এবার তাহলে শুরু করি– সুপারিনটেন্ডেন্ট ব্যাটেল উঠে পড়লেন।
তাহলে আমরা বাইরে অপেক্ষা করি। কর্নেল রেস উঠে দাঁড়াতেই একটু ইতস্তত করে ব্যাটেল বাধা দিলেন, না, দরকার নেই। আপনারা সকলেই এ ঘরে থাকতে পারেন। কিন্তু কাজের মাঝখানে কেউ বাধা দেবেন না। আর এতক্ষণ যে বিষয়ে আলোচনা করলাম সে সম্বন্ধেও কোন কথা বলবেন না কেউ–ঠিক আছে?
মিসেস অলিভার মাথা নাড়লেন। পাশের ঘর থেকে ডাঃ রবার্টসকে ডেকে পাঠালেন ব্যাটেল।
একটু পরেই ডাঃ রবার্টস ঘরে এসে ঢুকলেন।
সত্যি কি সাংঘাতিক কাণ্ড! আমি তো ভাবতেই পারছি না–মাত্র কয়েক হাত দূরে বসে তিন জন তাস খেলছে। এর মধ্যে খুন করে আসা–বাপরে, আমার অতো সাহস নেই বলুন সুপারিনটেন্ডেন্ট কিভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করব। ডাক্তার রবার্টস ক্ষীণ হাসলেন।
মোটিভ। মোটিভই হল আসল কথা–
তবে তো কোন কথাই নেই। মিঃ শেটানকে আমি ভাল করে চিনি না পর্যন্ত। একটু আধটু পরিচয় আছে। আমি তাকে খুন করতে যাব কেন? অবশ্য আপনারা তদন্ত করবেন নিশ্চয়ই।
হ্যাঁ, আইনমাফিক কাজ তো করতেই হবে। আচ্ছা,.ডাঃ রবার্টস! ও ঘরের বাকি তিনজন সম্বন্ধে আপনার মতামত কি?
দুঃখিত। কিছুই বলতে পারব না। আজই তো আলাপ হল এদের সঙ্গে। একমাত্র মিসেস লরিমারকে আগে থাকতে চিনতাম। অবশ্য মেজর ডেসপার্ডের লেখা ভ্রমণ কাহিনী আগে পড়েছি।
আপনি জানতেন ডেসপার্ড-এর সঙ্গে শেটানের আলাপ আছে?
না। আজই প্রথম মেজর ডেসপার্ডের সঙ্গে পরিচয় হল আমার।
মিসেস লরিমারকে তো চিনতেন আপনি। তাঁর সম্পর্কে কি কিছু জানেন?
তেমন কিছু না। যতটুকু জানি, তিনি একজন বিধবা ভদ্রমহিলা। টাকাকড়ি ভালই আছে। বুদ্ধিমতী এবং ব্রীজ খেলায় এক্সপার্ট। তার সঙ্গে ব্রীজ খেলা উপলক্ষেই এক বন্ধুর বাড়িতে আমার আলাপ।
মিঃ শেটানের কাছে কখনো মিসেস লরিমারের নাম শোনেন নি।
না।
আচ্ছা। খুব ভাল করে ভেবে বলুন ডাক্তার রবার্টস, কবার আপনি খেলার টেবিল ছেড়ে উঠেছিলেন? বাকি তিনজন কবার উঠেছিল?
ডাক্তার রবার্টস কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন।
আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। অন্যদের কথা সঠিক বলতে পারব না। আমারটা বলতে পারি –যতদূর মনে পড়ছে মোট তিনবার উঠেছিলাম। সেই তিনবারই ডামি ছিলাম আমি। প্রথমবার উঠে ফায়ার প্লেসের আগুন উস্কে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার একজন মহিলার জন্য জল আনতে। আর শেষবার আমার নিজের জন্য পানীয় আনতে উঠেছিলাম।
সময়ের একটা আন্দাজ দিন
মোটামুটি সময়টা বলতে পারি। প্রায় সাড়ে-নটার সময় আমরা খেলতে বসি। ঘণ্টাখানেক বাদে আমি ফায়ার প্লেসের কাছে যাই। মিনিট দুই-তিন বাদে জল আনতে উঠি, শেষবার উঠি তখন রাত সাড়ে এগারোটা হবে। ঘড়ি তো দেখিনি, ভুলও হতে পারে।
পানীয়র ট্রে তো মিঃ শেটানের চেয়ারের পাশের টেবিলে ছিল।
হ্যাঁ। মোট তিনবারই আমি তার চেয়ারের পাশ দিয়ে গেছি।
প্রত্যেকবারই কি তাকে আপনার ঘুমন্ত মনে হয়েছিল?
