অ্যানা টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে একটা দৈনিক পত্রিকার ক্রশ-ওয়ার্ড পাজলের সমাধান খুঁজছিল। রোডার কথায় কাগজটা মুড়ে রাখল। কি বলছিস বল?
হ্যাঁ, শোন্–ইতস্তত করল রোডা। ভদ্রলোক তো আবার আসছেন।
কার কথা বলছিস? সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল?
হ্যাঁ। আমার কি মনে হয় জানিস, মিসেস বেনসনের ব্যাপারটা তাকে বলে দেওয়াই ভালো।
তুই কি পাগল নাকি? অ্যানার ঠাণ্ডা জবাব ভেসে এল, এখন এ কথা বলতে যাবো কেন?
কারণ–কারণ তিনি ভাবতে পারেন তুই হয়ত ঘটনাটা লুকোতে চাইছিস। অত ঝামেলার কি দরকার? তার থেকে আসল ব্যাপারটা ভদ্রলোককে জানিয়ে দে।
এখন আর তা বলা যায় না।
প্রথমে বললেই ভালো করতিস।
হ্যাঁ। কিন্তু এতদিন বাদে আর এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।
তা অবশ্য ঠিক।
আমি তোর কথার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারছি না রোডা। বিরক্ত হয়ে ওঠে অ্যানা।
সেই ঘটনার সঙ্গে তখনকার ঘটনার কি সম্পর্ক? তা ছাড়া সুপারিনটেন্টে ব্যাটেল চাইছেন আমার স্বভাব-চরিত্রের সম্বন্ধে খোঁজখবর। আমি তো সেখানে ছিলাম মাত্র দু মাস। ঐ দুমাসে তারা আমার কতটুকু পরিচয়ই বা পাবে?
ঠিকই বলেছিস। অমি হয়ত বোকার মতো কথা বলছি। তবুও জানিস কেমন একটা অস্বস্তি রয়েছে। সবকিছু খুলে বলাটাই ভাল। ধর, ব্যাটেল ব্যাপারটা কোনভাবে জানতে পারলেন, তখন তো ভাববেন যে তুই ইচ্ছে করে ব্যাপারটা চেপে গেছিস। অযথা সন্দেহ বাড়বে।
একটা জিনিস কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, বাইরের কেউ এ কথা জানবে কি করে? একমাত্র তুই আর আমিই ব্যাপারটা জানি, আর কেউই জানে না।
না, তা যদিও জানে না– তোতলাতে শুরু করল রোডা।
অ্যানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রোলার দিকে ফিরে তাকাল, রোডার ইতস্তত ভাব আর নজর এড়ায় নি। কেন আর কে জানে বলে তোর মনে হয়?
একটু চুপ করে থেকে রোডা উত্তর দিল, অনেকেই। কোম্বীকারের বাসিন্দারা নিশ্চয়ই অত সহজে ঘটনাটা ভুলবে না।
ওঃ এই কথা! হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অ্যানা। সেখানকার কারো সাথে সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেলের দেখা হবে কি না সন্দেহ। একেবারেই অসম্ভব।
কিন্তু অসম্ভব অনেক কিছুই এ পৃথিবীতে ঘটে থাকে।
রোডা! সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছিস তুই।
খুব দুঃখিত, অ্যানা, তবে কথাটা পুলিশের কানে গেলে তারা ভাববে তুই কিছু লুকিয়েছিস।
তারা জানবে কি ভাবে? কে বলবে এ কথা? তুই আর আমি ছাড়া তো কেউই জানে না। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কথাটা উচ্চারণ করল অ্যানা, কিন্তু তার গলার স্বর পাল্টে গেছে, উচ্চারণের ভঙ্গীটাও অদ্ভুত, কেমন একটা শিরশিরে শিহরণ জাগায়।
রোডা ব্যাজার মুখে বলল, তাহলেও কিন্তু তোর বলা উচিত। অ্যানার দিকে ফিরে তাকাল রোডা। কিন্তু অ্যানা তখন চুপ করে কি যেন ভাবছে। তার দীর্ঘ –জোড়া কুঁচকে মনে মনে যেন কোন কিছু হিসাব কষছে সে।
রোডা হঠাৎ প্রশ্ন করল, গোয়েন্দাপ্রবর ব্যাটেল কখন এখানে পায়ের ধুলো দেবে?
