহভাজন চারজনেরই অতীত সম্পর্কে খোঁজখবর চালান হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, অতীতে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে তারা খুন করেছেন অথবা আদৌ খুন করেননি। বর্তমান ক্ষেত্রেও তারা পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন কি না। কিন্তু সব খোঁজ খবর করেও সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল হতাশ হলেন। কেন না তার ধারণা আগের খুনগুলোর সঙ্গে, অর্থাৎ অতীতে এদের চারজন যেভাবে খুনগুলো করেছে, তার সঙ্গে বর্তমান খুনের কোন মিল নেই। কিন্তু তা নয়। ডাক্তার রবার্টস আগে যে দুটো খুন করেছেন, তার সঙ্গে বর্তমান খুনের কোন মিল হয়ত নেই। কিন্তু এদের চারিত্রিক মিল নিশ্চয়ই আছে। ক্র্যাডকদের খুন করাটার কথা ভেবে দেখা যাক। যেন সকলের সামনে হাসতে হাসতে বুক ফুলিয়ে খুনটা হয়ে গেল। রোগীকে পরীক্ষা করার পর বাথরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ডাক্তারদের রীতি, সেই সুযোগে বাথরুমে একজনের শেভিংব্রাসে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু মাখিয়ে রেখে আসা, কত সহজ ব্যাপার। মিসেস ক্র্যাডককে খুন করা হল টাইফয়েডের প্রতিষেধক ইনজেকসন দেবার সুযোগে। কোন লুকোচুরি নেই, সকলের সামনে দিয়ে হাসতে হাসতে খুনটা হয়ে গেল।