প্রথমবার সেইরকমই মনে হয়েছিল। দ্বিতীয়বার তাসের কথা ভাবছিলাম ততটা খেয়াল করিনি। শেষবার তার পাশ দিয়ে যাবার সময় ভাবলাম ভদ্রলোক এত ঘুমুতেও পারেন। কোনবারই খুব একটা লক্ষ্য করিনি।
অন্যান্যরা কবার উঠেছিলেন? একটু চিন্তা করুন
বেশ কঠিন প্রশ্ন- খানিকক্ষণ চিন্তা করলেন ডাক্তার রবার্টস।মেজর ডেসপার্ডকে দুবার উঠতে দেখেছিলাম, মনে পড়ছে। একবার বোধহয় অ্যাসট্রে আনতে আর দ্বিতীয়বার পানীয় জল আনতে গিয়েছিলেন।
আর মহিলারা? ব্যাটেল প্রশ্ন করলেন।
মিসেস লরিমার একবার ফায়ারপ্লেসের কাছে বোধহয় আগুনটা উস্কাতে গিয়েছিলেন, কি যেন কথাও বললেন শেটানের সঙ্গে। আর মিস মেরিডিথ যখন আমার পার্টনার ছিলেন তখন একবার উঠেছিলেন তাস দেখতে। প্রথমটায় আমার তাস উঁকি মেরে দেখলেন। তারপর অন্যদের তাস দেখবার পর বোধহয় পায়চারী করছিলেন ঘরের মধ্যে। আসলে তখন তাস নিয়ে এত ব্যস্ত ওদিকে মাথা ঘামাতে পারিনি।
ব্যাটেল একটু চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, তাস খেলার সময় আপনাদের কেউ কি ফায়ারপ্লেসের দিকে মুখ করে বসেছিলেন?
না, সবার চেয়ারই একটু কোনাকুনিভাবে ঘোরানো ছিল। তাছাড়া মাঝখানে একটা মেহগনী কাঠের আলমারী থাকায় আড়াল পড়ে যায়। খুন একটা কঠিন হয় নি। কারণ খেলাটা যখন ব্রীজ তখন সকলের মনোযোগ ওইদিকেই থাকতে বাধ্য, একমাত্র ডামিই খুনটা করতে পারে–
ডামিই খুন করেছে কোন সন্দেহ নেই। যেই খুন করুক, মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছে। অন্যদের দিকে একঝলক তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ব্যাটেল, ডাঃ রবার্টস, এই তিনজনের মধ্যে আপনার কাকে খুনী বলে সন্দেহ হয়?
আমার মতামত চাইছেন? একটু থতমত খেয়ে যান ডাঃ রবার্টস, দেখুন আমার তো মনে হয় খুনী মেজর ডেসপার্ড। আজীবন বিপজ্জনক পরিবেশে কাটানোয় ভদ্রলোকের নার্ভ বেশ স্ট্রং, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেও পারেন। এরকম ঝুঁকি নেওয়া তার পক্ষেই সম্ভব। মেয়েদের এরকম খুন করার দৈহিক বা মানসিক শক্তি কোনটাই নেই।
নাঃ, এ ব্যাপারে বিশেষ গায়ের জোর লাগেনি, দেখুন না এটা একটা পাতলা লম্বা ছোরা বের করে ধরলেন ব্যাটেল। যেটার হাতলে চুনিপান্না বসানো। ফলাটা আলোয় ঝকঝক করে উঠল।
আলগাভাবে ছোরার ডগায় একবার হাত ঠেকালেন ডাঃ রবার্টস, কি সাংঘাতিক! একটু ঠেকালেই একেবারে মাখনের মত ঢুকে যাবে বুকে। খুনী এটা তাহলে সঙ্গে করেই। নিয়ে এসেছিল, কি বলেন?