বেলা বারোটায়। অ্যানা জবাব দিল–এখন তো সাড়ে দশটা। চল রোডা নদী থেকে স্নান করে আসি।
কিন্তু মেজর ডেসপার্ড তো এগারোটা নাগাদ এসে পড়বেন, সেই রকমই তো চিঠিতে জানিয়ে দেন তিনি।
তাতে কি? মিসেস অষ্টওয়েলের কাছে একটা চিরকুট লিখে রেখে গেলেই চলবে। সেরকম জরুরী দরকার থাকলে তিনি নদীর ধারেই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
তা অবশ্য ঠিক, চল্ নদী থেকেই ঘুরে আসি
বাগানের পায়ে চলা সরু পথ ধরে নদীর দিকে পা বাড়াল রোডা আর অ্যানা।
দশ মিনিট বাদে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হাজির হলেন মেজর ডেসপার্ড। দু-জনেই বেরিয়ে গেছে শুনে অবাক হয়ে গেলেন, মেঠো পথ ধরে নদীর দিকে রওনা হলেন তিনি।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার কলিংবেলটা বেজে ওঠে ওয়েডেন কুটিরে। পরিচারিকা মিসেস অস্টওয়েল আপনমনে গজগজ করতে করতে দরজা খুলে দিল।
এখানে ছোটখাট চেহারার বিদেশী ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন, তার সঙ্গে একজন বলিষ্ঠ চেহারার ইংরেজ। মিস মেরিডিথ কি বাড়িতে আছেন? লম্বা ভদ্রলোকটি এগিয়ে এলেন।
না, নদীতে স্নান করতে গেছেন।
বিদেশী ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, আর মিসেস দোবাস?
দুজনেই এক সাথে গেছেন।
ধন্যবাদ। ব্যাটেল বললেন, নদীর দিকে যাবার রাস্তাটা কোনদিকে? মিসেস অস্টওয়েলের কাছ থেকে রাস্তাটা জেনে সেদিকে পা বাড়ালেন ব্যাটেল এবং পোয়ারো।
পোয়ারোকে উত্তেজিতভাবে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে দেখে ব্যাটেল কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। কি ব্যাপার মঁসিয়ে পোয়ারো? হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে?
কেন জানি না, খুব অস্বস্তি বোধ করছি।
কোন কিছু আশঙ্কা করছেন নিশ্চয়ই। সকালবেলাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে এখানে চলে এলেন। আবার আপনার কথাতেই আমি কনস্টেবল টার্পারকে এ অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করার নির্দেশ পাঠালাম। মেয়েটা কি সাংঘাতিক কোন কিছু করে বসতে পারে বলে আপনি আশঙ্কা করছেন?
এই পরিস্থিতিতে আর কি আশঙ্কা করব বলুন?
ব্যাটেল মাথা নাড়লেন। তা ঠিক। তবে আমি একটা কথা ভাছি–মেরিডিথ কি জানে যে তার বন্ধু মিসেস অলিভারের কাছে গোপন কথা ফাঁস করে দিয়েছে?
মাথা দোলালেন পোয়ারো। ঠিক তাই। সেই জন্যই তো বলছি তাড়াতাড়ি চলুন।
দুজনেই তাড়াতাড়ি হেঁটে চললেন। নদীতে নৌকা বা স্টীমার নেই। বাঁদিকে বাঁক নিয়ে রাস্তার পাশে স্থির হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন পোয়ারো।